রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৪৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
আলজাজিরার প্রতিবেদন: ভারতীয় ভিসা নিষেধাজ্ঞায় বিপাকে বাংলাদেশি রোগীরা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিজয় একাত্তর হল সভাপতি সজিব গ্রেফতার বিএনপি নেতার বাড়ি থেকে অস্ত্র-বোমা উদ্ধার করল সেনাবাহিনী পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন বন্ধে জোরদার হচ্ছে অভিযান আইসিউতে মুশফিক ফারহান সাবেক প্রতিমন্ত্রীর চাচাকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে পিটুনি ফ্যাসিবাদের ঘৃণাস্বরূপ বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতিতে জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি তারেক রহমানের ৪ মামলা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল আগামী সোমবার লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া ১২০ দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করে যেসব প্রস্তাবনা দিতে যাচ্ছে কমিশন
দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় বিএনপির দুই নেতা বহিষ্কার

দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় বিএনপির দুই নেতা বহিষ্কার

স্বদেশ ডেস্ক:

বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার ও এটিএম কামালকে বহিষ্কার করা নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় ও নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজনীতিতে বেশ আলোচনা চলছে। দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা জানান, তৈমূর নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু যেভাবে তিনি দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন এবং অনমনীয় থেকে কথাবার্তা বলেছেন তা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। দলের ভাবমূর্তি ধরে রাখতেই তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি তাকে সহযোগিতা করায় কামালের বিরুদ্ধেও কঠোর সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় আমাদের সময়কে বলেন, দলের সিদ্ধান্ত মেনেই বিএনপি করতে হবে। এর বাইরে গিয়ে তো দল করা যাবে না।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, থানা, উপজেলা থেকে শুরু করে সব কমিটি দ্রুত পুনর্গঠন করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশ দিয়েছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তৈমূর ও কামালকে বহিষ্কারের পরই জেলার ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যুগ্ম আহ্বায়ক নাসির উদ্দিনকে। মহানগরে এক নম্বর যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস সবুর সেন্টুকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এক নেতা আমাদের সময়কে জানান, ৯০ দিনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর কমিটির কাউন্সিল করা হবে। সেই অনুযায়ী যোগ্য ও সক্রিয়দের সমন্বয়ে ওয়ার্ড বা ইউনিয়ন থেকে শুরু করে থানা বা উপজেলা কমিটি করতে বলা হয়েছে। সেখানে তৈমূর ও কামাল সমর্থকদেরও রাখতে বলা হয়েছে।

দলের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি করা হলেও তৈমূর আলম নিজের লোক আনতে নানা কৌশলের আশ্রয় নেওয়ায় কোনো ইউনিট কমিটি করা যায়নি। তৈমূরকে বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে সেই বাধা দূর হলো। জানতে চাইলে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, কাউকে বাদ দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়; সবাইকে নিয়েই দল করা আমাদের উদ্দেশ্য। সেক্ষেত্রে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সবাইকে চলতে হবে। তিনি আরও জানান, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি কারাগারে। এ কারণে তার পরিবর্তে যুগ্ম আহ্বায়ক নাসির উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার চলাকালে তৈমূর আলম খন্দকারের দলীয় পদবি প্রত্যাহার করে বিএনপি। স্থানীয় নেতাকর্মীদের অধিকাংশ মনে করেন, বহিষ্কারের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি। তার সঙ্গে বহিষ্কার করা হয়েছে মহানগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালকে। এর ফলে জেলা ও মহানগর বিএনপি বেশ দুর্বল হয়ে পড়বে বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা। তবে তৈমূরবিরোধিরা মনে করেন, কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন তৈমূর। শৃঙ্খলা ভঙ্গে কঠিন শাস্তি না হলে অন্যরা একই ধরনের অপরাধে উৎসাহিত হবেন।

গতকাল বুধবার স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ দলের চার নেতার সঙ্গে কথা হয়। তাদের তিনজনই বলেন, তৈমূর ও কামাল নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের অন্যতম। তারা মাঠের নেতা। দলের সব আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা ছিল। তাদের ব্যাপারে দলের এতটা কঠিন হওয়া উচিত হয়নি। দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, তৈমূর রাজনৈতিকভাবে হয়তো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় এর বিকল্পও ছিল না। দলের প্রতি অনুগত থাকলে নির্বাচন বা আন্দোলনকেন্দ্রিক কোনো প্রয়োজনে তাদের ডাকও পড়তে পারে।

কিছুদিন ধরে দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। এরই ধারাবাহিকতায় এই দুই নেতাকে প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তৈমূর প্রার্থী হওয়ায় তার বিরোধীরা খুবই সক্রিয় ছিল। নির্বাচনে তার পরাজয়ের পর দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় তাকে বহিষ্কারের দাবি তোলেন কিছু নেতাকর্মী।

২০১৬ সালে নাসিক নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, এবার তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনে অংশ নেননি। যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন, দল তাদের বহিষ্কার করেছে- এটা সঠিক সিদ্ধান্ত। নইলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকবে। তিনি আরও বলেন, বিএনপি বড় দল। এখানে নেতাকর্মীর অভাব নেই। নেতাকর্মীরা কোনো ব্যক্তির অনুসারী নন, সবাই দলের অনুসারী। কারও জন্য দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। যিনি দলের দায়িত্বে থাকবেন নেতাকর্মীরা তার নির্দেশ মেনে চলবেন।

অন্য কোনো দলে যাব না : তৈমূর

বহিষ্কার করলেও দল পরিবর্তন করবেন না বা অন্য কোনো দলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা নেই বলে জানিয়েছেন তৈমূর আলম খন্দকার। গতকাল সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তিনি আন্দোলন গড়ে তুলবেন। ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বিরোধী গণআন্দোলন গড়ে তুলবেন। কারণ এ মেশিন ভোট ডাকাতির বাক্স।

তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি রাজনীতি করতে গেলে একটা দল থাকতে হয়; কিন্তু পদ-পদবি দরকার হয় না। আমার প্রতি দলের এই সিদ্ধান্ত কেউ আমাকে টেলিফোনে বা চিঠিতে জানায়নি। তবে আমি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। আমাকে পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সমর্থক থেকে তো বহিষ্কার করতে পারেনি। দলের কর্মীসমর্থক হিসেবে কাজ করে যাব।

দলের এই সিদ্ধান্তে কারও প্রতি ক্ষোভ নেই মন্তব্য করে তৈমুর বলেন, আমি দলের কর্মী না কর্মচারী, তা এখনো বুঝতে পারিনি। আমাকে বহিষ্কারের আগে শোকজ করা হয়নি, কোনো ব্যাখ্যা চাওয়া হয়নি।

বহিষ্কৃত অন্য নেতা এটিএম কামাল বলেন, দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। বিএনপির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছি, দল ছেড়ে অন্য কোথাও যাব না। দলের সমর্থক হিসেব কাজ করব। বহিষ্কার প্রত্যাহারের আবেদন করব না। তিনি বলেন, নেতৃত্ব একদিনে সৃষ্টি হয় না, অনেক সময় লাগে। দলে কেউ অপরিহার্য নয়; কিন্তু দলে প্রত্যেক নেতাকর্মীর অবদান আছে। এক নেতার অভাব দুঃসময়ে বোঝা যায়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877