শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৮ অপরাহ্ন

১০ মাস পর জানা গেল হবু বউয়ের প্রেমিকই হত্যা করেন শাহদাতকে!

১০ মাস পর জানা গেল হবু বউয়ের প্রেমিকই হত্যা করেন শাহদাতকে!

স্বদেশ ডেস্ক;

২০২১ সালের ১ আগস্ট ঢাকার ধামরাইয়ের আমরাইল গ্রামের শাহাদাত নামক এক যুবক কর্মস্থল গিয়ে নিখোঁজ হয়। এরপর গত ৪ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ির সঙ্গে সে কোনো যোগাযোগ করেনি। গত ৬ আগস্ট পর্যন্ত তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। অবশেষে সন্তানের খোঁজ মিলতে গত ৮ আগস্ট কালিয়াকৈর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে তার পরিবার।

অতঃপর গত ১২ আগস্ট ধামরাইয়ের আমরাইল গ্রামের একটি কাঠবাগান থেকে নিখোঁজ শাহাদাত এর অর্ধগলিত ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ঢাকার ধামরাই থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়।

পরবর্তী সময়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর ভিকটিম শাহাদাত এর মা বাদী হয়ে ধামরাই থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে সেই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ধামরাই থানা পুলিশ গত ৩০ সেপ্টেম্বর শাহাদাতের বন্ধু জাহিদকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু জাহিদ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান না করায় রিমান্ড শেষে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।

ঘটনার ১০ বাস পর চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত ক্লুলেস শাহাদাত হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনপূর্বক হত্যার মূলহোতা ও পরিকল্পনাকারী জাহিদসহ তিনজনকে ঢাকার ধামরাই ও আশুলিয়া থানার আমরাইল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তারা হলেন-মো. জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাহিদ (২২), আবু তাহের (২৪) ও (৩) সবুজ হোসেন (২৮)।

যে কারণে হত্যা

র‍্যাব সূত্রে জানা যায়, নিহত শাহাদাত ধামরাইয়ের যাদবপুর ইউনিয়নের আমরাইল গ্রামের কোহিনুর ইসলামের ছেলে। তিনি কালিয়াকৈর উপজেলার বারইপাড়ায় একটি প্রতিষ্ঠিত কারখানার কর্মচারী ছিলেন।

গত ১৪ আগস্ট গ্রেপ্তারকৃত জাহিদের প্রেমিকার সঙ্গে শাহাদাতের বিবাহের দিন ধার্য ছিল। নিজের প্রেমিকার অন্যত্র বিয়ে জাহিদ মেনে নিতে না পারার জের ধরে গ্রেপ্তারকৃত অন্যান্য সহযোগীদের সঙ্গে পরিকল্পনা করে শাহাদাতকে হত্যার নকশা আঁকে জাহিদ।

নিহত শাহদাত ও গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা সকলেই ধামরাই থানার মাদবপুর ইউনিয়নের আমরাইল গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা এবং তাদের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। এ সর্ম্পকের কারণে তাদের মধ্যে সচারচর সাক্ষাৎ হতো এবং তারা একত্রিত হয়ে ভাড়া বাসা ও নিজ এলাকায় জুয়ার আসর বসাতো।

যেভাবে হত্যা

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে জানায়, গত ৩ আগস্ট শাহাদাত চন্দ্রা থেকে গাজীপুর জেলার কাশিমপুর নিকটবর্তী মাটির মসজিদ এলাকায় ডেকে নিয়ে আসে। একপর্যায়ে আসামিরা তাকে ফুসলিয়ে জুয়া খেলতে ধামরাইয়ের আমরাইল এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে ভুক্তভোগীকে ফুসলিয়ে দুদিন অবস্থান করায়।

পরবর্তী সময়ে ৬ আগস্ট সন্ধ্যার সময় সবাই একত্রে ভুক্তভোগীকে নিয়ে ধামরাইয়ের আমরাইল এলাকায় ভাড়া বাসায় আসে। সেখান থেকে আশুলিয়া থানা এলাকার একটি ফাঁকা নির্জন এলাকায় নিয়ে শাহাদাতের হাত-পা বেঁধে ফেলে। প্রথমে জাহিদ ভুক্তভোগীকে চড়-থাপ্পড় মারে এবং গোপনাঙ্গে ৪-৫টি লাথি মারে। এ সময় তাহের ভুক্তভোগীর মাথা চেপে ধরে বসে ছিল এবং অন্যান্যরা হাত-পা ধরে ছিল।

পরবর্তী সময়ে তাদের সঙ্গে থাকা লাঠি দিয়ে ভিকটিমের মাথায় আঘাত করে তার মৃত্যু সুনিশ্চিত করে। তারপর গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা শাহাদাতের লাশ ভ্যানচালক সবুজের ভ্যানে করে ধামরাই থানাধীন আমরাইল পুকুরিয়া সাকিনস্থ মনুমিয়ার কাঠবাগানের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে গাছের একটি ডালে কাঁচা পাট দিয়ে ফাঁস তৈরি করে ঝুলিয়ে রাখে যাতে করে এলাকার লোকজন জানতে পারে এটি একটি স্বাভাবিক আত্মহত্যা। অতঃপর তারা দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করে তাদের পূর্বের ভাড়া বাসা চক্রবর্তী মাটির মসজিদ এলাকায় চলে যায়।

উল্লেখ্য, ওই সময়ে প্রবল বর্ষণের কারণে আশেপাশের লোকজনের উপস্থিতি খুব কম ছিল বলে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়। ঘটনার পর তারা নিজ নিজ এলাকায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে থাকে।

এ বিষয়ে র‍্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং-এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানায়, র‌্যাব-৪ এর ছায়া তদন্তে চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস শাহাদাৎ হত্যার রহস্য উদঘাটন এবং পরিকল্পনাকারীসহ জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877