শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৯:০৯ অপরাহ্ন

আবারো হতাশা নিয়ে জেলেদের সাগরে যাত্রা

আবারো হতাশা নিয়ে জেলেদের সাগরে যাত্রা

স্বদেশ ডেস্ক:

বরগুনাসহ উপকূলের জেলেরা আবারো এক বুক হতাশা নিয়ে মধ্যরাত থেকে সাগরে যাত্রা শুরু করছেন রুপালী ইলিশের আশায়। নদী ও সাগরে মা ইলিশ ধরার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে গত মধ্যরাত থেকে। ইতোমধ্যে নদীতে জাল ফেলেছেন, আর সাগরে যাচ্ছেন উপকূলের জেলেরা।

এ বছরের চলতি নিষেধাজ্ঞার ২২ দিনে বরগুনায় নদী ও সাগরের বিভিন্ন এলাকায় ৩২২টি অভিযান করেছে মৎস্য অধিদফতর ও জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন অসাধু ১৮ জন জেলে। জাল জব্দ করা হয়েছে সাড়ে চার লাখ মিটার।

উপকূলে সোমবার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বরগুনা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের প্রায় তিন হাজার ট্রলারের জেলেরা জাল-দড়ি গুছিয়ে ট্রলারে বরফ উঠাচ্ছে। ভোরের আলো ফুটতেই বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করা প্রত্যেকটি ট্রলারে এক থেকে দেড় লাখ টাকার নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী কিনে মধ্যরাতের অপেক্ষা করছেন তারা।

মাছেরখাল এলাকার এফবি রাসেল ট্রলারের মালিক ও মাঝি তরিকুল ইসলাম রতন বলেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় বেকার সময়ে অর্ধাহার-অনাহারে পরিবার নিয়ে দিন কাটিয়েছেন সে সহ ট্রলারের ১৮ জেলে ও তাদের পরিবার। প্রকৃত জেলে হওয়া সত্বেও তারা কেউ পায়নি সরকারের চাল সহায়তা।

নোয়াখালীর হাতিয়ার এফ বি আল্লার দান ট্রলারের মাঝি রাফান আকাশ বলেন, বঙ্গোপসাগরে ইলিশ বেশি ধরা পড়ত। কিন্তু এখন সাগরে ইলিশের পরিমান খুবই কম। সাগরে ৮-১০ দিন জাল ফেলেও একবারে এক লাখ টাকার মাছ ধরতে পারেনি গত এক বছর ধরে। মধ্যরাতে নিষেধাজ্ঞা শেষ, আশায় বুক বেধেঁছি বেশি মাছ পাওয়ার। গত শুক্রবার (২২ অক্টোবর) নোয়াখালী থেকে পাথরঘাটা এসেছি। তিন দিন ধরে জাল-দড়ি গুছিয়ে নিচ্ছি। দুপুরের মধ্যেই শেষ হবে জাল-দড়ির কাজ। অভাবের তাড়নায় দিশেহারা আমরা সব জেলেরা। ২০ কেজি চাল সহায়তা পেয়েছি এই ২২ দিনে। শুধু চাল খেয়ে তো আর দিন চলে না। সন্তানদের লেখা-পড়ার খরচ চালাতেও পারছি না।

তালতলীর এফ বি রিমা ট্রলারের জেলে জানান, ধার-দেনায় সংসার চলছে তাদের। নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরের উপর নির্ভর করবে তাদের বেঁচে থাকা। যদি আশানুরুপ মাছ না পায় তবে, জেলা পেশার পরিবর্তন ছাড়া উপায় নেই। প্রকৃত জেলে হওয়া সত্বেও তারা কেউই পায়নি সহায়তা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধূরী বলেন, শুধুমাত্র বরগুনা উপকূলের দেড় লাখ মানুষ জেলে পেশায় নিয়োজিত। অথচ সরকারের তালিকায় জেলে সংখ্যা ৩৭ হাজার ৭৪ জন। তাই এক লাখেরও বেশি জেলেরা সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়। বিগত বছরের নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের সহায়তা করতো ট্রলার মালিকরা। তবে, বছরের পর বছর দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে মাছের পরিমান কমে যাচ্ছে। মারাত্মক লোকসানের মুখে ট্রলার মালিকরাও। তাই জেলেদের এই অভাবের সময়ে সহায়তা করতে পারছে না তারা। জেলে তালিকায় প্রকৃত জেলেদের স্থান দেয়ার দাবিও জানান তিনি।

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব নয়াদিগন্তকে বলেন, জেলে তালিকা করার সময়ে অনেক জেলেরা সাগরে মাছ শিকারে থাকে। তাই অনেক জেলেরা তালিকায় আসে না। তবে, কয়েক বছর আগেও জেলে তালিকায় অন্য পেশার মানুষদের থাকার অভিযোগ ছিলো। সে সব নাম বাদ দিয়ে এখন প্রতিবছরই তালিকায় প্রকৃত জেলেদের নাম নেয়া হয়। জেলেদের শুধুমাত্র ২০ কেজি চাল সহায়তায় অনেকটা কষ্ট হয় এটা ভেবেই আগামী সহায়তার সময়ে জেলেদের নগদ টাকা দেয়ার ব্যাপারে ঊধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে এ নিয়ে আলোচনা চলছে তাদের।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877