স্বদেশ ডেস্ক:
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় নদীভাঙন আর বন্যা একসাথে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে উপজেলার বরাইদ, তিল্লি ও দিঘুলিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ৫২টি বসতবাড়ি ধলেশ্বরী নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছে নদীতীরের তিন শতাধিক পরিবার। বন্যায় উপজেলার নিম্নাঞ্চলসহ বেশীর ভাগ ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
ভাঙনের মুখে রয়েছে ফয়জুননেসা উচ্চবিদ্যালয়, আশ পাশের শতাধিক বসতবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবার এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া বন্যা আর ভাঙনকবলিত এলাকার এসব লোকজন ভাঙন আতঙ্কে এখন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। ভাঙনের হাত থেকে রক্ষায় বাড়িঘর, আসবাব ও গবাদিপশুসহ মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে লোকজন। ভাঙন প্রতিরোধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে স্থানীয় ব্যক্তিরা।
প্রতিবছর ধলেশ্বরী নদীর ভাঙনে বরাইদ ইউনিয়নের ছনকা, মোল্যাপাড়া, বিস্তীর্ণ এলাকা ভাঙনের কবলে পড়লেও ভাঙন প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় ব্যক্তিদের।
সরেজমিনে ভাঙনকবলিত এলাকায় দেখা যায়, বরাইদ ও তিল্লি এলাকায় ধলেশ্বরী নদীর ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। লোকজনের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভাঙনকবলিত এলাকার কয়েক শ’ একর আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনকবলিত ব্যক্তিদের দুর্ভোগের শেষ নেই। তিল্লি, মোল্যাপাড়া, গোপালপুর, ছনকা, পয়লা এলাকাও হুমকির মধ্যে রয়েছে। এসব এলাকার মানুষ তড়িঘড়ি করে সরিয়ে নিচ্ছে ঘরবাড়ি।
বরাইদ ইউপি চেয়ারম্যান মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, বরাইদ ইউনিয়ন ধলেশ্বরী নদী দ্বারা বিভক্ত। দীর্ঘদিন ধরেই বরাইদ ও ছনকা পয়েন্টে ভাঙন অব্যাহত আছে। গত দুই সপ্তাহে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ১৯টি বসত বাড়িসহ কয়েক শ’ একর আবাদি জমি। হুমকির মুখে পড়েছে ফয়জুননেসা উচ্চবিদ্যালয়, আব্দুর রহমান খাঁন উচ্চবিদ্যালয়, বরাইদ বাজারসহ নদীপাড়ের প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাসহ প্রায় তিন শতাধিক বসতবাড়ি।
তিল্লি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, ইউনিয়নের ২৭ টি বাড়ি ধলেশ্বরীর ভাঙনে হারিয়ে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে নদী পাড়ের লোকজনের নির্ঘুম রাত কাটে। প্রায় এক হাজার পরিবারের ফসলি জমি বন্যায় তলিয়ে গেছে।
শিক্ষাবিদ আমিনুর রহমান খাঁন মজলিশ বলেন, অনেক চেষ্টা আর তদবিরের পর ধলেশ্বরীর তীর সংরক্ষণের জন্য একটি বরাদ্দ পাওয়া গিয়েছিল। প্রকৌশলীদের গাফলতির কারণে ইতোমধ্যেই অনেক গুলো বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, বন্যা পরবর্তী সংরক্ষণের জন্য নদী তীর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
বরাইদ এলাকার নিয়ত আলী ও পুষ্প রাণী জানান, তারা ঘরবাড়ি, আবাদি জমিসহ সর্বস্ব হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এখন পর্যন্ত সরকারি এমনকি বেসরকারি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা তারা পাননি। হঠাৎ রাতের আঁধারে ভাঙন শুরু হলে তারা বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। রাতের আঁধারেই তাদের চোখের সামনে নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যায় ৪টি বসতঘর। এরপর থেকে আশপাশের সবাই নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
স্থানীয়দের মতে, অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে চলতি মৌসুমের প্রথমদিকে উপজেলার কয়েকটি বসতঘরসহ আবাদি জমি গ্রাস করে নিয়েছে রাক্ষুসে ধলেশ্বরী নদী।
স্থানীয়দের দাবি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দ্রুত ভাঙন কবলিত এলাকা প্রতিরোধে কাজ শুরু না করলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে সাটুরিয়া উপজেলার নদী তীরবর্তী অসংখ্য গ্রাম।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা শিমু আক্তার বলেন, বন্যায় উপজেলার ১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। ৫টি বিদ্যালয়ে সাময়িক ভাবে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বন্যায় উপজেলায় ৫৪৭ হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।
সাটুরিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসাঃ নাসরিন পারভীন বলেন, ভাঙন ও বন্যা কবলিত এলাকায় নিয়মিত খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ ৫৭টি পরিবারের মধ্যে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।