স্বদেশ ডেস্ক:
করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হয়েছিল। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ও সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও দেখতে দেখতে নির্বিঘেœই পেরিয়ে গেছে একটি মাস। শুরুতে কম হলেও ধীরে ধীরে ক্লাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়তে দেখা গেছে। ভয় ও দ্বিধা কাটিয়ে ক্লাসে প্রাণোচ্ছ্বল ছিল তারা। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনায় ফিরে খুশি শিক্ষক-শিক্ষার্থী আর অভিভাবকরা। করোনা সংক্রমণের হার নিম্নমুখী হওয়ায় বাড়ানো হয়েছে বিভিন্ন শ্রেণির ক্লাসের সংখ্যা। অবশ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন পূজার ছুটি চলছে। শিক্ষা প্রশাসন জানিয়েছে, সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের প্রতি আগামীতেও কঠোরতা অব্যাহত রাখা হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, স্কুল খুলে দেওয়ার এক মাস হয়ে গেল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে যে দুশ্চিন্তা ছিল, সেটা কাটিয়ে উঠছি। খুলে দেওয়ার প্রথম সপ্তাহে যে সংখ্যক শিক্ষার্থী ক্লাসে ছিল তার চেয়ে চতুর্থ সপ্তাহে উপস্থিতি বেড়েছে। যেসব পরিবার করোনা মহামারীতে স্থানচ্যুত হয়েছে এমন পরিবারের শিক্ষার্থীদের কীভাবে ক্লাসে ফিরিয়ে আনা হবে- এ প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি প্রতিনিয়ত স্কুলগুলোয় খোঁজখবর নিচ্ছি প্রাথমিকের ছেলেমেয়েরা ঠিকমতো স্কুলে আসছে কিনা? কারা আসতে পারছে না। তাদের খোঁজ নিচ্ছেন শিক্ষকরা। কোনো পরিবার যদি এক শহর থেকে আরেক শহর বা গ্রামে চলে গিয়ে থাকে ওখানেই যেন সরকারি স্কুলে সে লেখাপড়া করতে পারে সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে একটি অফিস আদেশও জারি করেছি যে সরকারি-বেসরকারি যে স্কুল হোক- শিক্ষার্থী তার
সবশেষ ক্লাসের যে কোনো একটি ডকুমেন্ট নিয়ে তার বাড়ির কাছের সরকারি স্কুলে গেলে তাকে ভর্তি নেবে। করোনা নিয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণের হার নিম্নমুখী। এরপরও কোনো রকম ঝুঁকি নেব না। শিক্ষাঙ্গনে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ প্রতিপালনের প্রতি কঠোরতা অব্যাহত থাকবে। কোনোভাবেই কেউ যেন গাছাড়া ভাব না করেন।
স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার পর থেকে সারাদেশের প্রতিদিনের তথ্য নিচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এর মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনসহ বিভিন্ন তথ্য মনিটরিং করা হচ্ছে। মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, আমরা যে সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এটি খুবই কঠিন সময় ছিল। এখন করোনা সংক্রমণের যে নিম্নগতি, তাতে অনেকটা স্বস্তির।
স্কুল খুলে দেওয়ার প্রথম থেকে পূজার ছুটির আগ পর্যন্ত উপস্থিতি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বেইলি রোডের প্রভাতি শাখার প্রধান জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মহসিন তালুকদার। তিনি বলেন, প্রথম দিকে কোনো কোনো ক্লাসে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ উপস্থিতি ছিল। পূজার বন্ধের আগে ৯০ থেকে ৯৯ শতাংশ উপস্থিতি দেখেছি।
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার রুটিন হয়েছে। পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হচ্ছে।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড স্কুলের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মোস্তফা জামান চৌধুরী বলেন, অনেক ভয়, দ্বিধা আর সংকোচের মধ্যেই ক্লাস শুরু হয়েছিল। এখন যে সংক্রমণের হার নিম্নমুখী তাতে অনেকটা নির্ভয় লাগছে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া স্বাভাবিক হওয়ায় অনেকটা দুশ্চিন্তমুক্ত। খুশিও লাগছে।
সরকারি কবি নজরুল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসফিয়া জানান, যে কয় দিন ক্লাস করতে পেরেছি খুবই আনন্দিত যে বন্ধুদের সঙ্গে ক্লাসে উপস্থিত হতে পেরেছি। এখন পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আর যেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ না হয়, নির্বিঘেœ যেন পরীক্ষাটা দিতে পারি।
সংক্রমণের হার নিম্নগতি থাকায় ইতোমধ্যে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা, প্রাথমিক স্কুল এবং মাধ্যমিক স্কুলে বিভিন্ন শ্রেণির ক্লাসের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ইবতেদায়ি পর্যায়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একদিন করে ক্লাস ছিল। পরে তা বাড়িয়ে দুদিন করা হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও সপ্তাহে দুদিন করে ক্লাস হচ্ছে। অষ্টম ও নবম শ্রেণির ক্লাসও সপ্তাহে দুই দিন নেওয়া হচ্ছে। যা প্রথমদিকে একদিন করে ছিল।
করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। সংক্রমণের হার না কমায় প্রায় দেড় বছর এগুলো বন্ধ ছিল।