শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০১:০০ পূর্বাহ্ন

আন্দোলন ইস্যুতে ঐক্য গড়তে চায় বিএনপি

আন্দোলন ইস্যুতে ঐক্য গড়তে চায় বিএনপি

স্বদেশ ডেস্ক:

দেশের সামগ্রিক পেক্ষাপটে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে মতবিনময় করবে বিএনপি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বাইরে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত সব দলকে আমন্ত্রণ জানাবে দলটি। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে সভা শুরু করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ লক্ষে একটি খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এতে দলগুলোর সঙ্গে কিছু সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে আলোচনা করার কথা রয়েছে। অভিন্ন দাবিতে ‘একসঙ্গে’ অথবা ‘যুগপৎ’ আন্দোলনের উদ্দেশ্যে ঐক্য গড়ার বিষয়ে আগ্রহের কথা জানাবে বিএনপি। খসড়ায় নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলনের পাশাপাশি ক্ষমতায় গেলে কিভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করা হবে এ নিয়ে দলটির অবস্থানের বিষয়ে অঙ্গীকার রয়েছে। বিএনপি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

সূত্র আরও জানায়, বিএনপির লক্ষ্য চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে চলমান আন্দোলনের পাশাপাশি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ইস্যুটি কীভাবে সবার অভিন্ন দাবিতে পরিণত করা যায়। সে ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের বিষয়ে মতবিনিময় সভায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে দলটি। তা না হলে যুগপৎ আন্দোলনেও যেতে রাজি দলটি। মতবিনিময় সভায় বিএনপির অবস্থান সম্পর্কিত একটি খসড়া তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে। খসড়ায় আরও রয়েছে-ক্ষমতায় গেলে প্রতিহিংসা বা জিঘাংসা নয়, জাতীয় ঐক্যই লক্ষ্য; ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা, নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনি আইন ও নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার; মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ, ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিতকরণ, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা এবং বিকেন্দ্রীকরণ, দুর্নীতি দমন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করাসহ আরও বেশ কয়েকটি দফা। স্থায়ী কমিটির সভায় খসড়ায় আরও সংযোজন-বিয়োজন করা হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার সময়ও আরও ইস্যু যুক্ত করা হবে। অবশ্য খসড়া তৈরি করার কথা স্বীকার করেননি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি যুগান্তরকে বলেন, এ বিষয়ে দলের পক্ষে বিএনপি মহাসচিব কথা বলবেন।

দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সোমবারের সভায় সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময়ের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই মতবিনিময় সভা সফলভাবে সম্পন্ন করতে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দায়িত্ব দিয়েছে স্থায়ী কমিটি।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবির ফয়সালা হওয়ার পর আমাদের মূল দাবি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলন শুরু করা। এ দাবিতে ডান ও বামপন্থি সব রাজনৈতিক দলের বৃহৎ ঐক্য গড়ে তুলতে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করব। এরই মধ্যে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কয়েকটি দল এবং ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে তাদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমাদের আন্দোলন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। সুতরাং তাদেরকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রশ্ন আসে না। আমরা বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করব। তা কবে থেকে শুরু তা এখনও ঠিক হয়নি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্য গণতন্ত্রহীনতা। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলখানায় রেখেছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি মানেই হচ্ছে গণতন্ত্রের মুক্তি। এছাড়া অনেক ইস্যু আছে যা নিয়ে আমাদের আলোচনা হবে।

অবশ্য বিএনপির দুজন নীতিনির্ধারক জানান, নানা চাপের মধ্য দিয়ে যদি বর্তমান সরকার নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায়, তাতে বিএনপিও সাড়া দেবে। সে বিষয়েও বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় আলোচনা হবে। নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ সরকার ইস্যুতে ঐকমত্য তৈরিই মূলত প্রধান লক্ষ্য। সেটা আদায়ের জন্য নানা কৌশল থাকবে। ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ পেলে পরির্বতন কি হবে- তা নিয়ে অঙ্গীকার করবে বিএনপি।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সংলাপ নিয়ে ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের সঙ্গে কয়েক দফা কথা বলেছেন বিএনপি নেতারা। তারা সংলাপ বর্জনের অনুরোধ জানালে তাতে সাড়া দেয় দুই জোটে থাকা ৫টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। বিএনপিসহ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি ইতোমধ্যে সংলাপের আমন্ত্রণ পেলেও তাতে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগও (বিএমএল) অংশ নেবে না বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, সিপিবিও সংলাপে অংশ নেয়নি।

নেতারা জানান, সংলাপে অংশ না নেওয়া দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভার বিষয়ে ইতোমধ্যে যোগাযোগ করেছে বিএনপি। আগামী সপ্তাহে এ নিয়ে দলটির একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সে বৈঠকে কোথায় মতবিনিময় সভা হবে এবং কটি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।

বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা বলেন, সম্প্রতি র‌্যাব ও র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান কয়েক কর্মকর্তার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এছাড়াও সরকারের পদ হারানো প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে কানাডায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এসব নিয়ে সরকার বেশ চাপের মধ্যেই রয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের চিন্তার পরিবর্তন এসেছে। বিএনপি বিশ্বাস করে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটা আগের তিনটি নির্বাচনের মতো হবে না। এসব নেতা মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে রাজপথে নামা গেলে আন্দোলনের ফসল ঘরে তোলা সম্ভব। এ চিন্তা থেকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি আদায়ে সব পক্ষকে একসঙ্গে চায় বিএনপি। এক্ষেত্রে পুরোনো জোটকাঠামো প্রয়োজনে ভেঙে দিতেও রাজি বলে দলটির নীতিনির্ধারকরা জানান। এমন প্রেক্ষাপটে ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ভিন্ন কোনো কৌশলে আন্দোলনে সম্পৃক্ত রাখার কথাই বেশি ভাবা হচ্ছে।

বিএনপি নেতারা জানান, বৃহৎ ঐক্যে যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামী বাধা হয়ে দাঁড়ালে সেখানেও কৌশল অবলম্বনের কথা ভাবছে বিএনপি। দূরে ঠেলে না দিয়ে সমঝোতার ভিত্তিতে কৌশলে তাদের সঙ্গে পথ চলবে দলটি।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অত্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব যুগান্তরকে বলেন, বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অবশ্যই বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলা দরকার। বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে বিএনপি মতবিনিময়ের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা ইতিবাচক। অবশ্যই রাজনীতিতে বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন। যেসব জোট আছে, বিদ্যমান এসব জোট রেখে বৃহত্তর ঐক্যের জন্য সংলাপ বা আলোচনা তো হতেই পারে। তবে এর আগে সভার বিষয়বস্তু কি তা স্পষ্ট করতে হবে বিএনপিকে।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বর্তমান দুঃশাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিভাবে একসঙ্গে আন্দোলন করা যায় এবং আন্দোলনের মাধ্যেমে যে পরিবর্তন হবে সে পরিবর্তনের পর বিএনপি কিভাবে দেশকে গড়ে তুলবে তা নিয়ে সভা হলে তা খুবই ইতিবাচক হবে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বিএনপি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করতে চায়। রাজপথে কার্যকর বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে পারস্পরিক আলোচনার উদ্যোগ অবশ্যই ইতিবাচক।

গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, বিএনপির তো সারা দেশে একটি সাংগঠনিক শক্তি আছে। তারা ডাকলে নিশ্চয়ই আমরা যাব। যেসব দল সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আগ্রহী তারা কিভাবে আন্দোলন করবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চাই এবং সুষ্ঠু নির্বাচন চাই-এটা পরিষ্কার। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের ফর্মুলা সবচেয়ে ভালো-এটা প্রমাণিত। যদি কোনো কারণে এটা না হয় তাহলে সব দল নিয়ে জাতীয় সরকার অথবা জাতিসংঘের অধীনে একটি সরকার হতে পারে। তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877