মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৪:৪২ অপরাহ্ন

ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণের লক্ষণ

ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণের লক্ষণ

স্বদেশ ডেস্ক:

দেশে করোনা ভাইরাসের সুপার ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের দ্রুত বিস্তার ঘটতে শুরু করেছে বলে সন্দেহ করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, গতকাল বুধবার মাত্র দুদিনের ব্যবধানে নতুন রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ৭ জনে উন্নীত হয়েছে। এমনকি গত এক সপ্তাহে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। তবে এর মধ্যে আরও কেউ ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা এখনই বলা যাচ্ছে না। আমাদের দেশে নমুনার জিন রহস্য উন্মোচনে দুর্বলতা রয়েছে। যদি পর্যাপ্ত জিন রহস্য উন্মোচন করা হতো তা হলে ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়েছে কিনা সেটা স্পষ্ট হওয়া যেত।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রথমে যে দুজনের ওমিক্রন শনাক্ত হয়, তাদের আক্রান্ত দেশে ভ্রমণের ইতিহাস ছিল। তাদের কন্টাক ট্রেসিং করা হয়েছিল। কিন্তু গত দুদিনে যাদের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে তাদের এমন ইতিহাস পাওয়া যায়নি। যা থেকেই বোঝা যায়, দেশে ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণের লক্ষণ শুরু হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, আগের দিন সকাল ৮টা থেকে গতকাল একই সময় পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৪৯৫ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩৯৭ জন এবং তার আগের দিন এ সংখ্যা ছিল ৩৭৩ জন। অর্থাৎ প্রতিদিনই আক্রান্তের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এ থেকে দেশে ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণের লক্ষণ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কারণ করোনার এ নতুন ধরনের উচ্চ সংক্রমণশীলতার বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগেই সতর্ক করেছে। এর আগে এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও বলেছেন, সামনে ওমিক্রনে আবার চাপ বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে শুধু টিকা দিয়ে ওমিক্রন ঠেকানো যাবে না। আমাদের স্বাস্থ্যবিধি যথানিয়মে মানতে হবে। তা হলেই ওমিক্রন ছড়াবে না। ওমিক্রন মোকাবিলায় সবাইকে মাস্ক পরার আহ্বান জানান তিনি।

দেশে এ পর্যন্ত ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সাতজনে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার শনাক্ত হওয়া নতুন ৩ জনই ঢাকা বিভাগের। ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সের তথ্য সংরক্ষণ প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটা (জিআইএসএআইডি) থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে জানানো হয়, মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশে আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার তথ্য জমা পড়েছে। নমুনাগুলোর জিনোম সিকোয়েন্স করেছে আইসিডিডিআরবি। এর আগে জিআইএসএআইডি ওয়েবসাইটে সোমবার দেশে একজনের ওমিক্রন শনাক্তের কথা জানানো হয়। দেশের আরও দুজনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার তথ্য দিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বাংলাদেশে প্রথম ওমিক্রন শনাক্তের তথ্য দেওয়া হয় ১১ ডিসেম্ব^র। জিম্বাবুয়ে থেকে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব খেলে আসা বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের দুজনের শরীরে ওমিক্রন পাওয়া যায়।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আহমেদ পারভেজ জাবীন বলেন, শনাক্তের পরিসংখ্যানে এখনই বলা যাবে না যে সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়েছে। তবে জিনোম সিকুয়েন্সিংয়ের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে বিভাগীয় পর্যায়ে মেশিন বসাতে হবে। যাতে প্রত্যেক শনাক্ত রোগীকে সিকুয়েন্সিং-এর আওতায় আনা সম্ভব হয়। সামাজিক সংক্রমণের ক্ষেত্রে দুই দিনে আক্রান্ত দিগুণ হয়ে থাকে। আমাদের এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে কিনা তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

এদিকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ২০ দিন পর করোনার দৈনিক সংক্রমণ ফের ৯ হাজার ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ১৯৫ জন। মঙ্গলবার ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৩৫৮। বিশেষ করে মহারাষ্ট্র এবং দিল্লিতে বেড়েছে সংক্রমিতের সংখ্যা। দেশটিতে এ পর্যন্ত ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৮১ জন। এর মধ্যে ২৩৮ জনই দিল্লিতে। মহারাষ্ট্রে ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৭ জন। এ ছাড়া গুজরাটে ৭৩, কেরালায় ৬৫, তেলেঙ্গানায় ৬২, রাজস্থানে ৪৬, কর্নাটকে ৩৪, তামিলনাড়–তে ৩৪ জন ওমিক্রন আক্রান্ত পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গে এ পর্যন্ত ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছেন ১১ জন।

ভারতে সংক্রমণের এ বাড়তি অবস্থায় উদ্বিগ্ন বাংলাদেশও। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের দেশের বিস্তির্ণ সীমান্ত রয়েছে। এর আগে ভারতে উদ্ভূত করোনার ডেল্টা ধরনের কারণে বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলে সামাজিক সংক্রমণ হয়েছিল। পরে তা সারাদেশে ছড়িয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তাই ওমিক্রনের ক্ষেত্রে আরও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। প্রয়োজনে গ্রহণ করতে হবে কঠোর পদক্ষেপ।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, করোনা ভাইরাস যদি ১০০ মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয় তা হলে ৬০ থেকে ৮০ জনের কোনো লক্ষণ প্রকাশ পাবে না অথবা সামান্য লক্ষণ প্রকাশ পাবে। বাকিদের যে লক্ষণ প্রকাশ পাবে, সেগুলোর অধিকাংশ আবার সাধারণ সর্দি কাশি থেকে আলাদা করা যাবে না। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগতে পারে ২-৫ জনের। অথচ আরটি পিসিআর পরীক্ষায় এদের অধিকাংশ এবং তাদের সংস্পর্শে আসা অনেকের পজিটিভ রেজাল্ট আসবে। তাই দেশের করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পেতে জিনোম সিকুয়েন্সিং বাড়তে হবে।

করোনায় আরও একজনের মৃত্যু

দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও একজন প্রাণ হারিয়েছেন। এ সময় আরও ৪৯৫ জনের শরীরে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৬৩ জনে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৫১টি করোনা পরীক্ষাগারে ২১ হাজার ৭৯টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে মোট ২০ হাজার ৯৩৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ১৪ লাখ ৫০ হাজার ১৪৮টি। দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫১৮ জনে। গতকাল মারা যাওয়া ব্যক্তি একজন পুরুষ। তিনি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ৩৭২ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫ লাখ ৪৮ হাজার ৪১৬ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২.৩৭ ভাগ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩.৮৪ ভাগ এবং শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৭.৭২ ভাগ। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১.৭৭ ভাগ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877