শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৯:৩৬ অপরাহ্ন

পরিণত মধ্যবিত্ত দরকার

পরিণত মধ্যবিত্ত দরকার

আজ ডিসেম্বর মাসের ২৫ তারিখ। শুভ বড়দিন। আবার বাংলা পৌষ মাসের ১০ তারিখ। গ্রামগঞ্জে চাষি ভাইয়েরা অগ্রহায়ণী ফসল ঘরে তুলছে। ফসল ভালো হয়েছে বলে খবর। তবে কয়েকদিন আগের বৃষ্টি ও ঝড়ে রবিশস্যের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। এ সময় মাঠে থাকে মসুরি ও খেসারি ডাল, গোল আলুসহ নানাবিধ সবজি। এসব ফসলের বেশ ক্ষতি হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে সবজির বাজারে।

এদিকে বাঙালির ব্যবসা-বাণিজ্যের খবর কী? করোনা একটু থেমেছে। চারদিকে একটু স্বস্তি নেমে এসেছে; যদিও নতুন উৎপাত ওমিক্রনের দুঃসংবাদ আমাদের আবার কিছুটা শঙ্কিত করছে। এমতাবস্থায় করোনাকালীন যেসব ব্যবসা থমকে দাঁড়িয়েছিল, বন্ধ হয়ে গিয়েছিল-সেসব ব্যবসা কি আবার দাঁড়াতে পারছে? আবার করোনাকালে যারা চুটিয়ে ব্যবসা করছিল, তাদের রমরমা ভাব কি অব্যাহত আছে?

দৃশ্যত বোঝা যাচ্ছে, করোনার সময় যারা ব্যবসা করছিল চুটিয়ে, তাদের সেই রমরমা অবস্থা অব্যাহত আছে। ওষুধের কোম্পানি, ওষুধের দোকান, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বেসরকারি হাসপাতাল, অনলাইন শপিং ইত্যাদি ব্যবসায় কোনো খামতি দেখা যাচ্ছে না। তাদের ব্যবসা যথারীতি চলছে। মুনাফা তাদের বাড়ছিল, এখনো বাড়ছে। ওই শ্রেণির ব্যবসায়ীরা গ্রাহক-ভোক্তাদের দুর্দিনে যেমন কোনো স্বস্তি দেয়নি, তেমনি আজও দিচ্ছে না।

সেবা বিষয়টি এখন কোনো ব্যবসায়ীর মাথায় নেই। বৃষ্টি হচ্ছে, অফিসের সময় আগত, দারুণ রোদে পথচারী ক্লান্ত-এমন অবস্থায় ‘অশিক্ষিত’ রিকশাওলারা যেমন যাচ্ছেতাই ভাড়া দাবি করে, তেমনি করোনাকালে একশ্রেণির ব্যবসায়ীও তাই করেছে। সুদিন-দুর্দিন বলে কোনো কিছু তাদের কাছে নেই। তারা অপেক্ষায় থাকে মওকার। ঘটনাক্রমে সেই ‘মওকা’ এখনো কার্যকর।

এদিকে করোনার সময়ে যারা কোনো ব্যবসা করতে পারেনি, যাদের ব্যবসা ছিল বন্ধ অথবা আংশিক বন্ধ, তারা নতুন সাজে সেজেছে। ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার মনোভাব সর্বত্র লক্ষণীয়। কী পরিবহণ খাত, কী আবাসন খাত, কী হোটেল-রেস্তোরাঁর ব্যবসা, কী বিনোদনমূলক কার্যক্রম, কী ফুল-পুষ্পের কারবার-পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে রমরমা ভাব। অথচ করোনার সময় তারা ছিল ম্রিয়মাণ। এই যেমন বিমান পরিবহণ ও ভাড়া।

পত্রিকার খবর বেরুচ্ছে, বিদেশগামী প্রবাসী শ্রমিকদের এখন মধ্যপ্রাচ্যে যেতে হচ্ছে দেড়গুণ অথবা দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে। টিকিট নেই, বুকিং পাওয়া যায় না। ব্ল্যাক মার্কেটিং হচ্ছে টিকিটের। মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কোনো কাজে আসেনি। বিমান কোম্পানিগুলো জানে, এখন শ্রমিকরা বিদেশে যাবেই। যাবে কর্মস্থলে। চাকরির বাজার খুলেছে। এটা বিরাট সুযোগ। অনেকদিন ব্যবসা হয়নি। অতএব, চাহিদার সুযোগ পুরোপুরি নিতে হবে।

শুধু বিমান কোম্পানি কেন; বাস কোম্পানি, ল্যান্ড কোম্পানি পর্যন্ত সবাই চাহিদার সুযোগ নেয়। ঈদে-পার্বণে, সরকারি ছুটিতে তারা ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। যাত্রীদের যেতেই হবে। অতএব, টাকাটা বড় কথা নয়। এটা এক নতুন বাজারি নীতি, বাজার অর্থনীতি। আগে টিকিটের হার ছিল এক এবং তা সব সময়ের জন্য, পুরো বছরের জন্য। এখন তা নয়। এখন ভাড়া সকাল-বিকাল বাড়ে-কমে। ভীষণ অস্থিতিশীল বাজার। গ্রাহক-পর্যটকদের এটা সহ্য করেই চলতে হয়।

এখন এ মুহূর্তে দেশের ভেতরে পরিবহণের ভীষণ চাহিদা চলছে। ১৬ তারিখ ছিল বিজয় দিবসের ছুটি। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। এর সঙ্গে দু-একদিন ছুটি নিলে বেশ বেড়ানো হয়ে যায়। তাই কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত, পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, সিলেট, খুলনার সুন্দরবন, পটুয়াখালীর সমুদ্রসৈকতে যাওয়ার জন্য মানুষ ছিল মুখিয়ে।

এক-দেড় বছর মানুষ ছিল ঘরবন্দি। ছেলেমেয়েদের স্কুল নেই। তাদের কোনো খেলাধুলার ব্যবস্থা নেই। নেই বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা। বাবা-মারা ছিলেন ভীষণ চাপের মুখে। ছেলেমেয়েরা বেরিয়ে পড়তে চায়। অভিভাবকরাও চায়। মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তরা চায় একটু দম ফেলতে। শহরের এ দূষিত আবহাওয়া থেকে তারা অল্প সময়ের জন্য মুক্তি চায়। এই তো সুযোগ। বাসওয়ালা, লঞ্চওয়ালা পুরোপুরি সুযোগ নেয়। টিকিটের মূল্য চড়া করে দেয়। একসঙ্গে এত লোক ঢাকা থেকে বাইরে যাবে-ভীষণ চাপ বাস পরিবহণের ওপর।

ঈদের সময় যেমন লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে একই সময়ে গ্রামের বাড়ি যায়, আবার এক সময়ে একই সঙ্গে তারা ফেরে; ঠিক তেমনি বিজয় দিবসের ছুটিতেও তা ঘটে। বাসওয়ালা, লঞ্চওয়ালা সুযোগ ছাড়ে না। ব্যবসা ছাড়েনি হোটেলওয়ালা, মোটেলওয়ালা। রেস্টুরেন্টের মালিকরা কি কম গেছেন? না, তারাও সুযোগ বুঝে ভ্রমণকারীদের ওপর মূল্যের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন।

কাগজে খবর বেরিয়েছে- কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়িতে ‘ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই’ অবস্থা। হাজার হাজার, লাখ লাখ ভ্রমণকারী একই সময়ে ওইসব জায়গায় গিয়ে হাজির। হোটেল, মোটেলে যত লোকের থাকার ব্যবস্থা তার দ্বিগুণ, তিনগুণ লোক গিয়ে হাজির। কারও বুকিং আছে, কারও নেই। যাদের নেই তাদের কপালে দুর্দশা নেমে আসে। এক টাকার সেবার দাম হয় ৪ টাকা, ৫ টাকা। তাও ঠাঁই নেই কোথাও।

বাড়িঘর খালি করে মালিকরা সেখানে হোটেল ব্যবসা শুরু করে। একশ্রেণির দালাল অগ্রিম বুকিং দিয়ে হোটেল রুম নিয়ন্ত্রণে নিয়ে রাখে। উচ্চ দামে তারা তা ছাড়ে। খাবার দোকানেও তাই। খাবার নেই। এত লোকের খাবার আসবে কোত্থেকে? রেস্টুরেন্ট, হোটেলের মালিকরা নড়েচড়ে বসে। এক টাকার খাবার বিক্রি করে ৪ টাকা, ৫ টাকায়।

সরকারি সংস্থাগুলো চেষ্টা করে পরিস্থিতি সামাল দিতে। কিন্তু এতে কী হয়? শত হোক চাহিদা (ডিমান্ড) অনেক বেশি, সরবরাহ (সাপ্লাই) কম। এতে যা হওয়ার তাই হয়েছে। চাহিদা-সরবরাহে সামঞ্জস্য থাকার পরও ব্যবসায়ীরা যেখানে গ্রাহকদের রেহাই দেয় না, সেখানে চাহিদা-সরবরাহের মধ্যে অসামঞ্জস্য দেখা দেওয়ায় তারা সারা বছরের কামাই এক সপ্তাহেই করে নেয়। দেড় বছর তারা ক্ষতি-লোকসান দিয়েছে। কর্মচারীদের বিদায় করেছে। ব্যবসা বন্ধ রেখেছে। নিজেরা সঞ্চয় ভেঙ্গে খেয়েছে।

অতএব, কিসের ব্যবসায়িক রীতিনীতি? যা পার লুটে নাও-এই যেন নীতি। এর ফলে উচ্চমূল্যের জন্য, হোটেল রুম না পাওয়ার জন্য ভ্রমণকারীরা গাড়িতে রাত কাটিয়েছে। ফুটপাতে রাত কাটিয়েছে। যেখানে পেরেছে, সেখানে রাত কাটিয়েছে। কী দুর্দশা শিশুদের, বাচ্চাদের। এসব দুঃখের, কষ্টের কোনো বর্ণনা হয় না। এ দুঃখ-কষ্টের মধ্যেই একশ্রেণির ব্যববসায়ী, দালাল, বাটপাররা পয়সা কামিয়ে নিয়েছে। এবারের বিজয় দিবস তাদের ব্যবসা করার অবাধ সুযোগ করে দিয়েছে।

বিজয় দিবস তো শুধু বেড়ানোর জন্য নয়; মহান বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক-সামাজিক অনেক কর্মসূচি থাকে। মানুষ শহিদ মিনারে, বুদ্ধিজীবীর মাজারে, সাভার স্মৃতি সৌধে যায় শ্রদ্ধা জানাতে, কৃতজ্ঞতা জানাতে। মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের স্মরণ করতে। বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যায় মানুষ। আজকাল এসব কর্মসূচিতে লাগে প্রচুর ফুল/পুষ্প। ফুল লাগে বিয়ের অনুষ্ঠানে। নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে আজকাল ফুল ব্যবহারের রীতি চালু হয়েছে। এসব কারণে ফুলের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ফুল চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে।

এটি আগে ছিল না। ফুলের বাণিজ্যিক চাষ ইদানীংকালের ঘটনা। কিছুদিন আগেও ফুল ব্যবহৃত হতো সীমিত পরিসরে। হিন্দু সম্প্রদায়ের নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ফুল লাগে। তার জন্য বাড়ির বাগান, ফুলের গাছই যথেষ্ট ছিল। বাজারের ফুল লাগত না, বাজারে ফুল বিক্রিও হতো না। এ ছাড়া ফুল প্রেমিকরা ফুল সংগ্রহ করত নিজস্ব উদ্যোগে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে গেছে। ফুল এখন সবার প্রিয়, যত্রতত্র ফুল ব্যবহার হয়।

করোনা অতিমারিকালে ফুলের ব্যবহার কমে যায়। সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান সীমিত হয়ে পড়ে। বিয়ে-শাদির সংখ্যা হ্রাস পায়। মানুষের মধ্যে মেলামেশা হ্রাস পায়। এতে ফুলের ব্যবহার হ্রাস পায়। এর প্রভাব পড়ে বাজারে। ফুলের দোকান কোনো কোনো ক্ষেত্রে বন্ধ হয়। কেউ কেউ দোকান খোলা রাখে; কিন্তু বেচাকেনা ছিল সীমিত। করোনার ভয়ানক আক্রমণ থেকে কিছুটা নিস্তার লাভ করায় মানুষ আবার ফুলের ব্যবহার শুরু করেছে।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, জনজীবনে স্বস্তি নেমে এসেছে, তাই ফুলের ব্যবহার আবার বাড়ছে। ফল? ফল হচ্ছে, ফুলের বাণিজ্যিক চাষ বাড়ছে। ফুলের ব্যবসা ধীরে ধীরে জমজমাট হচ্ছে। একটি দৈনিকে দেখলাম, যশোরের গদখালিতে ফুল উৎপাদন যেমন বেড়েছে, বেচাকেনাও বেড়েছে।

ফুলের চাহিদা বেশি দেখে চাষিরা ফুলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। হোটেল, মোটেল, পরিবহন মালিকদের মতো ফুলচাষিরাও ফুলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। খবরে প্রকাশ, এক-দুই দিনেই লাখ লাখ টাকার ফুল গদখালিতে বিক্রি হচ্ছে। এটা শুধু গদখালির খবর। ফুল বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এখন ঢাকার আশপাশেও উৎপাদিত হয়। সেখানেও একই অবস্থা। কাগজের খবরমতে, সবচেয়ে বেশি চাহিদা গাঁদা ফুলের। এর দামও বেশি। এক হাজার গাঁদা ফুলের দাম ৮০০-৯০০ টাকা। আগে এর দাম ছিল মাত্র ২০০-৩০০ টাকা।

গোলাপ একেকটির দাম ৬ টাকা; আগে এর দাম ছিল দুই টাকা মাত্র। রজনীগন্ধা বিক্রি হচ্ছে ৮-১০ টাকায়। গ্লাডিউলাস, জেরবেরা ইত্যাদির দাম অনেক বেড়েছে। ফুলের ব্যবসায়ীরা মনে হয় তাদের অতীতের লোকসান অন্যান্য ব্যবসায়ীর মতো পুষিয়ে নিতে চাইছে। তাতে আর দোষ কোথায়? সব ব্যবসায়ী যেমন ‘মওকার’ অপেক্ষায় থাকে, ফুলের ব্যবসায়ীরাও তাই করবে।

সামনে ইংরেজি নববর্ষ, পবিত্র ক্রিসমাস। ফেব্রুয়ারি মাস আমাদের ভাষার মাস। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ তারিখে। মাসজুড়ে হবে নানা সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান। পরের মাস মার্চ মাস। আমাদের স্বাধীনতার মাস। রক্ত দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতা। এ মাসেও অনুষ্ঠিত হবে নানা অনুষ্ঠান। এপ্রিলে তো হবেই। এপ্রিল মাসে পড়বে আমাদের বাংলা নববর্ষ। হবে নানা অনুষ্ঠান।

এসবের কথা কেন বলছি? বলছি বাঙালির অনুষ্ঠান, বিজয়ের অনুষ্ঠান, স্বাধীনতার অনুষ্ঠান, পহেলা ফাল্গুনের অনুষ্ঠান মানেই ফুলের কদর। তার মানেই ফুলের ব্যবসা বাড়বে। গদখালিসহ সারা দেশের ফুলচাষি এসবের জন্য অধীর আগ্রহে দিন কাটাচ্ছেন। ব্যবসা হবে, ফুলের ব্যবসা।

ফুলের ব্যবসার হিসাব আমাদের জিডিপির হিসাবায়নে ব্যবহৃত হয় কিনা জানি না। জিডিপির হিসাবের ভিত্তি বছর পরিবর্তনের ফলে অনেক নতুন নতুন খাত যোগ হয়েছে। নতুন নতুন কৃষি ফসল যোগ হয়েছে। নতুন নতুন সেবা যোগ হয়েছে। এর মধ্যে ফুলের ব্যবসা, ফুলের চাষ যোগ হয়েছে কিনা জানি না। না হয়ে থাকলে অচিরেই তা যোগ হবে। কারণ ফুলের কদর বাড়ছে, ফুলের চাষ বাড়ছে, ফুলের ব্যবহার বাড়ছে। মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, বিত্তশালী লোকের সংখ্যা যত বাড়ছে এবং যত বাড়বে, ততই বাড়বে ফুলের ব্যবহার। শুধু ফুল নয়, মধ্যবিত্তের সঙ্গে সম্পর্ক আছে আরও কিছু নতুন ব্যবসার।

ঢাকা শহরে আগে এত মিষ্টির দোকান ছিল না। গুটিকয়েক মিষ্টির দোকান ছিল। এখন মিষ্টির দোকানের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে মিষ্টির ধরন। হরেক রকমের মিষ্টিতে ভর্তি দোকান। প্রচুর দাম; কিন্তু ক্রেতার অভাব নেই। এরা কারা? এরা বিকাশমান মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত। বাংলাদেশ যেমন দেশ হিসাবে ‘অনুন্নত’ দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হয়েছে; ঠিক তেমনি প্রচুর সংখ্যক মানুষ অর্থের নিরিখে উপরে উঠছে।

এরাই হোটেল, মোটেল, বিলাসবহুল পরিবহণ, রেস্তোরাঁ, ফুল ইত্যাদির ক্রেতা। এরাই অনলাইন শপিং করে, এরাই ‘ব্র্যান্ড’-এর দোকানে যায়। বড় বড় শপিং মলে এরাই যায়। এসব মধ্যবিত্ত কোত্থেকে আসছে? এরা সরকারি চাকরিজীবী, স্বনিয়োজিত ব্যক্তি, উকিল-মোক্তার, ডাক্তার-ব্যারিস্টার, অ্যাকাউন্টেন্ট, আর্কিটেক্ট, অডিটর, ব্যাংকার, বিমাবিদ, শিক্ষক, অধ্যাপক, সাংবাদিক ইত্যাদি শ্রেণির লোক।

এ উদীয়মান মধ্যবিত্তই এখন বাজার (মার্কেট)। তাদের কিছুটা ক্রয়ক্ষমতা হয়েছে। তারাই বাজারে যায়। কাঁচাবাজার, মাছ-মাংসের বাজার, ফলমূলের বাজারের ক্রেতা-ভোক্তা তারাই। ফ্ল্যাট-জমির ক্রেতা তারাই। চিনি, সয়াবিনের ক্রেতা তারাই। বস্তুত মধ্যবিত্ত বা শুধু ঢাকাবাসী যা ভোগ করে, খায়, ক্রয় করে; তা দেশের মোট ভোগের প্রায় অর্ধেক। তাদেরই ব্যাংক-আমানত, তাদেরই সঞ্চয়পত্র।

এ শ্রেণিতে যত বেশি মানুষ উন্নীত হবে, তত বেশি হবে দেশের উন্নতি। তবে দরকার পরিণত মধ্যবিত্ত শ্রেণি, যাদের মৌলিক কতগুলো মূল্যবোধ থাকবে। গণতন্ত্রকামী, স্বচ্ছতাপ্রেমী, কুসংস্কারহীন, সংস্কৃতিমনা, বিজ্ঞনমনস্ক মধ্যবিত্ত দরকার। গ্রাম্যতার ঊর্ধ্বে ওঠার মধ্যবিত্ত দরকার; যারা ফুল ভালোবাসবে, ফুলের মতো পবিত্র একটা সমাজ গড়ায় ব্রতী হবে।

ড. আর এম দেবনাথ : অর্থনীতি বিশ্লেষক; সাবেক শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877