শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪২ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্রের কথা বলে আর খুনিদের আশ্রয় দেয়

যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্রের কথা বলে আর খুনিদের আশ্রয় দেয়

স্বদেশ ডেস্ক:

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে সমালোচনার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমেরিকা গণতন্ত্রের জন্য কথা বলে আর খুনিদের আশ্রয় দেয়, প্রশ্রয় দেয়। কেন, আমি জানি না। তারা নাকি বিশ্বের সব থেকে গণতান্ত্রিক দেশ! গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিমকোর্ট প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধু ও বিচার বিভাগ’ এবং ‘ইধহমধনধহফযঁ ধহফ ঃযব ঔঁফরপরধৎু’ শীর্ষক মুজিব স্মারকগ্রন্থ ও ‘ন্যায় কণ্ঠ’ শীর্ষক মুজিববর্ষ স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাশেদ চৌধুরী বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে। দণ্ডিত আরেক খুনি এইচ বি এম নূর চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী কানাডায়। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি আয়োজিত গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি। পাশাপাশি এবার মানবাধিকার দিবসে র‌্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমেরিকার মতো জায়গা, যারা সব সময় ন্যায়বিচারের কথা বলে, গণতন্ত্রের কথা বলে, ভোটাধিকারের কথা বলে, মানবাধিকারের কথা বলে, কিন্তু আমাদের যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছিল, আমরা যে ন্যায়বিচার পাইনি…, তারপর যখন এই বিচার হলো, সেই খুনিদের আশ্রয় দিয়ে বসে আছে। নূরকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে কানাডা, আর খুনি রাশেদ এখনো আমেরিকায়। তাদের কাছ থেকে আমাদের আইনের শাসনের সবক শুনতে হয়, গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়, ন্যায়বিচারের কথা শুনতে হয়, সেটিই আমার অবাক লাগে।

জাতির পিতার খুনিদের ফিরিয়ে আনতে সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমি সরকারে আসার পর থেকে (যুক্তরাষ্ট্রে) যতজন প্রেসিডেন্ট এসেছেন, প্রত্যেকের কাছে বারবার অনুরোধ করেছি যে একটা সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে আপনারা কীভাবে আশ্রয় দেন, আপনাদের জুডিসিয়ারি কীভাবে আশ্রয় দেয়, কীভাবে আপনারা একটা খুনিকে আশ্রয় দেন? তাকে (রাশেদ) আজ পর্যন্ত ফেরত দিল না।

মানুষের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সবসময় সক্রিয় রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ন্যায়বিচার মানুষের প্রাপ্তি। সেটা যেন সব সময় পায় সেটা আমরা চাই। আমরা যারা পনের আগস্টে মা-বাবা হারিয়েছিলাম, আমার মতো মা-বাবা হারিয়ে যেন কাউকে বিচারের জন্য চোখের পানি ফেলতে না হয়। আমরা ভুক্তভোগী, আমরা জানি বিচার না পাওয়ার কষ্টটা কী?

অন্য সরকারগুলোর মতো আওয়ামী লীগ সরকার বিচার বিভাগে কখনো হস্তক্ষেপ করেনি দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আগে অনেক ঘটনা আছে, আপনারা জানেন। দেখা গেছে ফলস সার্টিফিকেটের ব্যবহার বা ছাত্রদলের কাঁধে হাত রেখে কাকে কী রায় দেওয়া হবে সেটা নিয়ে আলোচনা- এ রকম বহু ন্যক্কারজনক ঘটনাও দেশে ঘটেছে। আমি এটুকু বলতে পারি আমরা সরকারে আসার পর, অন্তত এই পরপর তিনবার এখন আমরা ক্ষমতায় বা এর আগে একবার ছিলাম, আমরা কিন্তু সেটা করার সুযোগ নেইনি। সব সময় ন্যায়ের পথে যেন সবাই চলতে পারে আমরা সেই ব্যবস্থা করেছি।

বিচারকদের দক্ষতা বাড়াতে দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টির কথা তুলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকো-ের পর অধ্যাদেশ জারি করে বিচারে বাধা তৈরির ইতিহাস তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমি অনেক অনেক সময় নিলাম। কারণ, আসলে বহু বছর বিচার না পেয়ে মনে অনেক দুঃখ ছিল। যা হোক, হত্যার বিচার পেয়েছি, এটিই সব থেকে বড় কথা। জাতির পিতার হত্যার বিচার হলেও নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করার কথাও বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এখন আরেকটা দায়িত্ব রয়ে গেছে। চক্রান্তটা খুঁজে বের করা। এটা একদিন বের হবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। জাতির পিতাকে হত্যার পর হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির কথাও তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। দেশের উন্নতির জন্য কাজ করতে গিয়ে অনেক ঝড় ঝাপ্টা মোকাবিলার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, কখনো সেই হেফাজতকে নিয়ে এসে তাদের দিয়ে একটা অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা, জ্বালাও-পোড়াও করা, কখনো অগ্নিসন্ত্রাস সৃষ্টি করা, নানাভাবে ব্যতিব্যস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবনে মামলা, আদালত, নির্যাতনমূলক গ্রেপ্তার তথা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক আরোপিত আইনি অভিঘাতের ওপর বিশ্লেষণী উল্লেখযোগ্য আলাদা কোনো সংকলনবদ্ধ প্রকাশনা ছিল না। এই গ্রন্থ সেই শূন্যতা কিছুটা হলেও দূর করতে সক্ষম হবে। এ ছাড়াও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং স্মারক গ্রন্থ ও স্মরণিকার সম্পাদক আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877