স্বদেশ ডেস্ক; সিলেটের আওয়ামী লীগে বইছে ঐক্যের সুর। কোন্দলে আবর্তিত আগের আওয়ামী লীগ এখন আর নেই সিলেটে। ভেতরে ভেতরে গ্রুপ-উপগ্রুপ নিয়ে নেতাদের অবস্থান থাকলেও প্রকাশ্যে নেই কোনো দ্বন্দ্ব। সবাই এক কাতারে থেকে রাজনীতি করছেন। কিন্তু হঠাৎ করে সিলেট আওয়ামী লীগে কম্পন তৈরি হয়েছে। আর সেটি হয়েছে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি গঠনকে ঘিরে। নতুন করে
নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও অবিশ্বাস দানা বাঁধছে। তবে- সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্তে থাকায় বিশেষ করে আওয়ামী লীগের ভেতরের দ্বন্দ্ব প্রকাশ পায়নি।
এখন সেটি মিটমাটেরও চেষ্টা চলছে। ছাত্রলীগে তৈরি হওয়া কম্পন সহসাই মিটে যাওয়ার আশা করছেন সিলেট আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা। তারা জানিয়েছেন, সিলেট আওয়ামী লীগকে ২০১৯ সালে নতুন ফরম্যাটে তৈরি করে দিয়েছিলেন দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই। পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর মিলেমিশেই সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতি চলছে। মাঝে মধ্যে দু’একজন কেন্দ্র থেকে প্রভাব খাটিয়ে বিরোধ তৈরি করার চেষ্টা করলেও সেটি মোকাবিলা করছেন শীর্ষ নেতারা। সিলেটে ছাত্রলীগের রাজনীতি নির্বাসনে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। চার বছর ধরে কমিটিহীন অবস্থায় কেটেছে সিলেট ছাত্রলীগের রাজনীতি। কেন্দ্র থেকে বার বার কমিটি গঠনের চেষ্টা করা হলেও পদবি নিয়ে সিলেটের গ্রুপ-উপগ্রুপের টানাটানি ও ঐকমত্যে না পৌঁছার কারণেই সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। এবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা সিলেট আওয়ামী লীগকে অবহিত না করেই জেলা ও মহানগরের আংশিক কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। গত মাসের শুরুতেই ঘোষিত এই কমিটি নিয়েই সিলেট ছাত্রলীগে নানা ঘটনা ঘটেছে। শক্তি প্রদর্শনে রাজপথে হয়েছে শোডাউন ও পাল্টা শোডাউন। সিলেট ছাত্রলীগে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রুপের মধ্যে রয়েছে; তেলীহাওর গ্রুপ, দর্শন দেউরী গ্রুপ, কাস্মির গ্রুপ, টিলাগড় গ্রুপ, টিলাগড় গোপালটিলা গ্রুপ, চৌহাট্টা গ্রুপ ও সুরমা গ্রুপ। এই সব গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে শুরু করে সিলেটের শীর্ষ নেতারাও। এবার ছাত্রলীগের ঘোষিত কমিটিতে দর্শন দেউরী গ্রুপ, টিলাগড় গোপালটিলা গ্রুপ, কাস্মির গ্রুপের নেতারা পদ পেয়ে খুশি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী বলয়ের ছাত্রলীগ নেতা কিশোয়ার জাহান সৌরভ মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বিধান কুমার সাহার বলয়ের নেতা মো. নাইম হয়েছেন সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট রঞ্জিত সরকারের বলয়ের নেতা নাজমুল ইসলাম পেয়েছেন জেলার সভাপতি পদ। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান বলয়ের নেতা রাহেল সিরাজ হয়েছেন সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু এতে খুশি নয় তেলীহাওর গ্রুপের নেতারা। তারা সভাপতি পদ চেয়েছিলেন। না পাওয়ায় বলয় নেতারা ক্ষুব্ধ হন। এ ছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ বলয়ের নেতারা কোনো পদই পাননি। পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে পদের জন্য লবিংয়ে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, কামরানপুত্র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আরমান আহমদ শিপলু সহ কয়েকজন নেতাও। কিন্তু তারাও পাননি কোনো পদ। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির এই হিসাবের বাইরে সিলেটে ঘোষিত ছাত্রলীগের এবারের কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগের কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। ফলে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হয়। এ কারণে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা পদবি পাওয়া ছাত্রলীগের চার নেতার জন্য গেইট বন্ধ রেখেছিলেন। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী চেষ্টা করেও সেই গেইটলক খুলতে পারেননি। সিলেট আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, কেবলমাত্র তেলীহাওর বলয় ছাড়াও যেসব বলয় পদ পেয়েছে তারা নিজেরা ভেতরে ভেতরে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। এমন কি আড়াল থেকে তারা বর্তমান কমিটি পরিচালনায় পরামর্শ দিয়েছেন। আর তেলীহাওর ব্লক সহ বঞ্চিত বলয়ের সব নেতারাও ভেতরে ভেতরে ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। তারা বঞ্চিত কর্মীদের সঙ্গে রয়েছেন। ফলে সিলেট ছাত্রলীগের নতুন কমিটি নিয়ে সিলেটে আওয়ামী লীগের ভেতরে বিভাজন দেখা দিয়েছে। এই যখন অবস্থা তখন হঠাৎ করে বরফ গলতে শুরু করেছে সিলেট ছাত্রলীগের বিবদমান সংকটে। আর এতে এগিয়ে এসেছেন জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাই। সব ক্ষোভ-বিক্ষোভ ভুলে তারাও সিলেট ছাত্রলীগকে এক করতে চাইছেন। ইতিমধ্যে দু’একজন নেতার দেখাও পেয়েছেন পদবি পাওয়া ছাত্রলীগ নেতারা। কেউ কেউ ফুলের তোড়াও নিচ্ছেন। সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, দিন শেষে সবাই ঐক্যের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। এবং সেটি শুরু হয়ে গেছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সব কিছু পরিষ্কার হবে। তবে পদবি পাওয়া নেতাদের এ জন্য ধৈর্য ও মেধার পরিচয় দিতে হচ্ছে। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা জানিয়েছেন, ছাত্রলীগে যা হয়েছে তার অতীতে কখনো হয়নি। মূল সংগঠনের নেতাদের আড়ালে রেখে কমিটি ঘোষণা করা উচিত হয়নি। এজন্যই ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা দিয়েছিল। তিনি জানান, যা হওয়ার হয়ে গেছে; এখন সবাইকে এক টেবিলে বসতে হবে। সেই বসার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।