স্বদেশ ডেস্ক: মাদকের ছড়াছড়িতে আতঙ্কিত এখন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সিলেট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক সহজলভ্য হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুশ্চিন্তা বেড়েছে। তবে, দীর্ঘদিন থেকে মাদকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও ক্যাম্পাসে অভিযান পরিচালনা করার কথা থাকলেও এখনো অভিযান চালাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে মাদকের ছড়াছড়ি। বিশেষ করে শাহপরান হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এবং সৈয়দ মুজতবা আলী হলের বিভিন্ন কক্ষে নিয়মিত বসে মাদকের আসর। হলের ছাদে আড্ডার নামে মাদক সেবন করার অভিযোগ উঠলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছাদ বন্ধ করে দেয়া হয়। অপরদিকে মেয়েদের প্রথম ছাত্রী হল ও বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলে এবং এদের অধীনে ভাড়া বাসাগুলোতেও ছাত্রীদের মাদক সেবনের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, বঙ্গবন্ধু হল ও মুজতবা আলী হলের মধ্যবর্তী টিলায়, গাজী কালুর মাজার, ছাত্রী হলের পার্শ্ববর্তী টিলা, শহীদ মিনার, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটরিয়ার পেছনে, শিক্ষা ভবন ‘ই’ এর পাশে, মেডিকেল সেন্টার থেকে শারীরিক শিক্ষা দপ্তরের রাস্তায়, মুক্তমঞ্চের পেছনে, বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কেন্দ্রীয় মিলনায়তনের পার্শ্ববর্তী জায়গা এবং কেন্দ্রীয় গ্যারেজের পেছনেও বিভিন্ন সময় চলে গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকের আসর।
ক্যাম্পাস ও হলের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েকটি মেসে চলে মাদক সেবন।এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সকল স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে মাদক সেবন ও ব্যাপকভাবে মাদকের ছড়াছড়িতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে আবাসিক হলের বিভিন্ন কক্ষে নিয়মিত মাদকের আসর বসার ঘটনায় অতিষ্ঠিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার ছত্রছায়ায় এ সকল কর্মকা- হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র বলছে, বেশ কিছুদিন মাদকের উৎপাত বন্ধ থাকলেও আবারো পাল্লা দিয়ে চলছে মাদক সেবন। বহিরাগত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ইয়াবা, গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। আগে হাতেহাতে মাদক বিক্রি হলেও সম্প্রতি পরিবর্তন হয়েছে মাদক বিক্রির ধরন, বেশ কিছুদিন ধরে মোবাইলে মাদকের অর্ডার নেয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।
ক্যাম্পাস ও প্রক্টরিয়াল বডি সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৬ই অক্টোবর সন্ধ্যায় একাডেমিক ভবন ‘সি’ এর টিলার পার্শ্ববর্তী টং থেকে মাদকদ্রব্যসহ ছয় বহিরাগত যুবককে আটক করেছিল প্রক্টরিয়াল বডি। একই বছরের ৯ই নভেম্বর ৩২ পুঁটলি গাঁজাসহ পাঁচ বহিরাগতকে আটক করে এবং গাঁজা সেবন ও ক্রয় করতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের দশ শিক্ষার্থীকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয় প্রক্টরিয়াল বডি। এদেরকে আটক করার পর নড়েচড়ে বসে ক্যাম্পাসের ভেতরের সিন্ডিকেটটি। বেশ কিছুদিন ক্যাম্পাস ও হলের বাইরে অবস্থান করলেও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় আবারো ক্যাম্পাসে ও আবাসিক হলে এদের কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ যোগদানের পর পরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে রয়েছে বলে জানান। গত বছর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সিলেটের র্যাব-৯ এর সহযোগিতায় কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে মাদকবিরোধী আলোচনা সভা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আয়োজকরা শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় আলোচনা সভাটি প- হয়।
সম্প্রতি সিলেট সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ইয়াবা ও ফেনসিডিলসহ নিয়মিত মাদক প্রবেশ করছে। এসব মাদকের বড় একটা অংশ প্রবেশ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। যার বড় গ্রাহক হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ফলে সিলেটে মাদকের সহজলভ্যতা বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তা বেড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে। প্রতিদিনই সিলেটের প্রশাসনের অভিযানে আটক হচ্ছে মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ীরা। আতঙ্কের কথা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মোবারক হাসান জানান, ‘শিক্ষার্থীরা যদি মাদকের করাল গ্রাসে পড়ে তাহলে আগামীদিনের বাংলাদেশ যোগ্য নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়বে। প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে দ্রুত মাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।’ শাবি ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমীন জানান, ছাত্রলীগ সব সময় মাদকের বিরুদ্ধে। কারো বিরুদ্ধে মাদকের অভিযোগ পাওয়া গেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানান, ‘কিছুদিন আগে আমরা প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি সেমিনার করেছিলাম। সব শিক্ষার্থীদের নিয়ে আবার সেমিনার আয়োজন করা হবে। হলে ও ক্যাম্পাসে যারা মাদকের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে আমরা নজরদারিতে রেখেছি। প্রশাসনের ‘টপ প্রায়োরিটি’র মধ্যে মাদক একটি। বিশ্ববিদ্যালয়কে মাদকমুক্ত করার জন্য যা যা করা দরকার সব করবো।’