স্বদেশ ডেস্ক:
সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর মাথার চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিনের স্থায়ী বহিষ্কার চেয়ে আবারও আমরণ অনশনে বসেছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ফের অনশনে ক্যাম্পাস আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, গত হস্পতিবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর শুক্রবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সিন্ডিকেট সভা বসে। তবে অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি এমনটাই জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকেই ফের অনশন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া আবু জাফর হোসাইন বলেন, ‘শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে আমাদেরকে ফোন দিয়ে জানানো হয় কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা মুলতবি করা হয়েছে। বিষয়টি জানার পর আমরা ভারপ্রাপ্ত ভিসি স্যারকে ফোন দেই। তখন তিনি বলেন, আজ এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। তোমরা ক্লাস-পরীক্ষাতে ফেরো। আমরা আবার সিন্ডিকেট সভায় বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো। তখন আমরা আগামীকালকেই সিন্ডিকেট সভা বসবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাতত একমাসের মধ্যে এই সভা বসার সম্ভাবনা নেই। ’
‘আমরা শিক্ষকদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে সব ধরনের আন্দোলন স্থগিত করেছিলাম। কিন্তু যেহেতু আমরা সমাধান পাচ্ছি না, তাই গতকাল শুক্রবার রাত ৮টা থেকে আবারও আমরণ অনশন শুরু করেছি’, যোগ করেন ওই শিক্ষার্থী।
তবে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও ট্রেজারার আব্দুল লতিফকে একাধিকবার মোবাইলফোনে কল দিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এর আগে, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় এ ঘটনায় গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. সোহরাব আলীর কাছে প্রতিবেদন জমা দেন। শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকার ধানমন্ডিস্থ আবাসিক ভবন অফিসে সিন্ডিকেট বৈঠক শুরু হয়। টানা ৩ ঘণ্টা বৈঠক চলার পর কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই রাত সাড়ে ৭টার দিকে এ বৈঠক শেষ হয় বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় অবস্থিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন গত ২৬ সেপ্টেম্বর পরীক্ষার হলে প্রবেশের সময় ওই বিভাগের প্রথম বর্ষের ১৪ ছাত্রের মাথার চুল কাঁচি দিয়ে কেটে দেন বলে অভিযোগ ওঠে। চুল কেটে দেওয়ার অপমান সইতে না পেরে এক ছাত্র ঘুমের ওষুধ সেবন করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ও শিক্ষিকা ফারহানার অপসারণ দাবিতে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করে। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের মুখে শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিনকে সাময়িক বরখাস্ত করে ঘটনার তদন্তে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।
এরপর তদন্ত কমিটির কাছে নির্যাতিত ছাত্র, প্রত্যক্ষদর্শী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সাক্ষ্য দিলেও শিক্ষিকা ফারহানা তা না দিয়ে ২ সপ্তাহের সময় প্রার্থনা করেন। তদন্ত কমিটি প্রথমে তিনদিন,পরে আরও ছয়দিন ও সব শেষে ১৪ দিন সময় দেন। এ সময়ের শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার। ওইদিনও তিনি সাক্ষ্য না দিয়ে আবার সময় চাইলে তদন্ত কমিটি তা নাকচ করে দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।