শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৬:৪৭ অপরাহ্ন

পাঁচ কারণে রংপুর অঞ্চলে আ.লীগের পরাজয়

পাঁচ কারণে রংপুর অঞ্চলে আ.লীগের পরাজয়

স্বদেশ ডেস্ক:

দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে রংপুর অঞ্চলে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পাল্লা ভারী। অতি আত্মবিশ্বাস ও দলের প্রার্থীর বিপক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্ত থাকা, প্রার্থী নির্বাচনে পক্ষপাতিত্ব, ত্যাগী স্থানীয় জনপ্রিয় নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন ও দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের বেপরোয়া কার্যক্রমে অতিষ্ঠ মানুষের ক্ষোভের কারণে ইউপি নির্বাচনে এমন পরাজয় মানতে হচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের।

অনুসন্ধানে ও নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলার ৫৭ ইউনিয়নের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের ৩২ প্রার্থীকে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। ১১ নভেম্বর এসব ইউনিয়নের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ২৫ জন জয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া ১১ জন স্বতন্ত্র, ছয়জন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, ছয়জন বিএনপি, চারজন করে জাতীয় পার্টি ও জামায়াত, একজন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এ অবস্থায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে দলের পরাজয় নিয়ে চলছে নানান হিসাব-নিকাশ। তৃণমূলের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, অতি আত্মবিশ্বাস এবং ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট না চাওয়ার কারণে নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে। টাকার বিনিময়ে পরোক্ষভাবে দলের বিপক্ষে কাজ করারও অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

নির্বাচন অফিস ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী জানা গেছে, পীরগঞ্জ ও পীরগাছা উপজেলার ১৮ ইউপির মধ্যে ১১টিতে আওয়ামী লীগ, তিনটিতে বিএনপি, জাতীয় পার্টি এক, জামায়াত এক, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী দুজন বিজয়ী হয়েছেন।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে মাত্র তিনটিতে জয় পেয়েছেন নৌকার প্রার্থী। বাকি ১০টির তিনটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, একটিতে জামায়াত ও ছয়টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। তেমনি নীলফামারী সদর উপজেলার ১১ ইউনিয়নের মধ্যে ৯টিতেই হার মানতে হয়েছে নৌকার প্রার্থীকে। একটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, তিনটিতে বিএনপি, একটিতে জামায়াত ও চারটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পেয়েছেন। কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগ দুটি, জাতীয় পার্টি তিনটি, স্বতন্ত্র এক ও ইসলামী আন্দোলনের একজন এবং লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার আট ইউনিয়নের মধ্যে ছয়টিতে আওয়ামী লীগ, একটিতে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী ও একটিতে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী জয়লাভ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুরের দুই উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ১১, স্বতন্ত্র দুই, বিএনপি তিন, জাতীয়পার্টি ও জামায়াতের একজন করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে পীরগাছায় আওয়ামী লীগের তিনজন, একজন করে জাতীয় পার্টি ও জামায়াত, বিএনপির তিনজন এবং পীরগঞ্জে আওয়ামী লীগের আটজন ও স্বতন্ত্র দুজন রয়েছেন। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানান, প্রার্থী বাছাইয়ে ত্যাগী ও যোগ্য প্রার্থীর মূল্যায়ন করা হয়নি। এ কারণেই নৌকাকে হার মানতে হয়েছে। এতে তৃণমূলে দলের জন্য অনেক ক্ষতি হলো। রংপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও পীরগাছা উপজেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থী জয়ী হওয়ার বিষয়টিকে সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের অনাস্থা প্রকাশের প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখছেন। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের যে তিনজন প্রার্থী জয়ী হয়েছেন, তাদের জয়ী দেখানো হয়েছে। সরকারি হস্তক্ষেপ না হলে তারাও পরাজিত হতেন। এ বিষয়ে জানতে পীরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তসলিম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মিলনকে বেশ কয়েকবার মোবাইল ফোনে কল করা হয়। তবে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন বলেন, নির্বাচনে দলের বেশ কিছু নেতা প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেছেন। তাদের তালিকা তৈরি করে কেন্দ্রে পাঠানো হবে। দল তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে জানান তিনি। তিনি দাবি করেন, তাদের দলের প্রার্থীরা অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। এছাড়া বিএনপি ও জামায়াত ভোটের আগের রাতে লাখ লাখ টাকা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি বিলি করেছেন। এসব কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা যোগ্য হয়েও জয় পাননি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877