বুধবার, ২২ মে ২০২৪, ০১:৩৭ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
পর্যটক সামলাতে দেয়াল তুলছে জাপান ঢাবিতে গোলাম মাওলা রনির ওপর হামলা টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র, একাদশে যারা আজিজ আহমেদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগ হয়নি: ওবায়দুল কাদের অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত থাকবে কৃষি খাতে ফলন বাড়াতে অস্ট্রেলিয়ার প্রযুক্তি সহায়তা চান প্রধানমন্ত্রী ভিকারুননিসায় ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল, অনিয়ম তদন্তের নির্দেশ ৩০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে থাকতে পারে : সিইসি সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা যে বার্তা দিচ্ছে শিয়ালের টানাহেঁচড়া দেখে মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেল এক নারী ও দুই শিশুর লাশ
বাসে আগুন পূর্বপরিকল্পিত, রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র

বাসে আগুন পূর্বপরিকল্পিত, রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র

স্বদেশ ডেস্ক:

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যেই গেল নভেম্বর রাজধানীর রামপুরায় বাসচাপায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু এবং কয়েকটি বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। দেশজুড়ে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতেই রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা এ ঘটনা

ঘটায় বলে দাবি র‌্যাবের। সেই নাশকতার অন্যতম মূলহোতা ছিলেন মনির হোসেন। চিহ্নিত এই সন্ত্রাসীসহ ঘটনার সঙ্গে ‘জড়িত’ চারজনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তারও করেছে বিশেষ এই বাহিনীটি। গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- হৃদয় হাসান পারভেজ, আলাউদ্দিন সিফাত ও নাঈম হাসান মীর। রাজধানীর রামপুরা ও কুমিল্লায় গত মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের ধরা হয়। বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এর আগে গ্রেপ্তার হন প্রাইভেট কারচালক স্বপন রেজা এবং সবজি ব্যবসায়ী শহীদ ব্যাপারী। কারওয়ানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে গতকাল বুধবার সংবাদ সম্মেলন ডেকে এ তথ্য জানান সংস্থার মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

র‌্যাব কমান্ডার জানান, রামপুরায় গত ২৯ নভেম্বর বাসচাপায় একরামুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া মাঈনউদ্দিন নিহত হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের ‘হাফ ভাড়া’ ইস্যুকে উসকে দিয়ে চালানো হয় অপপ্রচার। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় বেশ কয়েকটি বাসে। এ সহিংসতার পেছনের কারণ উদ্ঘাটনে মাঠে নামে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)। মাঠপর্যায়ে তদন্ত, বিভিন্ন ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ১৫-২০ জনকে। পরে র‌্যাব ও এনএসআইয়ের যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয় জড়িত চারজনকে। চক্রের বাকি সদস্যদেরও দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

গ্রেপ্তারদের বরাত দিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, মনির চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের একজন এজেন্ট। তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্যসহ নাশকতার সাতটি মামলা রয়েছে। মনিরের নির্দেশনা ও পরিকল্পনাতেই রামপুরায় বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির পরিকল্পনা ছিল তাদের। আগেই তারা জানতে পেরেছিল, গাজীপুরে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনাকে ঘিরে রামপুরায় উত্তেজনা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এর পরই অভিযুক্তরা রামপুরা বিটিভি ভবন এলাকায় নাশকতা ও অগ্নিসংযোগের প্রস্তুতি নেয়। সে অনুযায়ীই ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় বাসে।

নিহত মাঈনউদ্দিনের ভগ্নিপতি সাদ্দামের ভাই মো. বাদশা ইসলাম ঘটনার পর বলেছিলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শুনেছি, অনাবিল ও রাইদা পরিবহনের দুটো বাস পাল্লাপাল্লি করে যাচ্ছিল। ওই সময় মাঈনউদ্দিনরাও রাস্তা পার হচ্ছিল। তারা হাত উঠিয়ে বাস থামাতে বললেও দুই বাসের মাঝখানে পড়ে মাঈনউদ্দিনের শরীর চাকায় পিষ্ট হয়।’ তবে র‌্যাবের তদন্তে ঘটনার ভিন্ন চিত্র পাওয়া গেছে দাবি করে কমান্ডার খন্দকার মঈন বলেন, ওইদিনের ঘটনাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। ২৯ নভেম্বর গাজীপুর চৌরাস্তায় বাসে ওঠাকে কেন্দ্র করে মাঈনউদ্দিনের ভগ্নিপতি সাদ্দাম ও তার বন্ধুর সঙ্গে অনাবিল সুপারের চালক ও সহযোগীর বাগ্বিত-া হয়। পরে সাদ্দামরা অন্য একটি বাসে রামপুরায় রওনা দেন এবং ফোন করে নিকটাত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধবদের রামপুরায় জড়ো হতে বলেন। খবর পেয়ে মাঈনউদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন ওই স্থানে জড়ো হয়। আর এ বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জানতে পারে। এ সুযোগ নিতে সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যদের নিয়ে নাশকতা ও অগ্নিসংযোগের পরিকল্পনা করে। নাশকতা ঘটানোর জন্য আলাউদ্দিন, নাঈমসহ আরও ৪-৫ জনকে নির্দেশ দেয় মনির। পরিকল্পনা অনুযায়ী আলাউদ্দিন ও হৃদয়সহ আরও ৩-৪ জনকে বোতলে করে অকটেন আনার দায়িত্ব দেয়। আর বাসে অগ্নিসংযোগের দায়িত্ব দেওয়া হয় ১৫ থেকে ২০ জনকে। অগ্নিসংযোগকারী, সন্ত্রাসী ও হামলাকারী দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে নাঈম। সুপরিকল্পিতভাবেই তারা গাজীপুরের সেই তুচ্ছ ঘটনার সুযোগ নিয়ে রামপুরার ঘটনাটি ঘটায়।

পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই, অনাবিলের বাসটি রামপুরা বিটিভি ভবনের সামন আসতেই ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে অভিযুক্তরা। এতে চালক ও হেলপার সম্ভাব্য হামলা আঁচ করতে পেরে বেপরোয়া গতিতে রামপুরা ত্যাগের চেষ্টা করেন। ৪০০-৫০০ মিটারের মতো এগোতেই সাদ্দাম ও তার শ্যালক মাঈনউদ্দিন বাসটিকে পলাশবাগে আটকানোর চেষ্টা করেন। মাঈনউদ্দিন বাসে জোরপূর্বক উঠে চালক ও হেলপারকে মারতে গেলে হেলপার তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এতে গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে তার মৃত্যু হয়। তখন সুযোগসন্ধানীরা শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার প্রচারণা চালিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। একই সঙ্গে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, বাসে বাসে অকটেন ঢেলে অগ্নিসংযোগ করে। বোতলে করে সিফাতের গ্যারেজ থেকে আনা সেই অকটেন সবার হাতে হাতে দিয়েছিল গ্রেপ্তার আলাউদ্দিন। মনির ও তার চক্রের পরিকল্পনা ছিল নাশকতার সেই আগুন পুরো দেশে ছড়িয়ে দেওয়া। এর মধ্যেই একটি চক্র পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আগের বিভিন্ন ঘটনার ছবি ও ভিডিও শেয়ার করে পোস্ট দিতে থাকে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তাদের সেই প্রচেষ্টা সফল হয়নি। দ্রুতই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়।

গ্রেপ্তার মনির একসময় বিএনপির সহযোগী সংগঠন শ্রমিক দলের ওয়ার্ড সভাপতি ছিলেন জানিয়ে আল মঈন বলেন, মনিরের বিরুদ্ধে এর আগে বিস্ফোরক আইনে সাতটি মামলা রয়েছে। তার চক্রে যারা আছে, তারাও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্য।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877