স্বদেশ ডেস্ক:
জুলাইয়ে উদ্বোধনের কথা থাকলেও আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো সম্পন্ন না হওয়ায় ই-পাসপোর্ট চালু করা যাচ্ছে না। এ ছাড়াও চুক্তির বিষয়ে কিছুটা জটিলতা রয়েছে। এটিও বিলম্বের কারণ। চূড়ান্ত হয়নি কোনো নীতিমালাও।
এ বিষয়ে ই-পাসপোর্ট প্রবর্তন ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান খান আমাদের সময়কে জানিয়েছেন, জুলাই থেকেই ই-পাসপোর্ট বিতরণ করার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত ই-পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সময় নির্ধারণ করা হলেও তা পিছিয়ে গেছে। আমরা এখন শেষ মুহূর্তের কাজগুলো সম্পন্ন করছি। আশা করছি খুব শিগরি ই-পাসপোর্ট চালু সম্ভব হবে। ই-পাসপোর্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আকাশ, জল ও স্থলবন্দরে ই-গেট স্থাপনের কাজ এখানো শেষ হয়নি। নির্ধারণ হয়নি পাসপোর্ট ফি। এমনকি কীভাবে এর ব্যবহার হবে, তার প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়নি ইমিগ্রেশন পুলিশকে। চূড়ান্ত হয়নি কোনো নীতিমালাও। ফলে ই-পাসপোর্ট চালু বিলম্ব হচ্ছে।
জানা গেছে, ই-পাসপোর্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে জার্মানির প্রতিষ্ঠান ভেরিডোজের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী পাসপোর্টের ইলেকট্রনিক চিপে দশ আঙুলের ছাপ থাকার কথা। তবে চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রকল্প বাস্তবায়নকারী জার্মান কোম্পানি মাত্র দুটি আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করতে চাচ্ছে। ২ আঙুলের ছাপে ভবিষ্যতে জালিয়াতি হতে পারে, তাই
এ প্রস্তাবে রাজি হচ্ছে না পাসপোর্ট অধিদপ্তর। এ নিয়ে জার্মান প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক ও চিঠি চালাচালি হয়েছে। বিষয়টি এখনো সুরাহা হয়নি। এটাও ই-পাসপোর্টের বিলম্ব হওয়ার অন্যতম কারণ।
এদিকে ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষপর্যায়ে থাকলেও ফি চূড়ান্ত করা হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয়ে ই-পাসপোর্টে ফির প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। তারা ফি নির্ধারণ করবে। উদ্বোধনের পর সেটআপের জন্য আরও কিছুদিন সময় লাগবে। পুরোপুরি প্রস্তুত হলে দিনে ২৫ হাজার পাসপোর্ট প্রিন্ট করা সম্ভব হবে। ই-পাসপোর্ট চালু হলেও নাগরিকরা চাইলে এমআরপিও রাখতে পারবেন, সে ব্যবস্থাও থাকবে। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ন্যূনতম ছয় হাজার টাকায় একজন নাগরিক ২১ কার্যদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট পাবেন। এ ছাড়াও সাত দিনের এক্সপ্রেস ডেলিভারির জন্য ১২ হাজার এবং একদিনের সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারির জন্য ১৫ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ই-পাসপোর্ট প্রবর্তন ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান খান আমাদের সময়কে জানিয়েছেন, আমরা ই-পাসপোর্টের ফি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি।
পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শুরুতে ২০ লাখ ই-পাসপোর্ট জার্মানি থেকে প্রিন্ট করিয়ে সরবরাহ করা হবে। এর পর আরও ২ কোটি ৮০ লাখ পাসপোর্ট বাংলাদেশে প্রিন্ট করা হবে। সে জন্য উত্তরায় কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে বই আকারে যে পাসপোর্ট আছে, ই-পাসপোর্টেও একই ধরনের বই থাকবে। তবে বর্তমানে পাসপোর্টের বইয়ের শুরুতে ব্যক্তির তথ্যসংবলিত যে দুটি পাতা আছে, ই-পাসপোর্টে তা থাকবে না। সেখানে থাকবে পালিমারের তৈরি একটি কার্ড। এই কার্ডের মধ্যে থাকবে একটি চিপ। সেই চিপে পাসপোর্টের বাহকের তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। ই-পাসপোর্টে ৪২ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। বর্তমানে এমআরপি ডেটাবেসে যেসব তথ্য আছে, তা ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে।
চিপে পাসপোর্টধারীর বায়োগ্রাফিক ও বায়োমেট্রিক (ছবি, আঙুলের ছাপ ও চোখের মণি) তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। আর ই-পাসপোর্টের সব তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষিত থাকবে পিকেডিতে (পাবলিক কি ডাইরেক্টরি)। আন্তর্জাতিক এই তথ্যভা-ার পরিচালনা করে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইসিএও)। ইন্টারপোলসহ বিশ্বের সব বিমান ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এ তথ্যভা-ারে ঢুকে তথ্য যাচাই করতে পারবে। এর ফলে পাসপোর্ট নিয়ে জালিয়াতি কঠিন হবে।
২০১৭ সালে ৪ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা খরচে ই-পাসপোর্ট প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। গত বছরের জুলাই থেকে জার্মানির ভেরিডোজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান এর কাজ করছে। দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও দুটি স্থলবন্দরে স্বয়ংক্রিয় সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বা ই-গেট স্থাপনের কথা থাকলেও তা এখনো হয়ে ওঠেনি। এসব বন্দরে ৫০টি ই-গেট দিয়ে ইলেকট্রনিক পাসপোর্টধারীদের সহজেই ইমিগ্রেশন পার হওয়ার কথা। ৫০টি ই-গেটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বসানো হবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। ভিআইপি, ভিভিআইপি যাত্রী ছাড়াও শুধু ২৪টি গেট সাধারণ যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য বসানো হবে। ই-পাসপোর্ট কার্যকর করতে প্রকল্পের আওতায় জার্মানি থেকে ৫০টি ই-গেট আসার কথা। ইতোমধ্যে এসেছে তিনটি ই-গেট।
এগুলো হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থাপন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। ই-গেট এমন একটি প্রযুক্তি, যা দ্রুততম সময়ে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করবে। ই-গেটে গমন বা আগমনকারী ব্যক্তির পাসপোর্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিডার ও ক্যামেরার সাহায্যে চিপযুক্ত পাসপোর্ট যাচাই, ফিংগারপ্রিন্ট ও রিকগনিশনের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন শেষ করা হবে। ভেরিফিকেশনে ব্যক্তির তথ্য সঠিক থাকলে ই-গেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যাবে। কোনো ভুয়া পাসপোর্টধারী ইমিগ্রেশন পার হওয়ার চেষ্টা করলেই ধরা পড়ে যাবেন ই-গেটে। ফলে কোনো অপরাধী পরিচয় গোপন করে ই-গেট অতিক্রম করতে পারবেন না। তবে ভুল কিংবা অন্য কারণে লাল বাতি জ্বলে উঠলে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সঠিকভাবে ই-পাসপোর্ট ব্যবহারে সহযোগিতা করবেন।
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, উদ্বোধনের পর কূটনৈতিক পাসপোর্ট বিতরণের পাশাপাশি পরীক্ষামূলকভাবে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে রাজধানীর উত্তরা পাসপোর্ট অফিস থেকে সীমিত পর্যায়ে সাধারণ গ্রাহককে ই-পাসপোর্ট দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এতে সফল হলে ডিআইপির সব অফিস থেকেই ই-পাসপোর্ট সরবরাহ করা হবে। প্রসঙ্গত, বর্তমানে বিশ্বে ১১৯টি দেশ ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করছে। এটি চালু হলে ই-পাসপোর্ট ব্যবহারে ১২০তম দেশ হবে বাংলাদেশ।