স্বদেশ ডেস্ক:
দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে চলতি বছরেই অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। এবারের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বড় ধরনের রদবদল আসতে যাচ্ছে দেশের ঐতিহ্যবাহী দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভা গঠন এবং সংরক্ষিত আসনে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে চমক দেখিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, এটাই শেখ হাসিনার চমক নয়। আরও বড় চমক আসছে আওয়ামী লীগের পরবর্তী জাতীয় সম্মেলনে।
সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দলটির গঠনতন্ত্র অনুসারে, আগামী অক্টোবরে বর্তমান কমিটির মেয়াদ
শেষ হচ্ছে। সেই হিসেবে দলটির অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা ধারণা করছেন, চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যেই আওয়ামী লীগের পরবর্তী জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যদিও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করছেন এমন কয়েকজন নেতা আগামী ডিসেম্বরে সম্মেলন অনুষ্ঠানের পক্ষে। তারা উপজেলা ও জেলা সম্মেলন সম্পন্ন হওয়ার পর জাতীয় সম্মেলন করার পক্ষে।
তবে দলটির একাধিক শীর্ষনেতা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সম্মেলনের সঙ্গে জেলা-উপজেলা সম্মেলনের কোনো সম্পর্ক নেই। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দায়িত্ব নেওয়ার পর গত তিন বছরে একটিমাত্র জেলায় সম্মেলন হয়েছে। জাতীয় সম্মেলনের আগে আর কোনো জেলায় সম্মেলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না আওয়ামী লীগের নেতারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত রবিবার বিকালে মুঠোফোনে আমাদের সময়কে বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যখন চাইবেন, তখনই আওয়ামী লীগের পরবর্তী জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, সম্মেলনের সিদ্ধান্ত আসে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক থেকে।
সর্বশেষ বৈঠকে সম্মেলনের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। যদিও এর আগে আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর এক সভা শেষে ‘আগামী অক্টোবরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই দলের পরবর্তী জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে’ বলেও জানিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের।
দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, দলের সভাপতি পদে এবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চাইবেন আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। ১৯৮১ সাল থেকে দলের সভাপতির দায়িত্বে থাকা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যদিও এর আগে একাধিকবার জানিয়েছেন তিনি আর দলের দায়িত্বে থাকতে চান না। তার পরও নেতাকর্মীদের চাপে শেষ পর্যন্ত এবারও দলের হাল ধরতে হবে তাকে-এমনটিই জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারা।
দলটির ওই নেতারা আরও জানান, আওয়ামী লীগের সম্মেলনকেন্দ্রিক সব আলোচনা এখন দলের সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদের আবারও একই পদে থাকতে পারেন এমনটি মনে করেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। তবে বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় নেতার মতে, ওবায়দুল কাদেরের স্থলে সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন কাউকে দেখা যেতে পারে এবারের সম্মেলনে।
সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন দলের দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও আবদুর রহমান। সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আরও রয়েছেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষান্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রচার সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীতেও বেশ পরিবর্তন আসবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যে দুজন বর্তমান কমিটিতে সভাপতিমণ্ডলীতে আছেন, তারা বাদ পড়তে পারেন। তাদের স্থলে নতুন দুজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হতে পারেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকেই। পাশাপাশি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বড় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে এবারের সম্মেলনে। এ দুই পদের নেতারা গত প্রায় তিন কমিটি ধরে একই পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
বর্তমান কমিটির চারজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে কমপক্ষে তিনজন পদোন্নতি পেয়ে আসতে পারেন সভাপতিম-লীতে। সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম এবং খালিদ মাহমুদ চৌধুরী পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে পারেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সুজিত রায় নন্দী সাংগঠনিক সম্পাদক হতে পারেন। বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে বাদ পড়তে পারেন আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল এবং মেসবাহউদ্দীন সিরাজ। দুই উপসম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন এবং ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া পূর্ণ সম্পাদক হিসেবে পদোন্নতি পেতে পারেন। এ দুজন বর্তমানে উপপ্রচার ও উপদপ্তর সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদে ১২ জন নারী রয়েছেন। আসন্ন সম্মেলনে নারীনেত্রীর সংখ্যা বাড়বে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে। পাশাপাশি বর্তমান নেত্রীদের কয়েক জন বাদ পড়তে পারেন।
আওয়ামী লীগে ১৯টি সম্পাদকীয় উপকমিটি রয়েছে। এসব উপকমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে বেশ কয়েকজন সম্পাদকের নামে। এদের অনেকেই সাবেক ছাত্রনেতাদের পাশাপাশি আর্থিক বা অন্যান্য সুবিধা নিয়ে অনেক ‘অযোগ্য’ ব্যক্তিকে উপকমিটির সহসম্পাদক এবং সদস্য বানিয়েছেন। এসব কারণে এবারের সম্মেলনে অভিযুক্ত সম্পাদকরা তাদের দলীয় পদ হারাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাদের পদগুলোতে রদবদল আসতে পারে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর দুই সদস্য আমাদের সময়ের সঙ্গে আলাপকালে জানিয়েছেন, প্রত্যেক সম্মেলনেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ পদে রদবদল হয়। গত সম্মেলনেও কমিটিতে অনেকে যুক্ত হয়েছেন, এবারও বেশকিছু নতুন মুখ যোগ হতে পারে।
নতুন মুখ হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে পারেন ছাত্রলীগের একঝাঁক সাবেক নেতা। এ ছাড়া বর্তমানে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের শীর্ষপদে আছেন এমন কয়েক জনও আসতে পারেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে। সাবেক ছাত্র নেতাদের মধ্যে বরগুনার খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জের মাসুদ দুলাল, ঝালকাঠির মনিরুজ্জামান মনির, পাবনার মাযহারুল ইসলাম মানিক, গাইবান্ধার মাহমুদ হাসান রিপন, চট্টগ্রামের মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, ময়মনসিংহের নুরুল আলম পাঠান, বাগেরহাটের বদিউজ্জামান সোহাগ, পিরোজপুরের সাজ্জাদ সাকিব বাদশা, যশোরের জয়দেব নন্দী প্রমুখ আসতে পারেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে। এ ছাড়াও দীর্ঘদিন থেকে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষপদে দায়িত্ব পালন করছেন-এমন কিছু মুখ এবারের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটিতে যোগ হবে বলে জানা গেছে।