তারা তিনজনই পেশাদার খুনি। টাকার বিনিময়ে চুক্তিতে খুন করাই ছিল তাদের পেশা। আর এসব খুনের নির্দেশনা আসত দুবাই থেকে। সেখানে বসবাসকারী বাংলাদেশি এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর হয়ে দেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাত তারা। তবে গ্রুপটির শেষ রক্ষা হয়নি। ওই শীর্ষ সন্ত্রাসীর তিন সহযোগীকে একে ২২-এর মতো ভারী অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
পেশাদার সন্ত্রাসীদের হাতে একে ২২-এর মতো ভারী অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে গোয়েন্দা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। তারা হলো- খান মোহাম্মদ ফয়সাল (৩৮), জিয়াউল আবেদীন জুয়েল (৪৫) ও জাহিদ আল আবেদিন রুবেল (৪০)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি একে-২২ রাইফেল, চারটি বিদেশি পিস্তল, একটি বিদেশি রিভলবার ও ৪৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। স্বয়ংক্রিয় একে-২২ রাইফেলটি যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি। গ্রেপ্তারদের খিলগাঁও থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় আদালতে পাঠায় ডিবি পুলিশ। আদালত তাদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
এর আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে ওই তিন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানান ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মো. মাহবুব আলম। গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিবি পুলিশ জানায়, ওই তিনজনের প্রত্যেকের নামে ৩-৪টি করে মামলা রয়েছে। তাদের মধ্যে জুয়েল ও রুবেল সম্পর্কে ভাই। তাদের আরেক ভাই লিয়ন ৭ বছর আগে ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হয়। ডিবি জানায়, সন্ত্রাসী গ্রুপটি দুবাইয়ে থাকা ওই শীর্ষ সন্ত্রাসীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করত। তাদের মূল কাজ ছিল ভাড়ায় খুন ও চাঁদাবাজি।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডিবির (পূর্ব) খিলগাঁও জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহিদুর রহমান রিপন আমাদের সময়কে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই করা হবে।
গত শুক্রবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খিলগাঁও এলাকার ২৬৯/এ/ক সিপাহিবাগের ‘ফাইভ স্টার নিবাস’ নামের বাসার সামনে থেকে প্রথমে ফয়সালকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই বাসার একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে জুয়েল ও রুবেলকে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযান চালানোর সময় কয়েকজন পালিয়ে যায়। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।
সূত্র জানায়, গ্রেপ্তাররা গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য দিয়েছে। এর মধ্যে বড় ধরনের সংঘাত সৃষ্টির জন্য অস্ত্র জড়ো করা হয়েছে বলে তারা জানিয়েছে। তার আগেই তাদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে প্রাণহানির মতো ঘটনা ঠেকানো সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন ডিবি পুলিশের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া তারা কতগুলো হত্যাকা-ে জড়িত ছিলÑ সে বিষয়েও তথ্য দিচ্ছে।