মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৬:২৮ অপরাহ্ন

সাংবাদিকের সাক্ষ্য: ওসি প্রদীপ রিমান্ডে অমানুষিক নির্যাতন চালান

সাংবাদিকের সাক্ষ্য: ওসি প্রদীপ রিমান্ডে অমানুষিক নির্যাতন চালান

স্বদেশ ডেস্ক:

মাদকের বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করায় ধরে নিয়ে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে রিমান্ডের নামে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ। সাক্ষ্য প্রদানকালে আদালতকে এ তথ্য জানান সিনহা হত্যামামলার ১৮তম সাক্ষী সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যামামলার বিচারিক কার্যক্রমের চতুর্থ দফার দ্বিতীয় দিনে গতকাল বুধবার কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে সাক্ষ্য দেন তিনি। এ ছাড়াও এদিন টেকনাফ হোয়াইক্যংয়ের সালেহ আহমদ ও বেবী বেগমের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। এ নিয়ে এই মামলায় মোট ২০ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম জানান, বুধবার সকাল সোয়া ১০টায় জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে এ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। তিনি জানান, প্রথমে সাক্ষী হামজালালকে ওসি প্রদীপের আইনজীবীসহ তিন আসামির আইনজীবী জেরা করেন। এ ছাড়া সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান, গৃহবধূ বেবী বেগম এবং স্থানীয় ছালেহ আহমেদ আদালতে জবানবন্দি দেন। আগামী ধার্য তারিখে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা বেবী বেগমকে জেরা করবেন। আদালত বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় মুলতবি ঘোষণা করে আগামী ১০, ১১ ও ১২ অক্টোবর এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।

পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, আদালতে জবানবন্দি দানকালে সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তাফা খান জানিয়েছেন ওসি প্রদীপের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি, ক্রসফায়ার নিয়ে প্রতিবেদন করায় তাকে নানাভাবে হুমকি দেন। একপর্যায়ে তিনি (সাংবাদিক ফরিদুল) সপরিবারে ঢাকায় চলে যান। ওসি প্রদীপ ঢাকার মিরপুর থেকে তাকে আটক করে কক্সবাজারে নিয়ে আসেন এবং ক্রসফায়ারের ভয় দেখান। এক পর্যায়ে ওসি তাকে টেকনাফ থানায় নিয়ে গিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালান। তার চোখে মরিচের গুঁড়া দিয়ে থেঁতলে দেন। ওই অবস্থায় তাকে কক্সবাজার সমিতি পাড়ায় তার বাসায় নিয়ে এসে চার হাজার পিস ইয়াবা, অস্ত্র এবং বিদেশি মদের বোতল ঢুকিয়ে দিয়ে তাকে একে একে ছয়টি মামলা দিয়ে জেলে পাঠান। এ সময় ওসি প্রদীপ ও তার বাহিনীর নির্যাতনে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলেও ওসি বাধা দেন। পরে মেজর সিনহা কক্সবাজার এসে ফরিদুল মোস্তফা খানের সঙ্গে কারাগারে দেখা করার প্রোগ্রাম করেন। কিন্তু বিষয়টি জেনে যান ওসি প্রদীপ। তার কুকীর্তির কথা যেন মেজর সিনহা তার ডকুমেন্টারিতে তুলে ধরতে না পারেন সেজন্য তাকে (সিনহা) পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন ওসি প্রদীপ বাহিনী।

২০১৯ সালের ২৪ জুন থেকে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন অনলাইনে মাদকের বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করেন সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান। সেসব সংবাদে ওসি প্রদীপের অনেক কুকীর্তির কথা উঠে আসে।

এদিকে আদালতে সাক্ষ্যদানকালে গৃহবধূ বেবী বেগম জানান, ওসি প্রদীপ টেকনাফ থানায় দায়িত্ব পালনকালে তার বাড়িতে ইয়াবা তল্লাশির নামে তার স্বামীকে আটক করে নিয়ে যান। ওসি তাদের কাছে ৪০ লাখ টাকা দাবি করেন। তারা ১৫ লাখ টাকা দিলেও ওসি প্রদীপ তাদের ছাড়েননি। পরে তার মেয়েকেও আটক করে থানায় আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন ও ধর্ষণ করেন। এক পর্যায়ে তার মেয়েকে ইয়াবা মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়ে জেলে পাঠান। এসব বিষয়ে তৎকালীন পুলিশ সুপারকে বিচার দিতে গেলে ওসি প্রদীপ কৌশলে তাকেও (বেবী) গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠান। জেলখানায় তার মেয়ের সঙ্গে দেখা হলে তার মেয়ের ওপর শারীরিক নির্যাতন ও ধর্ষণের কাহিনী তাকে জানান।

একই এলাকার দিনমজুর ছালেহ আহমেদও আদালতে জবানবন্দি দানকালে ওসি প্রদীপের ক্রসফায়ারের নানা কাহিনী তুলে ধরেন।

গত বছর ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোর্স্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় গত বছর ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877