রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪১ পূর্বাহ্ন

তিন মাসে আসছে ২ কোটি ৯৬ লাখ ডোজ, টিকাদানে চার পরিকল্পনা

তিন মাসে আসছে ২ কোটি ৯৬ লাখ ডোজ, টিকাদানে চার পরিকল্পনা

স্বদেশ ডেস্ক: দেশে আগামী তিন মাসে আরও ২ কোটি ৯৬ লাখ ডোজ করোনা ভাইরাসের টিকা আসছে। এর মধ্যে ২৫ অক্টোবরের মধ্যে ৫০ লাখ ডোজ, ২৯ নভেম্বরের মধ্যে ১ কোটি ২৬ লাখ ডোজ এবং ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে আসবে ১ কোটি ২০ লাখ ডোজ। ইতোমধ্যে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ডের বাকি চালানও আসতে শুরু করেছে। আগামী নভেম্বরের পরে আরও ৬ কোটি টিকা ও সিরিঞ্জ কেনারও প্রস্তুতি চলছে। ফলে আসছে দিনগুলোয় টিকাদান কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে বলে মনে করছে সরকার।
জানা গেছে, প্রাপ্তিসাপেক্ষে দেশে টিকাদানের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে চারটি পরিকল্পনা। সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে ভ্যাকসিন ডেপ্লায়মেন্ট কমিটি করোনা টিকাসংক্রান্ত এসব পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, কোভ্যাক্সের আওতায় দেশে আসা মার্কিন কোম্পানি ফাইজারের টিকা ১২ থেকে ১৭ বছরের শিশু এবং বিদেশগামী কর্মীদের দেওয়া হবে। রাজধানীর ঢাকার পাশাপাশি আরও ১৯ জেলায় দেওয়া হবে ফাইজারের টিকা। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল সোমবার থেকে ১৯ জেলায় টিকা পাঠানো শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আপাতত যেসব জেলায় ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে সেগুলো হলো- বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, গাজীপুর, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, যশোর, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, সুনামগঞ্জ, সিলেট ও হবিগঞ্জ। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৪টি, চাঁদপুরে ২টি, নেয়াখালীতে ২টি, নরসিংদীতে ৩টি, ময়মনসিংহে ২টি এবং রাজশাহীতে ৮টি কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া রাজধানী ঢাকার উভয় সিটি করপোরেশনে এই টিকা দেওয়া হবে ৮টি কেন্দ্রে। ভবিষ্যতে মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ আরও ২৬ জেলায় ফাইজারের টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ওসব জেলার টিকাদান সম্পৃক্তদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে। পাশাপাশি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের
১৬ কেন্দ্রের সঙ্গে জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতালে) চালু করা হবে ফাইজারের টিকাদান কেন্দ্র।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র বলছে, টিকার প্রাপ্তি ও সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বছরের আগামী দিনগুলোর জন্য চারটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রথম পরিকল্পনা অনুযায়ী, দিনে ৬ লাখ করে প্রতি মাসে ২ কোটি টিকা প্রদান করা হবে। এই পরিকল্পনায় মাসে একবার পরিচালনা করা হবে বিশেষ ক্যাম্পেইন। দ্বিতীয় পরিকল্পনা অনুযায়ী, দিনে ১০ লাখ করে মাসে ৩ কোটি টিকা দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে মাসে এক বা দুবার বিশেষ ক্যাম্পেইন হতে পারে। তৃতীয় পরিকল্পনায় দিনে ৬ থেকে ১৫ লাখ করে মাসে ৪ কোটি টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিশেষ ক্যাম্পেইন হবে একবার। চতুর্থ পরিকল্পনা অনুযায়ী, দিনে ৬ লাখ টিকাদানের পাশাপাশি দেশের প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে মাসে একবার করে বিশেষ ক্যাম্পেইন পরিচালনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে, বিগত ২৮ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত বিশেষ ক্যাম্পেইনে ৮২ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য ক্যাম্পেইনের জন্য আরও ৮২ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সিনোফার্মের ৫৫ লাখ ডোজ টিকা এসেছে। যার মধ্যে ৫২ লাখ ডোজ ইতোমধ্যে সব জেলায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর এমএনসিঅ্যান্ডএইচ এবং ভ্যাকসিন ডেপ্লায়মেন্ট প্লানের মহাসচিব ডা. শামসুল হক বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। চলতি মাসে ক্যাম্পেইনের মধ্যেমে দ্বিতীয় ডোজের ৮২ লাখ টিকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া ফাইজারের টিকা ঢাকার বাইরে প্রথম ১৯ জেলায় এবং পর্যায়ক্রমে আরও ২৬ জেলায় দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করছি, সব কাজ সঠিক সময়ে সম্পন্ন হবে।
জানা গেছে, গত ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড এসেছে ১ কোটি ৪৩ লাখ ২৭ হাজার ৮৬০ ডোজ। এর মধ্যে দুই ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৩১ লাখ ৭৩ হাজার ৮০৪ জনকে। বর্তমানে কোভিশিল্ড মজুদ আছে ১১ লাখ ৫৪ হাজার ৫৬ ডোজ। এ পর্যন্ত ফাইজারের টিকা এসেছে ৬১ লাখ ২১ হাজার ৪৪০ ডোজ। যা দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৬৭১ ডোজ। মজুদ রয়েছে ৫৮ লাখ ৭১ হাজার ৭৬৯ ডোজ। মডার্নার টিকা এসছে ৫৫ লাখ ৬০ ডোজ। এ পর্যন্ত দুই ডোজ দেওয়া হয়েছে ৫১ লাখ ৪০ হাজার ৬১৩ জনকে। অবশিষ্ট রয়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার ৭৯১ ডোজ। সিনোফার্মের টিকা এসেছে ৪ কোটি ৬০ লাখ ৭১ হাজার ৬০০ ডোজ। দুই ডোজ মিলে এ পর্যন্ত এই টিকা দেওয়া হয়েছে ৩ কোটি ৪৪ লাখ ৫২ হাজার ১৩২ ডোজ। বর্তমানে মজুদ রয়েছে ১ কোটি ১৬ লাখ ১৯ হাজার ৪৬৮ ডোজ।
সব মিলে দেশে এ পর্যন্ত টিকা এসেছে ৭ কোটি ২০ লাখ ২০ হাজার ৯৬০ ডোজ। এর মধ্যে প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৯৪ হাজার ১০৫ জন। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ১ কোটি ৭৬ লাখ ২২ হাজার ১১৫ জন। দুই ডোজ পেয়েছেন ৫ কোটি ৩০ লাখ ১৬ হাজার ২২০ জন। বর্তমানে মজুদ রয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ ৪ হাজার ৭৪০ ডোজ। এ ছাড়া এ পর্যন্ত টিকা পেতে নিবন্ধন করেছেন ৫ কোটি ১৩ লাখ ৫৮ হাজার ৩৪৫ জন। নিবন্ধন করেছেন কিন্তু এখনো টিকা পাননি ১ কোটি ৫৯ লাখ ৬৪ হাজার ২৪০১ জন।
করোনা টিকা সম্পর্কিত নতুন পরিকল্পনার বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ফাইজারের পরিকল্পনায় কিছুটা জটিলতা রয়েছে। তবে অন্যান্য টিকার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা ঠিক আছে। তবে একটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে, দেশে মোট নিবন্ধন করেছে ৫ লাখের কিছু বেশি মানুষ। টিকাদান কর্মসূচি কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নিতে হলে নিবন্ধনের হার বাড়াতে হবে। পাশাপাশি নিশ্চিত করতে হবে বয়স্ক মানুষদের টিকা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877