বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০১:১০ অপরাহ্ন

হলে বসেই প্রশ্নপত্র ফাঁস

হলে বসেই প্রশ্নপত্র ফাঁস

স্বদেশ ডেস্ক:

প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের অডিটর পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, পরীক্ষা শুরুর ২ মিনিটের মধ্যেই পরীক্ষার হল থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায়। এ জন্য নিয়োগপ্রত্যাশীর সঙ্গে চুক্তি হয় ১৪ থেকে ১৬ লাখ টাকার। এই টাকার একটা অংশ নেওয়া হয় নৈর্ব্যক্তিক (এমসিকিউ) পরীক্ষার আগেই। বাকি টাকা চাকরি হওয়ার পর। চক্রটি অডিটর পদে নিয়োগ পরীক্ষায় ১৮ জনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল।

গত শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর, কাকরাইল ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে অভিযান চালিয়ে এ চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তাদের মধ্যে বগুড়ার ধুপচাঁচিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাসরীন রুপা ও মহাহিসাব নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের (সিজিএ) বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান আজাদও রয়েছেন। এই দুজনের যোগসাজশে চক্রটি দীর্ঘদিন ধরেই নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছিল।

গতকাল ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার জানান, এই চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। চক্রটির কয়েক সদস্য এর আগেও বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

গ্রেপ্তার হওয়া বাকি ৮ জন হলেন- নোমান সিদ্দিকী, আল-আমিন রনি, নাহিদ হাসান, শহীদ উল্লাহ, তানজির আহমেদ, রাজু আহমেদ, হাসিবুল হাসান ও রাকিবুল হাসান। তাদের কাছে ৬টি ইয়ার ডিভাইস, ৬টি মাস্টার কার্ড মোবাইল সিম হোল্ডার, ৫টি ব্যাংকের চেক, ৭টি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, ১০টি স্মার্টফোন, ৬টি ফিচার মোবাইল ও ১৮টি প্রবেশপত্র পাওয়া গেছে।

হাফিজ আক্তার বলেন, শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে বিকাল সোয়া ৪টা পর্যন্ত প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের অধীনে ৫৫০টি অডিটর পদে ৭০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা হয়। এনএসআই ও ডিবি গুলশান বিভাগ জানতে পারে, একটি চক্র এ নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করবে।

হাফিজ আক্তার জানান, প্রথমে কাকরাইলে অবস্থিত নিউ শাহিন হোটেল থেকে অসাধু উপায় অবলম্বনকারী ২ পরীক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কাফরুল থানার সেনপাড়া পর্বতা এলাকার একটি ভবন থেকে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, প্রশ্নপত্র এবং উত্তরপত্রের খসড়াসহ গ্রেপ্তার করা হয় ৪ জনকে। ডিবির আরেকটি দল বিজি প্রেস উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে পরীক্ষার্থী এবং অন্যতম পরিকল্পনাকারী মাহবুবা নাসরীন রুপাকে আটক করে।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে হাফিজ আক্তার জানান, এই চক্রটি চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীদের কাছে মাস্টারকার্ড মোবাইল সিম হোল্ডার ও ফোনসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে। চক্রের কয়েক সদস্য থাকেন পরীক্ষার হলে। তারা পরীক্ষা শুরুর ২-৩ মিনিটের মধ্যেই বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র বাইরে পাঠিয়ে দেন। এর পর প্রশ্নপত্র সমাধান করে ডিভাইসের মাধ্যমে তা পরীক্ষার হলে থাকা পরীক্ষার্থীর কাছে পাঠিয়ে দেন চক্রের অন্য সদস্যরা।

অতিরিক্ত কমিশনার জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ে অডিটর মাহমুদুল হাসান আজাদ প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ২০১৯ সালে বরখাস্ত হন। নাহিদ হাসান, আল আমিন সিদ্দিকী এর আগেও প্রশ্নফাঁস সংক্রান্ত অভিযোগে একাধিকরা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এর আগেও তারা বিভিন্ন ব্যাংক, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, সিটি করপোরেশন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন হিসাব নিরীক্ষক কার্যালয়, জ্বালানি অধিদপ্তর, সমবায় অধিদপ্তর, খাদ্য অধিদপ্তর, সাধারণ বীমা করপোরেশনসহ অন্যান্য সংস্থার প্রশ্নফাঁস এবং উত্তরপত্র সরবরাহ করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

শুক্রবারের পরীক্ষা বাতিল হবে কিনা জানতে চাইলে হাফিজ আক্তার বলেন, কোনো সংস্থাই চায় না পরীক্ষা বিতর্কিত হোক। পরীক্ষা বাতিল হবে কিনা, তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরই সিদ্ধান্ত নেবে।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাসরীন রুপার ভূমিকা সম্পর্কে হাফিজ আক্তার জানান, তার ভূমিকা ছিল মধ্যস্থতার কাজ করা। চক্রের একটা অংশ অর্থ সংগ্রহ করেছে। আরেকটা অংশ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে। মাহবুবা নাসরীন রুপা নিজে পরীক্ষা দিয়েছেন, সঙ্গে অন্য পরীক্ষার্থীদের কাছে ডিভাইস সরবরাহের কাজ করেছেন। গ্রেপ্তাকৃতদের মধ্যে ৭ জন চক্রের সদস্য, তিনজন পরীক্ষার্থী।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877