শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৫ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
শিক্ষকের যৌন হয়রানির শিকার ছাত্রীকে মানসিক রোগী প্রমাণের চেষ্টা!

শিক্ষকের যৌন হয়রানির শিকার ছাত্রীকে মানসিক রোগী প্রমাণের চেষ্টা!

স্বদেশ ডেস্ক:

রাজধানীর হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজের এক ছাত্রী তার শিক্ষকের অশোভন আচরণের শিকার হন গত ডিসেম্বরে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২২ ডিসেম্ব^র ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কলেজের ফার্মাকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সালাউদ্দিন চৌধুরীকে গ্রেপ্তারও করে র‌্যাব। পরে নিজের অপরাধ স্বীকার করলে অভিযুক্ত শিক্ষককে পাঠানো হয় জেলহাজতে। অবশ্য তাকে বাঁচাতে মরিয়া কলেজ প্রশাসন। উল্টো ওই শিক্ষার্থীকেই মানসিক রোগী প্রমাণের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।

কলেজসূত্রে জানা যায়, এমবিবিএস থার্ড প্রফেশনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত মে মাসে। তাতে ওই ছাত্রী ফার্মাকোলজি বিষয়ে লিখিত পরীক্ষায় ৯০-এর মধ্যে পান ৫৭ দশমিক ২ নম্বর। ফরমেটিভে ১০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছেন ৮। অর্থাৎ ১০০
নম্বরের মধ্যে পেয়েছেন ৬৬ নম্বর। এ ছাড়া ব্যবহারিকে পান ৬০ নম্বর। মৌখিক পরীক্ষার আগে বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সালাউদ্দিন চৌধুরী এই ছাত্রীকে তার বাসায় সময় দিতে বলেন। কিন্তু তাতে রাজি না হওয়ায় তাকে অকৃতকার্য করা হয়। এমনকি ব্যক্তিগত সময় না দিলে, পাস না করে এভাবেই বছরের পর বছর ঘুরতে হবে বলেও হুমকি দেন ওই শিক্ষক।

ওই শিক্ষার্থী অবশ্য জিডিতে উল্লেখ করেন, পরীক্ষায় পাস না করিয়ে একই শিক্ষাবর্ষে অনেক বছর রাখার হুমকি দিয়ে শিক্ষক সালাউদ্দিন তার মেসেঞ্জারে অশোভন প্রস্তাব দেন। প্রাইভেট পড়ার জন্য তাকে বাসায় যেতে বলেন। কিন্তু বাসায় যেতে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে নানাভাবে হুমকি দেন ওই শিক্ষক। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডা. সালাউদ্দিন তাকে এই হয়রানি করে আসছেন জানিয়ে ওই ছাত্রী জিডিতে অভিযোগ করেন, এতে তার লেখাপড়া ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জানান, ওই শিক্ষার্থীকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না করে অভিযুক্ত শিক্ষক ডা. সালাউদ্দিনকে বাঁচানোর সব রকমের চেষ্টাই করছে কলেজ প্রশাসন। এমনকি সাক্ষীদের ফোন দিয়ে নানা ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। একই সঙ্গে অভিযোগকারী ছাত্রীকে মানসিক বিকারগ্রস্ত হিসেবে প্রমাণেরও অপচেষ্টা চলছে। এমনকি অনৈতিকভাবে ওই শিক্ষার্থীর একটি প্রেসক্রিপশন (ব্যবস্থাপত্র) আদালতে দাখিল করা হয়েছে।

যদিও মেডিক্যাল নীতিনৈতিকতা অনুযায়ী, একজন রোগীর ব্যবস্থাপত্র একান্তই তার ব্যক্তিগত। সেটি অন্য কারও কাছে প্রকাশ করা আইনত দ-নীয় অপরাধ। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ‘রোগীর ব্যবস্থাপত্র একান্তই তার ব্যক্তিগত। সেটি রোগীর বা তার অভিভাবকের অসম্মতিতে অন্য কাউকে দেওয়া একেবারেই অনৈতিক।’

জানা গেছে, শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির ঘটনায় আদালতের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে কলেজের তিন শিক্ষককে সদস্য করা হয়েছে; তারাই ওই শিক্ষার্থীকে ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে’ মানসিক রোগী প্রমাণের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ।

ভুক্তভোগী ছাত্রীর দাবি, পুরোপুরি সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও পাঁচ সদস্যের কমিটিতে থাকা হলি ফ্যামিলি মেডিক্যাল কলেজের সাইকিয়াট্রি বিভাগের শিক্ষক ডা. ফারজানা রবিন আমাকে প্রশ্ন করেন,‘মানসিক ডাক্তারের কাছে যাই কিনা’, ‘পাওয়ারফুল বা মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ খাই কিনা’। এতে করে মূলত আমাকে মানসিকভাবে অসুস্থ প্রমাণের চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. দৌলতুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীকে মানসিক রোগী প্রমাণের চেষ্টা করার প্রশ্নই আসে না। কারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তানের মতো। তা ছাড়া ওই ছাত্রীকে প্রশাসন থেকে সহায়তা করা হচ্ছে না, এমন অভিযোগ ঠিক নয়।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877