রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১১ অপরাহ্ন

ওমিক্রন নিয়ে রপ্তানিমুখী শিল্পে ফের আতঙ্ক

ওমিক্রন নিয়ে রপ্তানিমুখী শিল্পে ফের আতঙ্ক

স্বদেশ ডেস্ক:

করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন আবারও রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, সংক্রমণ ঠেকাতে আমদানিকারক দেশগুলো এখন ঠিক করবে তারা পণ্য কিনবে কিনা। আবার দেশেও যদি লকডাউনের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত আসে, তা হলে রপ্তানিমুখী শিল্প ফের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তবে ওমিক্রন মোকাবিলায় নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন তারা।

শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে ইউরোপের দেশগুলোতে আবারও আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ লকডাউন হলে আগামী মৌসুমের ক্রয়াদেশ কমবে। পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হলে ক্রয়াদেশ স্থগিতও হতে পারে। তবে বিদেশি ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা এখন পর্যন্ত নেতিবাচক কোনো বার্তা দেননি। জানা গেছে, ইতিমধ্যে নেদারল্যান্ডস, জার্মানিসহ কয়েকটি দেশ আংশিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ইউরোপের অন্যান্য দেশও কড়াকড়ি আরোপ করলে বড় দিনের বিক্রিতে ধস নামবে। সেটি হলে চলমান কিছু ক্রয়াদেশ স্থগিত হতে পারে। আবার পণ্য রপ্তানির পর দেরিতে অর্থ পরিশোধ করতে পারেন ক্রেতারা। বর্তমানে ক্রয়াদেশ আসার যে গতি রয়েছে, সেটিও কমতে পারে।

এ বিষয়ে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত ভালো, আতঙ্কিত হওয়ার মতো দেখছি না। বিগত দিনেও আমরা করোনা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। নিয়ন্ত্রণে আনতেও সক্ষম হয়েছি। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন যেভাবে হানা দিচ্ছে তাতে ক্রেতা

দেশগুলোর ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। সেখানে লকডাউন চললে আমদানি রপ্তানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে দেশীয় শিল্প ও কর্মীদের রক্ষায় ১৭ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে পারলে আমরা ওমিক্রন মোকাবিলা করতে সক্ষম হব।

নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি ফজলে শামী এহসান বলেন, করোনা মহামারী বিশ্ব অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করেছে। বাংলাদেশও এর বাইরে ছিল না। এই ধাক্কা যখন কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছি, তার মধ্যে নতুন ধাক্কা আসছে। আতঙ্কিত না হয়ে এ বিপর্যয় মোকাবিলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ধাক্কা কাটিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ১ হাজার ২৬২ কোটি ডলার বা ১ লাখ ৭ হাজার ২৭০ কোটি টাকার তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি। গত বছর ওই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৪৫ কোটি ডলারের পোশাক।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরিস্থিতি মোকাবিলায় পোশাক কারখানাগুলোর প্রতি ১৭ দফা নির্দেশনা দিয়েছে বিজিএমইএ। এ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কারখানায় উৎপাদন শুরু ও ছুটির সময় শ্রমিকদের ভিড় এড়ানোর জন্য ভিন্ন ভিন্ন সময় নির্ধারণে জোর দিতে হবে। তাছাড়া শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের ব্যবস্থা করা দরকার। সম্ভব হলে বিভিন্ন বিভাগের কর্মঘণ্টার জন্য আলাদা শিফটের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কারখানায় প্রবেশের সময় শ্রমিকদের শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ এবং প্রয়োজনে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হবে। কারখানায় প্রবেশের সময় প্রধান ফটকসংলগ্ন এলাকায় শ্রমিকদের হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত সাবানপানির ব্যবস্থা রাখতে হবে। এ ছাড়া কাজের জায়গায় শ্রমিকদের ভিড় এড়িয়ে চলার জন্য উৎসাহিত করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দুপুরের খাবারের বিরতিসহ অন্যান্য বিরতির সময় বিভিন্ন বিভাগের শ্রমিকদের আলাদা আলাদা সময় নির্ধারণ করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে সার্বক্ষণিকভাবে শ্রমিক-কর্মচারীদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতেও সদস্য কারখানাগুলোর প্রতি এ নির্দেশনা দিয়েছে বিজিএমইএ। এ ছাড়া সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও অন্যান্য লোকসমাগম এড়িয়ে চলতে শ্রমিকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, করোনা সংক্রমণের লক্ষণ থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মীকে আইসোলেশনে রাখতে হবে। তার নমুনা পরীক্ষায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে নিতে হবে সহায়তার ব্যবস্থা। পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ হলে রোগীকে আইসোলেশনের পাশাপাশি তার সংস্পর্শে আসা অন্যদের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করতে হবে কারখানা কর্তৃপক্ষকে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877