স্বদেশ ডেস্ক:
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে দেশের বিভিন্ন এলাকায় লাগামহীন সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। সহিংসতার ঘটনায় সমালোচনার কেন্দ্রে আসে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর পরই নড়েচড়ে বসে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে নির্বাচন কমিশন থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরই ১৬ থেকে ২২ নভেম্বর র্যাব ও পুলিশ দেশজুড়ে বিশেষ অভিযান চালায়। কিন্ত এ বিশেষ অভিযানেও সহিংসতার লাগাম টানা যায়নি। তৃতীয় ধাপের ভোট সামনে রেখে ইতোমধ্যে সহিংসতায় ৪ জনের প্রাণ গেছে। এমন প্রেক্ষাপটে আজ বুধবার নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের এক সভা ডাকা হয়েছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, সভায় নির্বাচনী এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। বিশেষ অভিযানে কতটুকু সহিংসতার লাগাম টানা গেছে, তা বিশ্লেষণ করে দেখা হবে। আরও কী কী পদক্ষেপ নিলে তৃতীয় ধাপে সহিংসতা ও প্রাণহানিমুক্ত ভোট করা যাবে, তার উপায় নিয়েও আলোচনা হবে আজকের সভায়। এ ছাড়া সবাই যাতে নির্বাচনী আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এতে অন্য কমিশনাররাও উপস্থিত থাকবেন।
নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপে ৩৬৪টি এবং দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৩টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হয়। প্রথম ধাপের ভোটের দিন তিনজন করে মোট ছয়জন মারা যান। দ্বিতীয় ধাপে ভোটের দিন মারা যান সাতজন। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ৩০ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন শতাধিক। আগামী ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে ১০০৭ ইউপি ও ১০ পৌরসভা এবং ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে ৮৪০টি ইউপিতে ভোট হবে।
রবিবার রাতে মুন্সীগঞ্জ সদরে এক বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর এক সমর্থক নিহত হন। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন অন্তত ছয়জন। একই দিন পাবনার ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। কুমিল্লার বরুড়ায় নৌকা সমর্থকদের হামলায় আহত হন স্বতন্ত্র প্রার্থীর চার সমর্থক।
গতকাল পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, এক সপ্তাহের বিশেষ অভিযানে সারাদেশে ৪৫টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫২৫টি দেশি অস্ত্র (রামদা, কিরিচ, দা, ছোরা ইত্যাদি) উদ্ধার করা হয়েছে। গুলি উদ্ধার করা হয় ৫৬ রাউন্ড। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৫২টি। আসামি করা হয়েছে ১৩৯ জনকে। তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে ৮৮ জন।
বিশেষ অভিযানে নিয়মিত মামলা রুজু হয় ৪ হাজার ৩৪৮টি। এসব মামলায় আসামি করা হয় ১২ হাজার ২৪১ জনকে। মোট গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৬৭৩ জনকে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে ৮ হাজার ৯৮ জন। নিয়মিত মামলা এবং পরোনায়া বলে মোট গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৫ হাজার ২০৮ জনকে। তাদের মধ্যে ৩৮৫ সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া বিশেষ অভিযানে ৩৬টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে ৯৮টি। রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল আটক করা হয় ৩ হাজার ১৪০টি।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. কামরুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, বিশেষ অভিযান শেষ হলেও তৃতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে পুলিশের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
ভোলা জেলার পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার কিংবা আসামি গ্রেপ্তার চলমান প্রক্রিয়া। অনেক সময় আমাদের নিয়মিত অভিযান কিছুটা হলেও ঝিমিয়ে পড়ে। বিশেষ অভিযানের কারণে তা চাঙা হয়। এ সময়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার কিংবা নিয়মিত মামলার আসামি গ্রেপ্তার বৃদ্ধি পায়। ভোলাতে বিশেষ অভিযানে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার না হলেও কোথাও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ঘটনা ঘটেনি। এটি বিশেষ অভিযানের ইতিবাচক দিক।’
নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ‘আগামীকালের (বুধবার) বৈঠকে সশ্লিষ্ট সবাইকে কমিশনের পক্ষ থেকে সার্বিক নির্দেশনা দেওয়া হবে।’
নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী বেসরকারি সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ আমাদের সময়কে বলেন, ‘শুধু মুখের কথায় মানুষের ভীতি কাটছে না। নির্বাচন কমিশন কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে যতই বলা হোক না কেন, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি। তারা মানুষকে আশ^স্ত করতে পারেনি।’