স্বদেশ ডেস্ক:
স্বর্ণ চোরাচালান, ঘুষ গ্রহণ, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হয়েও পাচারকারী চক্রের সঙ্গে যোগসাজশে মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন পণ্য বিমানবন্দরের কার্গো গুদাম থেকে গায়েব করে দেওয়াসহ নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও গর্হিত অপরাধের দায়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের বিচারে অন্তত বিশবার দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন যে কর্মকর্তা, সেই তিনিই রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থাটির নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান। তার নাম মো. মোখলেসুর রহমান মৃধা। গত ১১ জুলাই তাকে বিমানের নিরাপত্তা বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপকের (ডিজিএম) দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এদিকে দায়িত্বপ্রাপ্তির এক সপ্তাহের মাথায় নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান মোখলেসুর রহমানকে নিরাপত্তার জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানের ভিত্তিতে। এ কারণে বিমানবন্দর ত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। ঘটনাক্রমে প্রকাশ, গত শুক্রবার সকালে বিমানের একটি ফ্লাইটে প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে যান। সেদিন বিমানের নিরাপত্তা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে মোখলেসুর রহমান মৃধা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে পৌঁছলে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাকে দ্রুত বন্দর ত্যাগ করতে বলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি বন্দর ত্যাগে বাধ্য হন।
প্রধানমন্ত্রীর যাত্রার আগে দুটি গোয়েন্দা সংস্থা তার ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে পিলে চমকানো তথ্য পায়। মোখলেসুর রহমানের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) যাচাই করে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দারা জানতে পারেন ১৯৮৬ সালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চাকরিতে যোগদানের পর স্বর্ণ চোরাকারবারে সহায়তাসহ তার নানা কুকীর্তি।
একাধিক সূত্র জানায়, মোকলেসুর রহমান মৃধার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ন্যূনতম ২০টি অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষের বিচারে। সেই লোকই কীভাবে বিমানে চাকরি করছেন? শুধু তাই নয়, নিরাপত্তার মতো খুবই স্পর্শকাতর একটি বিভাগে তিনি পদায়ন পেয়েছেন কীভাবে? এসব প্রশ্ন এখন বিমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুখে মুখে।
বিমান সূত্র জানায়, ১৯৮৬ সালে নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিতে যোগদানের দুই বছর পর একজন নিরাপত্তা রক্ষীর কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে তাকে অপরাধ থেকে খালাস করে দেন মো. মোখলেসুর রহমান মৃধা। এ জন্য তখন তাকে সতর্কও করা হয়।
বিমান সূত্রমতে, ১৯৯৩ সালে কার্গো ডেলিভারি গেটে দায়িত্ব পালনকালে অসাধু এজেন্সির কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে ৮টি মূল্যবান পার্সেল পাচারে সহায়তা করেন মোখলেসুর। ১৯৯৫ সালে কার্গো গুদামে ডিউটিকালে ১৫০ কার্টুন মালামাল পাচারের অপরাধে মোখলেসুর রহমান মৃধার এক বছর পদোন্নতি স্থগিত রাখা হয়। পরের বছর আন্তর্জাতিক স্বর্ণকারবারি দক্ষিণখানের আশকোনার সোনা মুজিবুরসহ কয়েক স্বর্ণ পাচারকারীকে বিমানবন্দরের কার্গো কমপ্লেক্সে অবৈধভাবে ঢুকতে দেন মোখলেসুর রহমান। পরে তারা চোরাই স্বর্ণ নিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। ওই সময় কর্তব্যরত নিরাপত্তা সুপারভাইজার জয়নাল বাধা দেন।
এর পরও মোখলেস চোরাকারবারিদের স্বর্ণের চালান নিয়ে বের হতে সহযোগিতা করেন। যে কারণে তার সাজা হয়। জানতে চাইলে মোখলেসুর রহমান মৃধা আমাদের সময়কে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ এগুলো প্রশাসনিক ব্যাপার। এ নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। বিমান সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালে এজেন্সির ১০ টন মালামাল ওজনে কারচুপির সহায়তা করায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।
১৯৯৯ সালের ১ জানুয়ারি রাতে নিজের কর্তব্য এলাকার বাইরে গিয়ে কার্গো হাউসে চোরাকারবারিদের সহায়তার কারণে ফ্লাইট বিলম্ব হয়। পরে তাকে যশোর বিমানবন্দরে বদলি করা হয়। কিন্তু সেখানে থাকা অবস্থাতেও ঢাকা কাস্টমস হলে রাতের বেলা অবৈধভাবে প্রবেশ করে অনিয়ম করায় তৎকালীন সিভিল অ্যাভিয়েশনের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোখলেসের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে বিমান কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ দেন।
এর আগে ২০০৫ সালের পদোন্নতি পেয়ে ব্যবস্থাপক নিরাপত্তার (কার্গো) দায়িত্বে থাকাকালে বিভিন্ন চোরাচালান ও স্বর্ণ চোরচালানিদের সঙ্গে জড়িত হয়ে মুদ্রাসহ পাচারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিমান মন্ত্রণালয়ে গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ প্রতিবেদন পাঠায়। যে কারণে ওই বছরের জুলাই মাসে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
২০০৯ সালে চাকরিতে পুনর্বহালের পর বিমানের মুদ্রণ ও প্রকাশনা উপবিভাগে মহাব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত থাকাকালে ইমপ্রেস্ট ফান্ড হোল্ডার হিসেবে ২০১৩ সালে ৫ লাখ ৪৯ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগের শাস্তিস্বরূপ তাকে তাকে পদাবনতি দিয়ে বিমান ট্রেনিং সেন্টারে ওএসডি রাখা হয়।
অভিযোগে বলা হয়, ২০১১ সালে কার্গো আমদানি গুদামের ডেলিভারি গেটের নিরাপত্তা ইনচার্জ হিসেবে কর্তব্য পালনকালে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অসাধু এজেন্সির সঙ্গে যোগসাজশে কোটি টাকার মোবাইল ফোন পাচারে সহযোগিতা করেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোখলেসুর রহমান নিজেকে পীর বলে দাবি করছেন।