স্বদেশ ডেস্ক: একাদশ সংসদ নির্বাচনে আসনভিত্তিক বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য ফের সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি প্রতিটি বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকের কাছে বুধবার পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। চিঠিতে চারটি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্যকেন্দ্রকে জানাতে বলা হয়েছে।
চিঠি প্রসঙ্গে দলের এক নেতা বলেছেন, সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাদের ওয়েবসাইটে কেন্দ্রভিত্তিক ফল প্রকাশের পর নির্বাচনে যে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে, তার প্রমাণ সুনির্দিষ্টভাবে মিলেছে। ইসির তথ্য অনুযায়ী বহু কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। এ ছাড়া এমন অসংখ্য কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে বিএনপি একটি ভোটও পায়নি। ইসির এমন তথ্যের পর বিএনপিও দলীয়ভাবে অনিয়মের তথ্য সংগ্রহ করছে।
জানা গেছে, নির্বাচনে কেন্দ্রভিত্তিক যে ফল প্রকাশ করা হয়েছে, সেই ভোটারদের মধ্যে কতোজন নির্বাচনকালীন প্রবাসে ও জেলে ছিলেন, কতজন মারা গেছে এবং নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করা সত্ত্বেও কতজন ভোট দিয়েছেন, তা বিএনপির কেন্দ্রে জানাতে বলা হয়েছে। এসব তথ্য সন্নিবেশিত করার জন্য একটি ছক করে দেয়া হয়েছে।
বিএনপি সূত্র মতে, এসব তথ্য সংগ্রহ করে দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে অনিয়মের চিত্র প্রকাশ করবে। একই সাথে কূটনৈতিক পর্যায়েও বিষয়টি তুলে ধরা হবে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর কেন্দ্রভিত্তিক ফল চেয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু তখন ইসি তা দিতে অপারগতা জানায়। নির্বাচনের ছয় মাস পরে ফল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে ইসি। ওই ফল পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সংসদীয় আসন ১ থেকে ১০০ আসনের মধ্যে ২৯টি কেন্দ্রে; ১০১ থেকে ১৯৯ আসনের মধ্যে ২২টি কেন্দ্রে এবং পরবর্তী ৩০০ আসনের মধ্যে ১৮টি কেন্দ্রে ১০০ শতাংশ ভোট গ্রহণ হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোটের কেন্দ্রভিত্তিক যে ফল প্রকাশ করেছে, তা বিশ্লেষণ করে ভোট ও নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা করা বেসরকারি সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বলেছে, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫৮৭টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৫৮৬টিতে যত বৈধ ভোট পড়েছে, তার সবই পেয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। ধানের শীষ বা অন্য কোনো প্রতীকের প্রার্থীরা এসব কেন্দ্রে বৈধ ভোটের একটিও পাননি। সুজনের তথ্য অনুযায়ী, ওই কেন্দ্রগুলো মোট ৭৫টি সংসদীয় আসনের আওতাধীন। এসব আসনের মধ্যে ৭৪টিতেই জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। জানা গেছে, সুজনের দেয়া তথ্য বিএনপি দলগতভাবে কাজে লাগাতে চায়।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করার পরপরই নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপি। সব প্রার্থীকে তখন ঢাকায় এনে মামলার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়। পরে সব প্রার্থী এক যোগে মামলা না করে বিভাগওয়ারী সুনির্দিষ্ট প্রার্থীদের মামলা করতে বলা হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী-নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে হাইকোর্টের নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের ৭৪ জন পরাজিত প্রার্থী। এসব অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টের ছয়টি একক বেঞ্চও গঠন করেন। আবেদনে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী আসনে বিজয়ী প্রার্থীকে বিবাদি করা হয়। এতে ওই ৭৪ আসনের ফল বাতিল চেয়ে পুনর্নির্বাচনের দাবিও জানানো হয়। যদিও এখনো পর্যন্ত ওই আবেদনের উপর কোন শুনানি হয়নি। নতুন করে অনিয়মের তথ্য সংগ্রহের পর বিএনপি পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে বলে জানা গেছে।