শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৭:৪৩ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
অর্থনৈতিক খাতে ঝুঁকি দেখছে সরকার

অর্থনৈতিক খাতে ঝুঁকি দেখছে সরকার

স্বদেশ ডেস্ক:

বৈশ্বিক করোনা মহামারী দেশের অর্থনীতির গতিতে প্রতিবন্ধক তৈরি করেছে। করোনার কথা মাথায় রেখেই চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়নি। আগের অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হলেও সেটিও অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে রেমিট্যান্সে নিম্নগতি। রপ্তানির তুলনায় আমদানি বাড়ছে। ফলে বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি। অন্যদিকে কমে যাচ্ছে টাকার মান। অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে দেশের অর্থনৈতিক খাতে এসব ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে বলে বিষয়টি ভাবাচ্ছে সরকারকে।

এরই মধ্যে করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রভাব দেশের অর্থনৈতিক খাতেও পড়ার আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। এসব শঙ্কা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে সাত মাসেরও বেশি সময় পর অর্থনৈতিক ও বাজেট খাত নিয়ে নীতিনির্ধারণী দুটি বৈঠক আহ্বান করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। একটি বৈঠক হচ্ছে ‘আর্থিক, মুদ্রা, ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল’ সভা এবং অন্যটি বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির বৈঠক। অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বৈঠক দুটি আগামীকাল বুধবার হওয়ার কথা।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, দেশ থেকে রপ্তানি কিছুটা বাড়লেও আগামী ক’মাসে তা কোন দিকে মোড় নেবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ ইউরোপে করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন এখন প্রায় মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। পরিস্থিতি যা দাঁড়াচ্ছে, তাতে ইইউ দেশগুলো যদি লকডাউনে চলে যায় তাহলে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক রপ্তানি মারাত্মক ব্যাহত হবে।

জানা গেছে, কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভায় সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি), রপ্তানি, আমদানি, রাজস্ব আদায়, মূল্যস্ফীতি, রেমিট্যান্সসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। অন্যদিকে বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন পরিস্থিতি ও জিডিপি নিয়ে আলোচনা হবে।

এদিকে এনবিআরের তথ্য-উপাত্ত বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে

১৩ হাজার ৯৯ কোটি টাকা। এই সময়ে শুল্ক-কর আদায়ের লক্ষ্য ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ১ লাখ ২৬৭ কোটি টাকা। লক্ষ্য পূরণ না হলেও রাজস্ব আদায়ে গতবারের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।

বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত প্রবাসী আয়েও ধাক্কা লেগেছে। ১৮ মাসের মধ্যে গত নভেম্বরে সর্বনিম্ন প্রবাসী আয় এসেছে। গতকাল সোমবার ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বর্তমানে রেমিট্যান্সে (প্রবাসী আয়ে) আমরা একটু পিছিয়ে আছি। রেমিট্যান্স এখন যেভাবে এগোচ্ছে সেভাবে এগোলে ২১ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত আশা করতে পারি। সামনে দুটি ঈদ আছে। ঈদের সময় রেমিট্যান্স বেশি আসে, সেটি বাদ দিয়েই ২১ বিলিয়ন ডলার প্রত্যাশা করছি। যেই রেমিট্যান্স প্রত্যাশা করছি সেটি যদি পেয়ে যাই তাহলে এ বছর আশা করি ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স অর্জন করতে পারব।

সূত্র বলছে, রেমিট্যান্স কমলেও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের আরেক বড় খাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে। গত নভেম্বরে ৪০৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি।

চলতি বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তা অর্জন দুরূহ বলে মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলেছে, জিডিপি হতে পারে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। আর ১২ মাসের গড় হিসাবে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

জিডিপি প্রবৃদ্ধির বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, কালকের বৈঠকে জিডিপি নিয়ে আলোচনা করা হলেও এটি সংশোধনের সম্ভাবনা কম। কয়েক মাস পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877