রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৯ পূর্বাহ্ন

চোখের গ্লুকোমা রোগ প্রতিরোধে করণীয়

চোখের গ্লুকোমা রোগ প্রতিরোধে করণীয়

স্বদেশ ডেস্ক:

গ্লুকোমা চোখের একটি জটিল রোগ। এতে চোখের স্নায়ু ক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং চোখের দৃষ্টি কমে যায়। দীর্ঘদিন এমন চলতে থাকলে একসময় রোগী অন্ধত্ব বরণ করে।

রোগের কারণ : এ রোগের সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে চোখের উচ্চচাপ এ রোগের প্রধান কারণ বলে ধরে নেওয়া হয়। স্বাভাবিক চাপেও এ রোগ হতে পারে। সাধারণত চোখের উচ্চচাপ ক্রমে চোখের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত করে দৃষ্টি ব্যাহত করে। কিছু কিছু রোগের সঙ্গে এ রোগের গভীর সম্পর্ক লক্ষ করা যায়। অন্যান্য কারণেও এ রোগ হতে পারে। যেমন- পরিবারের অন্য কোনো নিকটাত্মীয়ের (মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, চাচা, মামা, খালা, ফুপু) এ রোগ থাকা। বয়স চল্লিশ বা তার বেশি। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ। মাইগ্রেন নামক মাথাব্যথা। রাতে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন। স্টেরয়েড নামক ওষুধ দীর্ঘদিন সেবন করা। চোখের ছানি অপারেশন না করলে বা দেরি করলে। চোখের অন্যান্য রোগের কারণে। জন্মগত চোখের ত্রুটি ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে কেবল চোখের উচ্চচাপই ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, যা গ্লুকোমা রোগের প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়।

লক্ষণ : চশমা পরিবর্তন বা নিয়মিত চোখ পরীক্ষার সময় হঠাৎ করেই চিকিৎসক এ রোগ নির্ণয় করে থাকেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে তা হলো- ঘন ঘন চশমার গ্লাস পরিবর্তন হওয়া। চোখে ঝাপসা দেখা বা আলোর চারপাশে রঙধনুর মতো দেখা। ঘন ঘন মাথাব্যথা বা চোখে ব্যথা হওয়া। দৃষ্টিশক্তি ক্রমে কমে আসা বা দৃষ্টির পারিপার্শ্বিক ব্যাপ্তি কমে আসা। অনেক সময় চলতে গিয়ে দরজার পাশে বা অন্য কোনো পথচারীর গায়ে ধাক্কা লাগা। মৃদু আলোয় কাজ করলে চোখে ব্যথা অনুভূত হওয়া। শিশুর বা জন্মের পর চোখের কর্নিয়া ক্রমাগত বড় হয়ে যাওয়া বা চোখের কর্নিয়া সাদা হয়ে যাওয়া, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি।

চোখ পরীক্ষা করে নেবেন যারা : যাদের পরিবারে নিকটাত্মীয়েরও এ রোগ আছে। চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তি, যাদের ঘন ঘন চশমা পরিবর্তন করতে হচ্ছে। চোখে যারা মাঝে মধ্যে ঝাপসা দেখেন বা ঘন ঘন চোখ ব্যথা বা লাল হওয়া অনুভব করেন। যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মাইগ্রেন ইত্যাদি রোগ আছে। যারা চোখে দূরের জন্য মাইনাস গ্লাস ব্যবহার করেন।

চিকিৎসা : গ্লুকোমা রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব কিন্তু নিরাময় সম্ভব নয়। ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো এ রোগের চিকিৎসা সারাজীবন করে যেতে হবে। এ রোগে দৃষ্টি যতটুকু হ্রাস পেয়েছে, তা আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তবে দৃষ্টি যাতে আর কমে না যায়, সেজন্য আমাদের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। এ রোগে প্রচলিত তিন ধরনের চিকিৎসা রয়েছে। যেমন- ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা। লেজার চিকিৎসা এবং সার্জারি বা শল্যচিকিৎসা। যেহেতু চোখের উচ্চচাপ এ রোগের প্রধান কারণ, তাই ওষুধের মাধ্যমে চোখের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। একটি ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা না গেলে একাধিক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। তিন মাস পর পর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে এ রোগের নিয়মিত কতকগুলো পরীক্ষা করিয়ে দেখতে হবে- রোগটি নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা । যেমন- দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা, চোখের চাপ পরীক্ষা, দৃষ্টিব্যাপ্তি বা ভিজুয়্যাল ফিল্ড পরীক্ষা, চোখের নার্ভ পরীক্ষা। এ রোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো নিয়মিত ওষুধ ব্যবহার করা এবং সময়মতো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে নিয়মিত চোখ পরীক্ষা ও তার পরামর্শ মেনে চলা।

রোগীর করণীয় : চিকিৎসক রোগীর চোখ পরীক্ষা করে চোখের চাপ নিয়ন্ত্রণে যে ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ করে দেবেন, তা নিয়মিত ব্যবহার করা। দীর্ঘদিন একটি ওষুধ ব্যবহারে এর কার্যকারিতা কমে যাওয়া বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। তাই নিয়মিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। সময়মতো চোখের বিভিন্ন পরীক্ষা করিয়ে দেখা, গ্লুকোমা নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা। পরিবারের সবার চোখ পরীক্ষা করিয়ে গ্লুকোমা আছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া। মনে রাখতে হবে, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। ঠিকমত ওষুধ ব্যবহার করে এবং চিকিৎসকের পরামর্শে চললে একজন গ্লুকোমা রোগী স্বাভাবিক দৃষ্টি নিয়ে বাকি জীবন সুন্দরভাবে অতিবাহিত করতে পারেন।

লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এবং গ্লুকোমা বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ আই হসপিটাল, শান্তিনগর, ঢাকা। ০১৭৮৯৭৭৯৯৫৫

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877