শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২১ অপরাহ্ন

ডেঙ্গুর কবলে এশিয়া

স্বদেশ ডেস্ক: পৃথিবীর অনেক দেশেই এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার বড় অংশ সাধারণ ও মারাত্মক ধরনের ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বর্তমানে মারাত্মক ধরনের ডেঙ্গুজ্বরে কমপক্ষে ৫ লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ জলবায়ুর পরিবর্তন! শুধু বাংলাদেশ নয়, এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে প্রতিনিয়ত ডেঙ্গুজ্বরে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এশিয়ায় ডেঙ্গু ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। এশিয়ার ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে জানিয়েছেন-আজহারুল ইসলাম অভি

ফিলিপাইন

ফিলিপাইনের স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাব মতে, দেশটিতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৪৯১ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ১৬ হাজার মানুষ। পিআইডিএসআর বলছে, গত বছরের চেয়ে এবার গোটা ফিলিপাইনে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ৫৭ হাজার ৫৬৪। ২০১৮ সালের তুলনায় তা ৮৫ শতাংশ বেশি। শিশু ও কিশোররা সবচেয়ে বেশি প্রাণঘাতী এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মোট ডেঙ্গু রোগীর ৩৯ শতাংশের বয়স ৫ থেকে ৯ বছরের মধ্যে। ১৫ জুলাই জাতীয় সতর্কতা জারি করে ফিলিপাইন সরকার। কয়েকটি অঞ্চলে দুর্যোগ পরিস্থিতি জারি করা হয়। ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত, আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করে যথাযথ ব্যবস্থা ও তদারকি, প্রত্যেক ডেঙ্গু রোগীর বাসস্থান এবং যাতায়াতসহ জীবনযাপনের তথ্য সংগ্রহ করে সরকার এ রোগের বিস্তার রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।

সারাদেশে বিশেষ সতর্ক অবস্থা জারি করে পূর্ব এশিয়ার এ দেশটি রেডক্রসের সহায়তা নিচ্ছে। ১০ কোটি জনসংখ্যার দেশে ২০ লাখ স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন রেডক্রসের মাধ্যমে। সেখানে রেডক্রস ১০টি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত বেডের ব্যবস্থা করেছে। একই সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রোগীদের শঙ্কা কমাতে সক্ষম হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, স্বেচ্ছাসেবী নার্সও নিযুক্ত করেছে সংস্থাটি। রেডক্রস ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দিতে মোটা অঙ্কের তহবিল সংগ্রহ করে নিজেরা যেমন খরচ করছে, তেমনি সহায়তা করছে সরকারকেও। ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমাতে তাদের স্বেচ্ছাসেবীরা সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করছেন। হাসপাতালগুলোয় গিয়ে রোগীদের সেবাও দিচ্ছেন তারা। একই সঙ্গে কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামেও ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে কাজ করছেন তারা।

ভারত

ভারতের দক্ষিণ প্রদেশে এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মকভাবে দেখা দিয়েছে। সেখানকার ৫ প্রদেশে ছড়িয়ে পড়েছে মশাবাহিত এ রোগটি। তবে ৫টি প্রদেশের মধ্যে ৪টিই দক্ষিণ অঞ্চলের। এগুলো হচ্ছে কর্নাটক, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা ও কেরালা। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যা বেশি। এখন পর্যন্ত সরকারি হিসাব মতে, সেখানে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ২১০। তাদের মধ্যে কর্নাটকে ১ হাজার ৩০৩, তামিলনাড়ুতে ৯৮৮, তেলেঙ্গানায় ৭৬৭ ও কেরালায় ৪৬৯ জন রয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে সেখানে মৃত্যুর হার খুবই কম।

মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ায় গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হারে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রায় ৬২ হাজার ৪২১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছে প্রায় ৯৩ জন। মালয়েশিয়া সরকার ফাইটিং ফায়ার উইথ ফায়ার নামে এক ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মাধ্যমে ওলবাচিয়া ব্যাক্টেরিয়ায় আক্রান্ত এডিস মশার ডিম বিভিন্ন এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়, যার ফলে এসব ডিম থেকে উৎপন্ন মশা ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়াতে পারবে না এবং এসব মশার সঙ্গে অন্য যেসব মশা মিলিত হবে তারাও ডেঙ্গু ভাইরাস বিস্তারে অক্ষম হবে। এই পদ্ধতিতে সফলতাও পাওয়া যাচ্ছে দ্রুত।

থাইল্যান্ড

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডে প্রাণঘাতী ভাইরাস জ্বর ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে এই জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার এবং অন্তত ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। শনিবার দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী লোয়ে প্রদেশের চিয়াং খান হাসপাতাল সফরে গিয়ে ডেঙ্গুজ্বরে এই হতাহতের তথ্য জানান।

সিঙ্গাপুর

দেশটির জাতীয় পরিবেশ সংস্থার হিসাবে এ বছরের প্রথম ৬ মাসে সিঙ্গাপুরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। গত এক সপ্তাহেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৬৬ জন। তা সিঙ্গাপুরে ডেঙ্গু রোগের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড। গত বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরের ইংরেজি দৈনিক স্ট্রেইটস টাইমসের খবরে জানানো হয়, ডেঙ্গু ছড়ানোর জন্য দায়ী ব্যক্তিকে কমপক্ষে ২০০ ডলার জরিমানা দিতে হবে। গত বছর ডেঙ্গুর বংশবিস্তারে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় প্রায় ৪ হাজার ৭০০ পরিবারকে জরিমানা করেছিল সিঙ্গাপুর সরকার।

শ্রীলংকা

শ্রীলংকার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের ভাষ্য মতে, দেশটিতে ডেঙ্গুজ্বরে ২২ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। জানা গেছে, বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক বেড়ে যায়। ফলে কয়েক দশক ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বর্ষাকালে ডেঙ্গু আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।

বাংলাদেশ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের এ পর্যন্ত ১১ হাজার ৬৫৪ জন মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে কেবল জুলাইয়েই রেকর্ডে ৯ হাজার ৫১০ জন রয়েছেন। গতকাল আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮২৪ জন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877