শাহদাব আকবর: পদ্মা সেতু নিয়ে গুজব সৃষ্টি, মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে ১৯ জনকে গণপিটুনিতে হত্যা, প্রিয়া সাহার বক্তব্য নীলাকাশের মতো পরিষ্কার। এই রহস্য উন্মোচনে যতই গভীরে যাই উত্তর একটিই, তা হলো বরাবরের মতো আওয়ামী লীগ তথা দেশরতœ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির নতুন করে কোনো নীলনকশা বাস্তবায়নের প্রয়াস। রাজনীতির আকাশে কালো মেঘ উড়ছে শকুন, চার দিকে হায়েনার লোলুপ দৃষ্টি খুনি মোশতাকের প্রেতাত্মার আনাগোনা। চুন দেখলেই ভয় হয়। সহজভাবে দেখার কোনো অবকাশ নেই। ঘরের বাহিরে সকল শত্রুপক্ষ ঐক্যবদ্ধ। তাদের অভিন্ন ও একমাত্র লক্ষ্য শেখ হাসিনার পতন ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির উত্থান ঘটানো। একটি শ্রেণির দীর্ঘ সময় মসনদে না থাকার কারণে, ব্যক্তিস্বার্থনির্ভর রাজনীতি, অন্তর্দ্বন্দ্ব, হিংসার আগুন এবং সর্বোপরি আদর্শের বিচ্যুতি ঘটছে। সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে এখনই সজাগ দৃষ্টি ও লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ হলে এর দায়ভার বইতে হবে সমগ্র বাঙালি জাতিকে। প্রশ্ন জাগছে, সরকারকে-এ নামতে কেন ১৯ জনকে গণপিটুনিতে হত্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো। এটা কি দক্ষতার অভাবনাকি কোথাও গলদ আছে? পরিকল্পিতভাবে জনগণকে খেপিয়ে সরকারের মুখামুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে? পক্ষান্তরে সরকারি দলের ভেতর সবকিছুতে গা-ছাড়া ভাব তৃণমূল থেকে সব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি গঠনে দীর্ঘসূত্রতা, উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়নে মাঠ পর্যায়ের সঠিক চিত্র প্রতিফলিত না হওয়া এবং অধিকাংশ দলীয় কার্যক্রম শুধু দলীয় অফিস, বক্তৃতা-বিবৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। মধ্য ও উচ্চ-মধ্যম সারির অনেক নেতা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন বলে মনে হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে সামনে কঠিন সময় আসতে পারে।
একটি বিপজ্জনক রাজনীতির উদাহরণ দিচ্ছি। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের একটি অফিস, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুড় অপরাধে মামলার আসামিদের জামিন না নিয়ে মেজিস্ট্রেট জেলহাজতে প্রেরণ করেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আসামিপক্ষের উকিল হয়ে পরবর্তী সময়ে জামিনের জন্য আবেদন করলে জামিন আবেদন মঞ্জুর করা হয়। রাজনীতির এই ধারা কোন পর্যায়ে গিয়েছে এটি তার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। গত উপজেলা নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। এর অর্থ হচ্ছে, যেই রিপোর্টের (সরকারি এজেন্সি এবং দলীয় সূত্র) ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত হয়েছে তাতে মাঠ পর্যায়ের সঠিক চিত্র উঠে আসে নাই। এই রিপোর্ট তৈরিতে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন তাদের চরম উদাসীনতা, নোংরা রাজনীতি ও ব্যর্থতা প্রকাশ পেয়েছে। এমন অনেক নৌকার প্রতীকপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন, এলাকায় তাদের কোনো অস্তিত্বই নেই। ফলে নৌকা প্রতীক পরাজিত হয়েছে। এর জন্য কে দায়ী? গভীরতায় যাওয়া প্রয়োজন। আরেকটি উপজেলার কথা বলব। ব্যালটের মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচন করে জেলার অনুমোদন নিয়ে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। অথচ সেই প্রার্থীকে মনোনয়নই দেওয়া হয়নি। আমি বিশ্বাস করি, দলের হাইকমান্ড এ বিষয়ে অবহিত থাকলে কোনোদিন এই ধরনের অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হতো না। স্মরণ রাখতে হবে, খুনি মোশতাক আওয়ামী লীগেরই নেতা ছিলেন। দলে নতুন করে কোনো মোশতাকের সৃষ্টি যেন না হয়। সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
একটি ব্যাপার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনের সময় একটি বারের জন্যও বিদ্রোহী প্রার্থীদের সতর্ক করা হয়নি। বরং বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় দলীয় সাধারণ সম্পাদককে উদ্ধৃত করে সংবাদ পরিবেশ করা হয়েছে যে, কোথাও বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচিত হলে ধরে নেওয়া হবে দলীয় সিদ্ধান্ত ভুল ছিল এবং বিদ্রোহী নির্বাচিত প্রার্থীদের স্বাগত জানানো হবে। দলের পক্ষ থেকে এইসব সংবাদের কোনো প্রতিবাদ করা হয়নি। প্রতিবাদ করাটা ছিল অতি জরুরি। এই দল স্বাধীনতা দিয়েছে, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে জাতিকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে নিয়েছে। এই দেশ শিগগিরই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে। এই বৃহৎ দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা চান না, দলীয় হাইকমান্ড থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের ব্যর্থতার কারণে এত বিদ্রোহী চেয়ারম্যানের সৃষ্টি। তবেই দলে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। মাথার পরে কাঁধ, ভূত এখন কাঁধেই সওয়ার, এই ভূত না ঝেড়ে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কর্তনের উদ্যোগ নিলে ক্ষতি দলেরই হবে, দল হবে অঙ্গহীন। নেতাকর্মীরা চান না, ’৭৫-পরবর্তী সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোতে ফিরে যেতে। দেখতে চান না ২০০১-পরবর্তী দলীয় কর্মীদের ওপর নেমে আসা তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে নেতাকর্মীদের ওপর নেমে আসা অত্যাচার। সংগঠন দুর্বল হলে শেখ হাসিনার হাত দুর্বল হবে। আর তার হাত দুর্বল হলে দেশ আবার সেই মধ্যযুগীয় বর্বরতার ফিরে যাবে। আগামী অক্টোবরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল। এই সম্মেলন দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রবীণেরা ধীরে ধীরে আসন ছেড়ে নবীনদের সুযোগ করে দিচ্ছেন। দলের এই ঞৎধহংরঃরড়হ ঃরসব-এ যারা দায়িত্বে আসবেন, শেকড় দেখে নবীন নেতৃত্ব সঠিকভাবে নির্ধারণ করার ওপর নির্ভর করছে আগামীর আওয়ামী লীগ, নির্ভর করছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ, নির্ভর করছে তৃণমূল পর্যন্ত দলকে সুসংগঠিত করার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা। যার বজ্রকঠিন নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব-দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি অবিসংবাদিত রাষ্ট্রনায়ক দেশরতœ শেখ হাসিনার সঠিক ও সময়োচিত সিদ্ধান্তই তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে বলে আমার বিশ্বাস।