বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৪:১৭ পূর্বাহ্ন

হাড় ক্ষয় রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা

হাড় ক্ষয় রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা

ডা. শাহজাদা সেলিম: অস্টিওপরোসিস বা হাড়ক্ষয় বলতে শরীরে হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়াকে বুঝায়। অস্টিওপরোটিক হাড় অনেকটা মৌচাকের মতো হয়ে যায়। এতে হাড় ঝাঁজরা বা ফুলকো হয়ে যায়। এতে হাড় অতি দ্রুত ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। মারাত্মক হাড়ক্ষয়ে হাঁচি বা কাশি দিলেও তা ভেঙে যেতে পারে।

পঞ্চাশ বছর পেরনোর পর থেকে শরীরের হাড়ক্ষয় বা এর লক্ষণগুলো প্রতিভাত হতে থাকে। এর শুরু অনেক আগে থেকেই হতে থাকে। পুরুষ বা মহিলার দেহের হাড় সাধারণত ২৮ বছর বয়স পর্যন্ত ঘনত্বে বাড়ে; ৩৪ বছর পর্যন্ত তা বজায় থাকে। এরপর থেকে হাড়ক্ষয় হতে থাকে। যাদের হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বেশি তাদের হাড়ের ঘনত্ব দ্রুত কমতে থাকে। মহিলাদের মাসিক-পরবর্তী সময়ে হাড়ক্ষয়ের গতি বেগবান হয়। এ ছাড়া অনেক কারণ বা স্বাস্থ্য ঝুঁকি হাড়ক্ষয়ের আশঙ্কা বৃদ্ধি করতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩০ শতাংশ রজঃনিবৃত মহিলা হাড়ক্ষয়ে আক্রান্ত। ইউরোপের চিত্রও অনেকটা এমনই। অন্ততপক্ষে ৪০ শতাংশ মহিলা ও ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ পুরুষ তাদের জীবদ্দশার বাকি সময়ে স্বল্প আঘাতে হাড় ভাঙার শিকার হন (যা হাড়ক্ষয়ের কারণেই হয়ে থাকে)। যাদের একবার হাড় ভাঙার ঘটনা ঘটে, তাদের পরে হাড় ভাঙার ঝুঁকি অনেকগুণ বেড়ে যায়। একবার পাঁজরের হাড় ভাঙলে কোমরের হাড় ভাঙার আশঙ্কা ২-৩ গুণ বৃদ্ধি পায় এবং ঊরু ও হাড় ভাঙার আশঙ্কা ১-৪ গুণ বাড়ে। বাংলাদেশে মহিলা-পুরুষের মাঝে হাড়ক্ষয়ের হার ও ঝুঁকির উপস্থিতির তথ্য অপ্রতুল।

হাড়ক্ষয়ের ঝুঁকি

অসংশোধনযোগ্য ঝুঁকি:-

* বয়োবৃদ্ধি

* স্ত্রী লিঙ্গ

* জিনগত ত্রুটি

* অপারেশনের কারণে ডিম্বাশয় না থাকা

* হায়পোগোনাডিজম (পুরুষ ও মহিলার)

* অতি খর্বাকৃতি

সংশোধনযোগ্য ঝুঁকি

* ভিটামিন ডির ঘাটতি

* ধূমপান

* অপুষ্টি (ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন এ, কে ইত্যাদি)

* ক্ষীণকায় দৈহিক আকার

* আমিষনির্ভর খাদ্যাভ্যাস

* বেশি বয়সে অতিরিক্ত চা, কফি, চকোলেট গ্রহণের অভ্যাস।

* খাদ্যে বা বাতাসে ভারী ধাতু

* কোমল পানীয় ও মদ্যপান

মেডিকেল ঝুঁকি

* দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা

* স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন (বাংলাদেশের রোগীদের মাঝে এটি খুব ব্যাপক; বিশেষ করে অস্বীকৃত/আস্বীকৃতদের দ্বারা নির্দেশিত হয়ে যারা ওষুধ সেবন করছেন। প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির (কবিরাজি, আয়ুর্বেদি, হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ইত্যাদি) মধ্যে স্টেরয়েডের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি।)

*অন্যান্য হরমোনজনিত রোগ: হাইপারথাইরয়ডিজম, হাইপারপ্যারাথাইরয়ডিজম, কুসিং সিন্ড্রম, ডায়াবেটিস, এক্রমেগালি, অ্যাডিসন রোগ, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, এসএলই, কিডনি অকার্যকারিতা ইত্যাদি।

উপসর্গ: প্রথমত কোনো শারীরিক লক্ষণ না-ও থাকতে পারে। কোমরে বা পিঠে বা অন্য কোথাও ব্যথা, বিশেষ করে তা ব্যথানাশকে কমেছে না, এমন চরিত্রের। কারও কারও দৈহিক উচ্চতা কমে যাবে, কুঁজো হয়ে যাওয়া বা সামনে ঝুঁকে থাকা। সঙ্গোপনে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাপার হলো, মেরুদ-ে ফাটল বা চিড় ধরা এবং ঠুনকো আঘাতেই হাড় ভাঙা।

শনাক্তকরণ: অনেক রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার হতে পারে: কিছু ঘনত্ব পরিমাপের জন্য, কিছু আবার ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করার জন্য। বিএমডি পরীক্ষা এ কাজে সবচেয়ে ভালো।

চিকিৎসা: এ রোগে প্রধান ও প্রথম পদক্ষেপ হবে ঝুঁকি শনাক্তকরণ, সম্ভব হলে তা রহিত করা। বেশ ওষুধ পাওয়া যায় সেগুলোর কোনো একটি নির্দিষ্ট রোগিণী বা রোগীর জন্য প্রযোজ্য হতে পারে।

যেহেতু হাড়ক্ষয় (অস্টিওপরোসিস) একবার হলে আর পেছন দিকে যাওয়ার আশঙ্কা ক্ষীণ, তাই একে আগেভাগেই রোধ করার জাতীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসূচি নিতে হবে। এর অংশ হিসেবে কারা কতটুকু ঝুঁকিতে আছেন বা কারা এরই মধ্যে হাড়ক্ষয়ে ভুগছেন, তা নির্ধারণ করতে হবে এবং উপযোগী চিকিৎসা নির্বাচন ও প্রয়োগ করতে হবে।

হাড় ক্ষয় রোধে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলোর বিবেচনা করা যেতে পারে:Ñ

* নিয়মিত ব্যায়াম

* স্টেরয়েডসহ ক্ষতিকারক ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকা

* পুষ্টি নিশ্চিতকরণ

* ধূমপান ত্যাগ

* প্রয়োজনে পরিমিত ক্যালসিয়াম সেবন

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877