স্বদেশ ডেস্ক:
ষাটোর্ধ্ব প্রতিবন্ধী মুন্সী মাসুদুজ্জামান পলাশ (৬১) তার ভাইয়ের সংসারে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত পেলেও রাত কাটান হাঁটু সমান উঁচু পলিথিনের ছাউনির ছোট্ট খুপড়ি ঘরে। যেখানে ঢুকতে হয় বাচ্চাদের মতো হামাগুড়ি দিয়ে। ঝড়-বৃষ্টি আর প্রচন্ড শীত ও কুয়াশার মধ্যেও পলাশ আছেন ওই ছোট্ট খুঁপড়ি ঘরে। আর ওই ছোট্ট খুপড়ি ঘরকে কোনো মানুষের বাড়ি নয় নয় বরং কোনো ক্ষুদ্রাকৃতির পশুর আবাসস্থল বলে মনে হয়। খোলা আকাশের নিচে হাঁটু সমান উঁচু ওই খুঁপড়ি ঘরটি পলিথিন, চটের বস্তা, ভাঙ্গা ইট ও বাঁশ দিয়ে তৈরি। ছোট্ট এ খুপড়ি ঘরটি আবার নির্মাণ করেছেন তিনি নিজেই।
এখন এ খুপড়ি ঘরেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন এ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। শীত নিবারণের জন্য তার তেমন কোনো গরম কাপড়ও নেই। অথচ সমাজের কোনো মানুষ তার দুঃখ দেখেও দেখে না। এ ষাটোর্ধ্ব প্রতিবন্ধী মুন্সী মাসুদুজ্জামান পলাশের বাড়ি খুলনার পাইকগাছার গদাইপুর ইউনিয়নের মেলেকপুরাইকাটী গ্রামে। বাবা মৃত মুন্সী আমজাদ আহম্মেদ। তিন ভাই ও দু’বোনদের মধ্যে পলাশ বাবার দ্বিতীয় ছেলে। তিনি জন্ম থেকেই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী আর তার কথায়ও রয়েছে খানিকটা জড়তা। কোনো কথাই ঠিক মতো বলতে পারেন না তিনি। এক সময় তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা মোটামুটি ভালো ছিল। কিন্তু, বর্তমানে আগের ভালো অবস্থা না থাকায় কোনো মতে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন এ ষাটোর্ধ্ব প্রতিবন্ধী।
প্রতিবন্ধী হওয়াতে তার দ্বারা সংসার করাও হয়নি। কেউ তার ওপর ভরসা করে বিবাহ বন্ধনেও জড়াতে চাননি। আর এ কারণেই হয়তো একা থাকতে ভালোবাসেন তিনি। খুব একটা কথাও বলেন না এ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। সব সময় শিশুদের সাথে হেসে খেলে সময় কাটাতে পছন্দ করেন তিনি। কোনো প্রশ্ন করলেও উত্তর না দিয়েই মুখের দিকে তাকিয়ে শুধু অসহায়ত্বের জানানদেন আর হাসেন। আধুনিক সময়েও যানবাহনে চড়তে ভয় পান তিনি। তাই পায়ে হেঁটেই গ্রামের সব স্থানে বিচরণ করেন তিনি। ষাটোর্ধ এ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নিজে মানবেতর জীবনযাপন করলেও কখনো অন্যের কাছে সাহায্য পাবার আশায় হাত বাড়ায় না। এ দীর্ঘ সময়ে কেউ তার পাশেও দাঁড়ায়নি। সত্যি কথা বলতে কি তাকে দেখার মতো কেউ নেই। তবুও সমাজের একজন মানুষ হিসেবে তার প্রতি আমাদের কি কোনো দায়িত্ব নেই। আমরা কি পারি না বিজয়ের মাসে অসহায় এ প্রতিবন্ধী মানুটার পাশে দাঁড়িয়ে তার মুখের হাঁসি অটুট রাখতে?
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম জানান, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী পলাশের মানবেতর জীবন যাপনের কথা জানতে পেরে তাৎক্ষনিকভাবে তার ঘর বানানোর জন্য টিন আর শীত নিবারণের জন্য কম্বলের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। দ্রুত সেগুলো তার পরিবারের সদস্যদের কাছে পৌঁছাবে বলেও জানান তিনি। এদিকে স্থানীয়রাও সমাজের বিত্তবানদের কাছে প্রতিবন্ধী পলাশের সহায়তা চেয়েছেন।