শনিবার, ২৫ মে ২০২৪, ০৪:২৮ পূর্বাহ্ন

ফুলেফেঁপে উঠেছে ভুয়া লাইসেন্স জালিয়াতচক্র

ফুলেফেঁপে উঠেছে ভুয়া লাইসেন্স জালিয়াতচক্র

স্বদেশ ডেস্ক:

ভুয়া পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ বিভিন্ন জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কোনো রকম পরীক্ষা ছাড়াই ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করছিল একটি দালালচক্র। এ জন্য মিরপুরের মাজার রোডে খোলা হয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কথিত অফিস। চক্রের সঙ্গে যোগসাজশ ছিল বিআরটিএর অসাধু কর্মকর্তাদেরও। আর নেপথ্যে কাজ করে দেশের ১৪২টি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ স্কুলের লোকজন।

রাজধানীর দারুসসালাম ও দিয়াবাড়ি বিআরটিএ কার্যালয় এলাকায় গত সোম ও মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ। ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে গতকাল বুধবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) একেএম হাফিজ আক্তার।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. লিটন পাইক, সুজন পাইক, হাসান শেখ ওরফে আকচান, মোহাম্মদ আলী ওরফে মিস্টার, আব্দুল খালেক, আব্দুল্লাহ রনি, সোহেল রানা, সোহাগ, নূর নবী ও হুমায়ুন কবির। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৫৯টি ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন জব্দ করা হয়। এতে তুরাগের বিআরটিএ কার্যালয়ের চার কর্মকর্তার সই ও সিল রয়েছে। এ ছাড়া ডোপ টেস্টের ১৫টি আবেদন, কম্পিউটারের মনিটর, সিপিইউ, কি-বোর্ড, কালার প্রিন্টার, বিভিন্ন ধরনের সিল ও মুঠোফোন জব্দ করা হয়। ডিবির এক কর্মকর্তা গত মঙ্গলবার বাদী হয়ে এই ১০ দালালের বিরুদ্ধে দারুসসালাম থানায় জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলা করেছেন।

ডিবিপ্রধান হাফিজ আক্তার জানান, সারাদেশে ১৪২টি ড্রাইভিং স্কুল আছে। এদের অধিকাংশই এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত। নিয়মকে অনিয়মে পরিণত করে এই দালালচক্র। বিআরটিএর কিছু অসাধু কর্মকতার সঙ্গে যোগসাজশ করে কোনো ধরনের ট্রেনিং ছাড়াই অদক্ষদের ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করে দেয়। এর ফলে লাইসেন্স পাচ্ছে অদক্ষ ড্রাইভার, দিন দিন বাড়ছে দুর্ঘটনা। আসামিদের কাছ থেকে জব্দ করা ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফাইলের পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রতিবেদনের বিপি নম্বর দেখে বোঝা গেছে, বাংলাদেশ পুলিশের বিপি নম্বরের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই।

হাফিজ আক্তার আরও জানান, ডিবি লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার হাসান আরাফাত ও সহকারী কমিশনার মধুসূদন দাসের কাছে একটি গোপন খবর আসে। তারা জানতে পারেন, মিরপুর মাজার রোডে মুন্সী লাল মিয়া ওয়াক্?ফ এস্টেটের দ্বিতীয় তলায় বিআরটিএর ভুয়া অফিস খুলে বসেছেন লিটন পাইক। ওই তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে লিটন পাইক ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে লিটনের বাকি ছয় সহযোগীকেও আটক করা হয়।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার জানান, লিটন পাইক ভুয়া বিআরটিএ অফিস খুলে মোটরসাইকেল, হালকা, মিডিয়াম ও ভারী যানের প্রতিটি ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা নিতেন। ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসা ব্যক্তিরা লিটনের এ অফিসকে বিআরটিএ অফিস বলেই জানতেন। তা ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে আবেদনকারীকে পুলিশের ভেরিফিকেশন রিপোর্ট ও ডোপ টেস্টের সনদ দিতে হয়। লিটনের নেতৃত্বে দালালরা জাল ভেরিফিকেশন রিপোর্ট ও ডোপ টেস্টের জাল সনদ তৈরির আবেদনপত্র দিয়াবাড়ি বিআরটিএ কার্যালয়ে তাদের কমিশনভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে জমা দিতেন। ওই সনদে পুলিশ কর্মকর্তার যে বিপি নম্বর উল্লেখ করা হয়, তা ভুয়া। এসব জেনেশুনেও দিয়াবাড়ি কার্যালয়ের বিআরটিএর একশ্রেণির কর্মকর্তা এ আবেদন গ্রহণ করতেন। তারা টাকার বিনিময়ে আবেদনকারীকে লিখিত, মৌখিক ও মাঠে যান চালানোর পরীক্ষায় পাস করিয়ে দিতেন।

চক্রের সদস্যরা মূলত পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্টগুলো অল্প সময়ে করে দেওয়ার জন্য বিআরটিএ, ঢাকা মেট্রো সার্কেল ০৩-এর কিছু কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে আবেদন ফাইলগুলো অফিসের বাইরে নিয়ে আসে। এর পর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশ্বাস সৃষ্টি করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সিলমোহরযুক্ত স্বাক্ষরিত পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট তৈরি করে গ্রাহকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স বানিয়ে দেয়।

জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা আরও জানায়, চক্রের সদস্যরা দিয়াবাড়ি বিআরটিএ অফিস ও এর আশপাশ এলাকায় থাকে। তবে চক্রের সঙ্গে বিআরটিএর কারা কারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। চক্রের পলাতক আসামিদেরও গ্রেপ্তার অভিযান চলছে বলে জানান হাফিজ আক্তার।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবি লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার রাজীব আল মাসুদ বলেন, ‘বিআরটিএর কর্মকর্তারা জেনেশুনে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে অবৈধ কাগজপত্র জমা নিতেন। তারা প্রত্যেকের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা নিয়ে মাঠে যান চালানোর পরীক্ষায় পাস করিয়ে দিতেন। এরপর এক মাসের মধ্যেই বিআরটিএর সেই কর্মকর্তারা ড্রাইভিং লাইসেন্স করে দিতেন। চক্রের সদস্যরা এ নিয়ে জালিয়াতি করা কাগজ বানিয়ে বিআরটিএ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়েছেন। অবৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স বাণিজ্যের সঙ্গে তুরাগের বিআরটিএর যে কয়েক কর্মকর্তার জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে, তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877