স্বদেশ ডেস্ক: সাবেক আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করা নিয়ে নতুন দাবি করলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। লাদেন যে পাকিস্তানে ছিল, তার খতমের আগে পর্যন্ত সে কথা জানত না বলেই এতদিন দাবি করত ইসলামাবাদ। সেই অবস্থান থেকে সরে এসে মঙ্গলবার ইমরান খান দাবি করেছেন, বিন লাদেনকে নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএকে তথ্য দিতো পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই সাবেক আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করতে সক্ষম হয় আমেরিকা।
মঙ্গলবার ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইমরান একথা জানান। তার কথায়, ‘আইএসআইয়ের তথ্যের ভিত্তিতে ওসামা বিন লাদেনের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয় তারা। ফোন সংযোগের মাধ্যমে ওসামার প্রাথমিক অবস্থান জানতে সিআইএকে সাহায্য করেছিল আইএসআই।’
এতদিন পর্যন্ত জানা ছিল মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ নিজেদের নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে অ্যাবটাবাদে ওসামার অবস্থান চিহ্নিত করে। এরপর তাকে হত্যা করে তারা। আর বিন লাদেনকে নিয়ে তথ্য সংগ্রহে তারা ব্যবহার করেছিল পাকিস্তানি চিকিৎসক সাকিল আফ্রিদিকে। পাকিস্তান জেলে বন্দি সাকিলের মুক্তির দাবিতে লাদেন হত্যার এক দশক পরও সরব ওয়াশিংটন। আফ্রিদিকে ছাড়া নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরেই বিন লাদেন হত্যা নিয়ে সিআইএ-আইএসআই যোগের কথা জানান ইমরান। তবে যেভাবে পাকিস্তানের মধ্যে ঢুকে লাদেনকে মার্কিন নেভি সিল হত্যা করেছে, তাতে যে ইসলামাবাদ হতাশ, সে কথা জানাতে ভোলেননি তিনি।
তার কথায়, ‘পাকিস্তান সব সময়ই মার্কিন বন্ধু বলে নিজেদের মনে করে। ওসামাকে নিয়ে কোনো তথ্য দিলে আমরা অবশ্যই তাকে খুঁজে বার করতাম। ওসামা হত্যা আমাদের অপ্রস্তুত করেছে। আমেরিকা আমাদের আদৌ বিশ্বাস করে না। তাই তারা আমাদের ভূখণ্ডে ঢুকে একজনকে হত্যা করল।’
আমেরিকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানও যে শামিল, সে কথাও তুলে ধরেছেন ইমরান। তার দাবি, এই লড়াই করতে গিয়ে দেশের ৭০ হাজার মানুষ মারা গেছে। এরপরেই তিনি বলেন, ‘আমরা এই লড়াই লড়ছি আমেরিকার জন্য। আর এই লড়াইয়ে এত মানুষ মারা গেল। অথচ যেভাবে লাদেনকে হত্যা করা হলো, তাতে গোটা দেশে ক্ষোভের আঁচ জ্বলে ওঠে। তবে এগুলি সবই অতীতের বিষয়।’
এদিকে, আমেরিকার দাবি মেনে চিকিৎসক সাকিল আফ্রিদিকে ছেড়ে দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন ইমরান খান। বিনিময়ে মার্কিন জেলে আটক পাকিস্তানি স্নায়ুবিজ্ঞানী আফিয়া সিদ্দিকিকেও ছেড়ে দিতে হবে। মার্কিন টিভি চ্যানেলে এমনই দেয়া-নেয়ার শর্তের কথা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ।
উল্লেখ্য, ৫৭ বছরের আফ্রিদি খাইবার এজেন্সি নামে এক সংস্থা চালাতেন। পাকিস্তানের সেনা শহর অ্যাবটাবাদে ভুয়া টিকাকরণ কর্মসূচি চালাতেন আফ্রিদি। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের উপর নজর রাখা। অপরদিকে, ২০১০ সালে গ্রেফতার করা হয় পাকিস্তানি স্নায়ুবিজ্ঞানী আফিয়া সিদ্দিকিকে। আমেরিকার দাবি, আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের খুন এবং খুনের চেষ্টা করেছিলেন তিনি। এই অভিযোগে আফিয়াকে ৮৬ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে নিউ ইয়র্কের একটি আদালত। আফ্রিদিকে পাকিস্তান মার্কিন চর বলেই মনে করে।
তবে আফিয়াকে ছেড়ে দেয়ার শর্তে আফ্রিদিকে ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবা যেতে পারে বলে ইমরান জানিয়েছেন। এই নিয়ে দুই দেশের এখনো আলোচনা শুরু হয়নি বলেই তিনি দাবি করেছেন।