বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৬ অপরাহ্ন

৩ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ১২৭৭ কোটি টাকা গেল কোথায়?

৩ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ১২৭৭ কোটি টাকা গেল কোথায়?

স্বদেশ ডেস্ক: তিনটি আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১২৭৭ কোটি টাকার হিসাবে নয়ছয় হয়েছে। পণ্য নেয়ার জন্য গ্রাহকরা এসব প্রতিষ্ঠানে টাকা প্রদান করেছিলেন। অধিকাংশ গ্রাহকই পণ্য পাননি। তিনটি প্রতিষ্ঠানের যেসব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে সেখানে টাকা লেনদেনের সঠিক হিসাব পাচ্ছেন না মামলার তদন্তকারীরা। গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ অথবা এক হাত থেকে আরেক হাতে গেছে। এ ছাড়াও তাদের ধারণা, টাকার বড় একটি অংশ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। ওই টাকা কার মাধ্যমে এবং কোন কোন দেশে পাচার হয়ে গেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
যেসব গ্রাহক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগ করেছিলেন তারা এখন হতাশায় ভুগছেন। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গ্রাহকদের টাকা কোন পদ্ধতিতে ফেরত দেয়া যায় তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে।

আর্থিক অনিয়মের কারণে আলোচনার শীর্ষে থাকা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড গঠন করেছে হাইকোর্ট। ওই বোর্ডের প্রধান হিসেবে রাখা হয়েছে সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে। এ বিষয়ে সিআইডির অর্গানাইড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার (ইকোনমিক ক্যারেন্সি)- মো. হুমায়ুন কবীর মানবজমিনকে জানান, ‘যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম পাওয়া গেছে তার তদন্ত চলছে।’ ইভ্যালির গ্রাহকদের টাকা পাচার হয়েছে কিনা বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা  হলে ইভ্যালির বোর্ড প্রধান বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, ইভ্যালির হিসাবে প্রায় ৪০৭ কোটি টাকার নয়ছয় পাওয়া গেছে। আর ইভ্যালির সঙ্গে যোগসাজশ থাকা আরও ৫টি প্রতিষ্ঠানের কয়েকশ’ কোটি টাকার হিসাব মেলাতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই প্রতিষ্ঠানটি চটকদার অফার দিয়ে জমজমাট ব্যবসা করেছে। কিন্তু, পরে টাকা নিয়ে গ্রাহকদের পণ্য না দেয়ার অভিযোগ ওঠে। ইভ্যালির ব্যাংক থেকে তুলে নেয়া টাকার একটি বড় অংশ পণ্য সরবরাহকারীদের কাছে গেলেও প্রায় ৪০৭ কোটি টাকার হিসাব মিলছে না। সূত্র জানায়, ইভ্যালি ডট কম’র মোট সম্পদ ৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার ৮৪৬ টাকা। চলতি সম্পদ ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা। মোট দায় ৪০৭ কোটি ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯৪ টাকা।
সূত্র জানায়, আরেকটি আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের দুটি ব্যাংক হিসাবের লেনদেন পর্যালোচনা করে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার হদিস পাচ্ছেন না মামলার তদন্তকারীরা। সিটি ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংকে ই-অরেঞ্জের ২টি অ্যাকাউন্টের লেনদেন পর্যালোচনা করেছে পুলিশ। গত এক বছরে সবমিলিয়ে ওই দুটি অ্যাকাউন্টে প্রায় এক হাজার ৬৫০ কোটি টাকা জমা হয়েছে। কিন্তু, ওই টাকা জমা নেই। সূত্র জানায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ই-অরেঞ্জের সিটি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে ৬২০ কোটি ৬৭ লাখ ২০ হাজার ৭২৯ টাকা। আর এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ব্র্যাক ব্যাংকে প্রতিষ্ঠানটির আরেকটি হিসাবে জমা পড়ে ৩৯১ কোটি ৬৭ লাখ ৬১ হাজার ৮৭৯ টাকা।
এ ছাড়াও অবিশ্বাস্য সব অফার দিয়ে আলোচনায় আসা কিউকমের ৪২০ কোটি টাকার হিসাব মিলছে না। ওই টাকা গ্রাহকদের। পণ্য দেয়ার নাম করে তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেছে। কিন্তু, প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আছে মাত্র ৯৭ লাখ টাকা। মামলার তদন্তকারী সূত্রে জানা গেছে, ৩ টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের টাকা অত্যন্ত চালাকি করে অন্য স্থানে সরানো হয়েছে। টাকা সরানোর বিষয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের সিও, পরিচালক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত। ওই টাকার বড় অংশ বিদেশে পাচার হয়েছে। টাকা পাচার ব্যাংকিং চ্যানেলে  হয়নি। হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, গত বছরে করোনাকালীন সময়ে অনলাইন ই-কমার্স ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ঘরবন্দি লোকজন অনলাইন থেকে সব ধরনের পণ্য ক্রয় করে। এতে ই-কমার্সের আলোচিত প্রায় ১০টি প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকদের বিপুল পরিমাণের টাকা জমা হয়। পরে পণ্য না বুঝিয়ে  দেয়ার অভিযোগ আসলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করে।
সূত্র জানায়, ৩টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যে টাকার নয়ছয় পাওয়া গেছে ওই টাকা উদ্ধারের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগকারীরা সরকারের কাছে টাকা ফেরতের সুষ্ঠু সুরাহার জন্য আবেদন করেছে। তারা রাজধানীর প্রেস ক্লাব, শাহবাগসহ একাধিক স্থানে বিক্ষোভও করেছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877