স্বদেশ ডেস্ক: বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পাস্তুরিত দুধে অ্যান্টিবায়োটিক ও বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতির বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাজারে যথেষ্ট প্রভাব পড়েছে। ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে বিক্রি। তাই খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে এতকিছুর পরও আগের প্রক্রিয়ায়ই পাস্তুরিত দুধ বাজারজাত করা হচ্ছে। এ সুযোগে বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে গুঁড়ো দুধের দাম।
তরল দুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় দুধে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক বা সিসা প্রবেশের সুযোগ নেই। ঢাবি অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের পরও তাদের দুধ বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু তাতে এ ধরনের কোনো সমস্যাই খুঁজে পাননি গবেষকরা। ফলে আতঙ্কিত না হয়ে ভোক্তাদের নিয়মিত দুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তারা।
জাতীয় ডেইরি উন্নয়ন ফোরামের তথ্যানুযায়ী, দেশে পাস্তুরিত তরল দুধের ৭০ শতাংশই বিপণন করে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনকারী শীর্ষস্থানীয় চার প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটা, আড়ং, প্রাণ ডেইরি ও আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ। গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিদিন গড়ে চার লাখ ২৫ হাজার লিটার দুধ বিক্রি করেছে। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তা দুই লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ লিটারে নেমে এসেছে। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুধ বিক্রি কমেছে দৈনিক এক লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ লিটার বা ৩৩ শতাংশ। তৃতীয় সপ্তাহে বিক্রির পরিমাণ আরও কমেছে বলে জানানো হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে। শুধু তাই নয়, দেশের ১৫টি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান দৈনিক প্রায় দুই লাখ খামারির কাছ থেকে পাঁচ লাখ লিটার দুধ ক্রয় করত। বর্তমানে তা তিন লাখ থেকে দুই লাখ ৭০ হাজার লিটারে এসে নেমেছে।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে গত ১৬ জুলাই দুধ পরীক্ষার প্রতিবেদন দাখিল করেছে। আইসিডিডিআরবি, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচার রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বিসিএসআইআর, প্লাজমা প্লাস, ওয়াফেন রিসার্চের ল্যাবে পাস্তুরিত, খোলা দুধ ও গোখাদ্য পরীক্ষা করে সংস্থাটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএসটিআই অনুমোদিত ১৪ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১টির পাস্তুরিত দুধে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর সিসা ও
ক্যাডিমিয়ামের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এ ছাড়া খোলা তরল দুধের ৫০টি নমুনার বেশিরভাগেই পাওয়া গেছে সিসা ও ক্যাডিমিয়ামের উপস্থিতি। এ প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা আগামী ২৮ জুলাই জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তবে এখনো পর্যন্ত ভোক্তাদের কোনো বার্তাই দেয়নি সংস্থাটি। এমনকি সমস্যার দ্রুত সমাধানে কোম্পানিগুলোও নিয়ন্ত্রক সংস্থার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
এ বিষয়ে জাতীয় ডেইরি ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান বলেন, ‘গত তিন সপ্তাহে আমাদের ৪০ শতাংশেরও বেশি বিক্রি কমেছে। তাই আমরা উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয়েছি। এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামারিরা। তারা দুধ বিক্রি করতে পারছেন না।’ মিল্ক ভিটার অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (পিপিএম) মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দুধ পরীক্ষা করে কোনো সমস্যা পাইনি। তাই ভোক্তাদের বলব, আতঙ্কিত না হতে। তার পরও সরকার যেহেতু সমস্যার কথা বলছে, তা হলে এর সূত্রপাত কোথায় সেটি খুঁজে বের করুক।’ প্রাণ গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘৯০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ফুটিয়ে পাস্তুরিত হয়। যেখানে ৭১ ডিগ্রিতেই সব দূষণ নষ্ট হয়ে যায়।’
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) মাহবুব কবীর বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে মিটিংয়ের মাধ্যমে ল্যাবের সক্ষমতা বাড়িয়ে বিভিন্ন ধাপে পরীক্ষা করা, অ্যান্টিবায়োটিক ও ভারী ধাতু পরীক্ষার ব্যবস্থা, খামারিদের সচেতন করতে পদক্ষেপ নেওয়া, গরুতে যাতে অ্যান্টিবায়োটিক না দেওয়া হয় সে ব্যবস্থা নেওয়া, অ্যান্টিবায়োটিক দিলেও নির্দিষ্ট সময়ে যেন তার দুধ বাজারে বিক্রি করা না হয়Ñ এসব বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হবে।’
এদিকে পাস্তুরিত দুধের এমন সংকটের সুযোগকে কাজে লাগাতে চাইছেন গুঁড়ো দুধের আমদানিকারকরা। এরই মধ্যে কেজিতে ২০-৩০ টাকা দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা। তাদের ভাষ্যমতে, বাজেটে শুল্ক বৃদ্ধির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও গুঁড়ো দুধের দাম বেড়ে গেছে। এ ছাড়া বর্তমানে দুধের চাহিদার তুলনায় জোগান কম হওয়ায় বেশি খরচে তা আমদানি করতে হচ্ছে। এসব কারণে গুঁড়ো দুধের দাম বৃদ্ধি পাবে।