স্বদেশ ডেস্ক: প্রায় দেড় দশক আগে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম ব্যবসার নামে প্রতারণার মাধ্যমে দেশের লাখ লাখ মানুষের হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ডেসটিনি, যুবকসহ কয়েকটি কোম্পানি। অভিযোগের পর সরকার এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও বিনিয়োগকৃত অর্থ এখনো কেউ ফেরত পাননি। সম্প্রতি ই-কমার্সের নামে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় নানা আলোচনার মধ্যেই বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির বক্তব্যে অনেকটা আশার সঞ্চার হয়েছে যুবক ও ডেসটিনির প্রতারিত গ্রাহকদের মধ্যে। বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ডেসটিনি ও যুবকের যে সম্পদ রয়েছে, তা বিক্রি করে গ্রাহকদের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ টাকা ফেরত দেয়া যাবে। বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে সরকারের পক্ষ থেকে আর কোনো প্রতিক্রিয়া জানা না গেলেও, বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার কথা জানিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এমন প্রেক্ষাপটে ডেসটিনি ও যুবকের সম্পদগুলো কোথায় কি অবস্থায় আছে এবং কোন প্রক্রিয়ায় সেই অর্থ গ্রাহকরা পাবেন তা নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
যুবকের সম্পদ এখনো বেদখলে: ১৯৯৬ সালে বহুস্তর বিশিষ্ট বিপণন বা এমএলএম ব্যবসা শুরু করে যুব কর্মসংস্থান সোসাইটি (যুবক)। এরপর বিভিন্নভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে বিপুল পরিমাণ অর্থ। ২০০৫ সালে যুবকের প্রতারণামূলক কার্যক্রম নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
সর্বশেষ গত বছরও যুবকের বেদখল সম্পদ সরকারি হেফাজতে নিয়ে তা বিক্রির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার উদ্যোগের কথা জানা গিয়েছিল। এ সংক্রান্ত প্রস্তাবও অনুমোদন দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি।
ডেসটিনির স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পুলিশে জিম্মায়: যুবকের পরপরই প্রতারণা এবং জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে ডেসটিনির বিরুদ্ধে। মানুষের কাছ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও জালিয়াতির মামলায় কোম্পানির কর্তাব্যক্তিরা এখন কারাগারে। তবে যুবকের অর্থ বেদখলে থাকলেও ২০১৩ সালে ডেসটিনির স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির দায়িত্ব পুলিশকে দেয়ার আদেশ দেয় আদালত। তখন থেকেই ডেসটিনির সম্পদ পুলিশের জিম্মায় রয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে থাকা ডেসটিনির সম্পদ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এবং রাজধানীর বাইরের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছেন সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার (এসপি)।
জানা যায়, এমএলএম পদ্ধতির ব্যবসার মাধ্যমে ২০০০ সালে যাত্রা শুরু করে ডেসটিনি। শুরু থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত গ্রাহকের কাছ থেকে ডেসটিনি তুলে নেয় ৪ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। ক্রেতা, পরিবেশক ও বিনিয়োগকারীসহ কোম্পানিটির গ্রাহকসংখ্যা ছিল ৪৫ লাখ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকাসহ দেশের ২২টি জেলায় ডেসটিনির সম্পদ রয়েছে। এ সম্পদ দুই ভাগে বিভক্ত করে প্রতিষ্ঠানের ও পরিচালকদের নামে করা হয়েছিল। রাজধানীতে ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমীনেরই ২৮টি ফ্ল্যাট রয়েছে। পুরান ঢাকার ২৫ নম্বর কোর্ট হাউস স্ট্রিট ভবন ও ধানমণ্ডির বাড়ি রফিকুল আমীনের স্ত্রী ফারাহ দীবার নামে। ঢাকার কল্যাণপুরের দারুস সালাম ও পুরানা পল্টন লেইনের স্থাপনাবিহীন বাড়ি এবং বাংলামোটরে নাসির ট্রেড সেন্টারের ১০ম তলায় রয়েছে ৫ হাজার বর্গফুটের ফ্লোর। ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইনের নামে সিদ্ধেশ্বরী, খিলগাঁও, গেণ্ডারিয়া, ক্যান্টনমেন্ট ও ভাটারায় প্লট-ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া ডেসটিনির ২৪টি রাবার বাগান রয়েছে বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে। খুলনায় ৭ একর জমি, ৬ বিভাগীয় শহরে বিজনেস সেন্টার নির্মাণের জমি, কক্সবাজারে জমিসহ হোটেল ও গাজীপুরে ডেসটিনি অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ স্থাপনের জন্য জমি রয়েছে।
ওদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার থেকে যুবক ও ডেসটিনির গ্রাহকদের টাকা ফেরতের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা খুবই কঠিন। সম্প্রতি দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম মানবজমিনকে বলেন, গ্রাহকদের টাকা ফেরতের বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। এটার জন্য সময় লাগবে। এটা যে নিশ্চিতভাবে পাবে সেটাও এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। এটি আইনি জটিল প্রক্রিয়ায় বাধা পড়ে আছে। অপরাধীদের হয়তো বিচারের ব্যবস্থা আছে, কিন্তু টাকা ফেরতের ব্যাপারটি সময়সাপেক্ষ।