শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৯:১৯ অপরাহ্ন

আমেরিকায় ব্ল্যাক ফ্রাইডে, বাংলায় কথা বলছে পটোম্যাক নদী

আমেরিকায় ব্ল্যাক ফ্রাইডে, বাংলায় কথা বলছে পটোম্যাক নদী

স্বদেশ ডেস্ক:

ফোবানা কনভেনশনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশীদের কোলাহলে সরগরম গেইলর্ড হোটেল। মেরিল্যান্ডের পটোম্যাক নদী যেন কলকল করছে বাংলা ভাষায়।

মেরিল্যান্ডের আকাশ মেঘলা। টিপ টিপ বৃষ্টিও আছে। কিন্তু কোথাও কোনো মন খারাপের চিহ্ন নেই। গোটা আমেরিকায় চলছে ব্ল্যাক ফ্রাইডে। এই দিনটি কেনাকাটার জন্য বিশেষ। সবখানে দেয়া হয় ব্যাপক ছাড়। দোকান খোলা ও বন্ধ রাখার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই।

আমেরিকায় ব্ল্যাক ফ্রাইডে মানেই বিপণিবিতানগুলোতে মানুষের ধুম। বাংলাদেশী যারা আমেরিকায় থাকেন, তারাও এই দিনটির অপেক্ষা করেন।

কিন্তু এবার ব্ল্যাক ফ্রাইডের দিনে বসেছে ফোবানা সম্মেলন। এ কারণেই এতে আমন্ত্রিত বাংলাদেশীদের মন নেই কেনাকাটা কিংবা ব্ল্যাক ফ্রাইডের দিকে। ফোবানায় অপেক্ষা করছে শেকড়ের উৎসব।

লসঅ্যাঞ্জেলস এবং টেক্সাস থেকে আসা ফোবানার দুই সহযোগী সদস্য ইমরান এবং সুমন। বিষয়টি খোলাসা করে তারা বললেন, ‘একটি সফল ফোবানার জন্য বছর ধরে প্রবাসী বাংলাদেশীরা অপেক্ষা করেন। সবসময় আমেরিকান সংস্কৃতির মধ্যে থেকেও যেন বাঙালি সংস্কৃতিকে মনে রাখা যায় সেজন্যই এর আয়োজন।

এদের সাথে কথা বলতে বলতেই দেখা হয়ে যায় ফোবানার এবারের আসরের চেয়ারম্যান জাকারিয়া চৌধুরীর সাথে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর সাথে মিলিয়ে ফোবানা এবার ৩৫ বছরে পা রাখছে। এরি মধ্যে আমাদের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মুক্তিযোদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক উপস্থিত হয়েছেন। তাছাড়া বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত অন্য অতিথিরাও ফ্লাইটে রয়েছেন।’

সবকিছু মিলিয়ে এবারের ফোবানা প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জাকারিয়া চৌধুরীর সাথে কথা হচ্ছিলো গেইলর্ড হোটেলের লবিতে। ফোবানা উপলক্ষে পুরো হোটেল অন্যরকম সেজেছে। আমন্ত্রিত অতিথিদের বরণ করে নেয়ার জন্য এখানে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে ফোবানার বেশ কয়েক সদস্যকে। এরা নানা রাজ্য থেকে এসেছেন।

এর মধ্যে একজন হোটেলে তার জন্য বরাদ্দ কামরা খুঁজে খুঁজে হয়রান। তার সহযোগিতায় এগিয়ে এলেন ফোবানার অন্য এক সদস্য।

পরে রাতের খাবারের খোঁজ করা হলো। গেইলর্ড হোটেলেই খাবারের ব্যবস্থা। তবে রাতের আমেরিকা দেখার লোভ সামলানো গেলো না। তাই দলের অন্যদের প্রস্তাব দেয়া হলো বাইরে কোথাও খাওয়ার। সাথে সাথেই লুফে নিলেন সবাই।

বাইরে তখনো বৃষ্টি। গুগল ম্যাপ জানালো খুব কাছেই ম্যাকডোনাল্ড। গাড়িতে গেলে মিনিট পাঁচেক লাগবে। পাঁচ মিনিটের পথ পেরিয়ে গিয়ে দেখা গেলো ম্যাকডোনাল্ড এর কপাট আঁটা।

আবারো গুগুল ম্যাপ। পরের সার্চে যা পাওয়া গেলো, সেটিও বন্ধ। শেষ পর্যন্ত পনেরো মিনিট গাড়িপথ পেরিয়ে খাবার পাওয়া গেলো ‘কাবাব প্যালেস’-এ।

এই প্রাসাদের মালিক একজন আফগান। তবে সাদা-কালো সব রঙের খাদকদেরই দেখা গেলো এখানে।
এই রেস্টুরেন্টে ভাত আছে। এমনকি বাঙালি একজন পরিবেশকও আছেন। আরমান নামের ওই পরিবেশকের বাড়ি চট্টগ্রাম। দশ বছর ধরে আছেন আমেরিকায়। পরিবারের সবাই তার সাথেই থাকেন।

তিনি জানালেন, ‌কিছু সময় আগে মুক্তিযোদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এখান থেকেই খেয়ে গেছেন।

আরমান বললেন, ‌’আজ যুক্তরাষ্ট্রে যেমন ব্ল্যাক ফ্রাইডের আনন্দ। আমাদের বাংলাদেশীদের জন্য তেমন ফোবানার আনন্দ।’

তিনি বললেন, ‌’আজ এতো এতো বাংলাদেশী আসছেন আমাদের রেস্টুরেন্টে, এটা দেখে ম্যানেজার অবাক হয়ে যান। তিনি জানতে চান ঘটনা কী। আমি মজা করে বলে দিলাম, আজ বাংলাদেশের জন্যও ব্ল্যাক ফ্রাইডে।’

সেখানে আরমানকে পরিচিতদের চাইতেও পরিচিত মনে হলো। খাওয়া শেষে তিনি গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গেলেন। দূর দেশে এই সম্মেলনের সফলতা সম্ভবত এখানেই। একসাথে বাঙালিরা জড়ো হন। বাংলায় বলেন। বাংলাদেশের মাটির গন্ধ নেন।

এই প্রতিবেদন যখন তৈরি করা হচ্ছে, তখনো ফোবানা কনভেনশনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়নি। ২৬ নভেম্বর, শুক্রবার এই কনভেনশন শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশের হিসেবে সেটা গড়িয়ে যাবে শনিবারে।

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। এর পরই পটোম্যাক নদী কথা বলতে শুরু করবে পুরোপুরি বাংলা ভাষায়। আর গেইলর্ড হবে বাংলাদেশ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877