স্বদেশ ডেস্ক:
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান পদ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন পার্টির কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ এবং সদ্য ঘোষিত চেয়ারম্যান জিএম কাদের। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের মৃত্যুশোক কাটিয়ে ওঠার আগেই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে শীর্ষ দুই নেতার দ্বিমত প্রকাশ্যে আসায় মনঃক্ষুণ্ণ দলটির অনেকেই। দলের শীর্ষপদ নিয়ে অনেক দিন ধরেই এরশাদের স্ত্রী রওশন ও ছোট ভাই জিএম কাদেরের মনোমালিন্য চলে আসছিল। এরশাদের অবর্তমানে ভাবি-দেবরের মতভিন্নতা আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন জাপা নেতারা।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর চার দিন পর সংবাদ সম্মেলন করে জিএম কাদেরকে পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেন জাপা মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। তবে সেখানে ছিলেন না রওশন এরশাদপন্থিরা। তখন থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল, রওশনপন্থিরা বিষয়টি সহজভাবে নেননি। ধারণার সত্যতা মেলে গত সোমবার রাতে। এদিন এক বিবৃতিতে জিএম কাদেরকে পার্টির চেয়ারম্যান মানতে নিজেদের আপত্তির কথা জানান রওশন এরশাদসহ জাপার ১০ নেতা।
রওশন এরশাদপন্থিদের দাবি, গঠনতন্ত্র না মেনে জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, গঠনতন্ত্রের ২০(২)-এর ‘ক’-তে বলা আছে, দলের প্রেসিডিয়ামের বৈঠক ডেকে সবার সম্মতিক্রমে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিতে হবে।
অন্যদিকে গতকাল মঙ্গলবার জিএম কাদের জাতীয় পার্টিতে নেতৃত্ব নিয়ে কোনো বিভেদ নেই দাবি করে গণমাধ্যমের কাছে বলেন, আমি পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এরশাদের নির্দেশনায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছি। এখনো সে মোতাবেকই চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করছি। জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ গঠনতন্ত্র অনুসরণ করেই চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন। তবে তারা যে নামেই সম্বোধন করবে তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। জাতীয় পার্টিতে কাজ করাটাই আসল কথা। তিনি আরও বলেন, কোনো সমস্যা থাকলে আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করব।
জাপার একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য আমাদের সময়কে জানান, শীর্ষ দুই নেতার ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান পার্টির নেতাকর্মী তথা জনসাধারণকে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে বলে তারা মনে করেন। এক নেতা বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর চল্লিশ দিন পার হওয়ার আগেই যদি ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে যায়, তা হলে পার্টির ভবিষ্যৎ কী তা বুঝতে বাকি নেই। ক্ষুব্ধ নেতারা বলছেন, ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কারণেই এর আগে জাতীয় পার্টি চার/পাঁচ ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এবারও দলটি সেদিকে যাচ্ছে কিনা সে শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
জিএম কাদেরের পক্ষেও যুক্তি দিচ্ছেন কেউ কেউ। জানতে চাইলে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, আমাদের প্রয়াত চেয়ারম্যান (এরশাদ) সবার সামনে জিএম কাদেরকে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। এটা নিয়ে বিভ্রান্তির কিছু নেই। তার সেই ঘোষণা অনুযায়ী আমাদের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা সংগঠনের গঠনতন্ত্রের রেফারেন্স দিয়ে জিএম কাদেরকে পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। এ নিয়ে আপত্তির কিছু নেই।
পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চেয়ারম্যানের প্রেস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভ রায় বলেন, গঠনতন্ত্রের ২০/১-ক ধারা অনুযায়ী এরশাদ পার্টির ভবিষ্যৎ চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদেরের নাম ঘোষণা করে যান।
২০/১-ক ধারায় বলা আছে, পার্টির চেয়ারম্যান তার ক্ষমতাবলে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। তবে এরশাদের মৃত্যুর পর এই ধারা পার্টিতে কতটুকু কার্যকর থাকবে এ নিয়ে কথা বলার অবকাশ আছে বলে মনে করছেন রওশনের অনুসারীরা। তাদের মতে, দেশের প্রধান প্রধান দলের গঠনতন্ত্রে সভাপতি বা চেয়ারম্যানের এ রকম ক্ষমতা আছে। কিন্তু পার্টির সভাপতির মৃত্যুর পর এমন সিদ্ধান্ত বহাল রাখার ইতিহাস কোনো দলে নেই।
এ অবস্থায় দলটিকে টিকিয়ে রাখতে হলে সবার মতামতের ভিত্তিতেই পার্টি পরিচালনা করতে হবে বলে মনে করেন জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর আসুদ। তিনি বলেন, সবার মতামতের ভিত্তিতে পার্টি পরিচালিত হলে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে এবং জাপা আরও বহু দূর এগিয়ে যাবে।