সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৯:০০ অপরাহ্ন

ট্রাংকভর্তি তরুণীর লাশের পরিচয় মিলল ৬ বছর পর

ট্রাংকভর্তি তরুণীর লাশের পরিচয় মিলল ৬ বছর পর

স্বদেশ ডেস্ক:

রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে ঈগল পরিবহনের একটি বাসে ছয় বছর আগে ট্রাংকভর্তি তরুণীর লাশ মেলে। পরিচয় না পাওয়ায় মরদেহটি অজ্ঞাতনামা হিসেবেই উল্লেখ করে পুলিশ। পরে এ ঘটনায় দারুসসালাম থানার এসআই জাহানুর আলী বাদী হয়ে ২০১৫ সালের ৩ মে একটি মামলা করেন। শুরুতে প্রায় তিন মাস তদন্ত করে থানাপুলিশ। এর পর ঘটনার তদন্ত শুরু করে সিআইডি। কিন্তু দীর্ঘ চার বছরে তারাও রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি।

মামলাটি লোমহর্ষক ও চাঞ্চল্যকর হওয়ায় পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। দুবছর তদন্ত করেই রহস্য উন্মোচন ও জড়িত আসামি রেজাউল করিম স্বপনকে গত শুক্রবার কুমিল্লার ইপিজেড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর তিনি হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার এ তথ্য জানান।

ডিআইজি বনজ কুমার বলেন, ২০১৫ সালের ৩ মে সকালে চট্টগ্রামে কে খান মোড়ে ঈগল পরিবহনের কাউন্টারে টিকিট কেটে বাসে একটি ট্রাংক তুলে দেন এক ব্যক্তি। এ সময় তিনি হেলপারকে বলেনÑ সামনের ভাটিয়ারী কাউন্টার থেকে এ টিকিটের যাত্রী উঠবে। কিন্তু পরবর্তী ওই কাউন্টার থেকে যাত্রী না ওঠায় বাসটি ঢাকার উদ্দেশে রওনা করে এবং বিকালে গাবতলী এসে পৌঁছায়। এর পর বাসের সব যাত্রী তাদের জিনিসপত্র নিয়ে নেমে যান। পরে হেলপার দেখেন যে, একটি ট্রাংক মালিকবিহীন পড়ে আছে। তখন বাসচালক-হেলপার মিলে সেটি নামিয়ে দেখেন এটি খুব ভারী। সন্দেহ হওয়ায় তারা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে ট্রাংকটি খুলে অজ্ঞাতনামা এক তরুণীর মরদেহ দেখতে পান। সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য সেটি মর্গে পাঠানো হয়। পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় মরদেহটি দাফন করা হয় অজ্ঞাত হিসেবে।

ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ভিকটিমকে শনাক্তের জন্য সব ধরনের পদ্ধতিই প্রয়োগ করে পিবিআই। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম শহর ও জেলা এলাকার সব থানায় নিখোঁজ জিডির অনুসন্ধান করা হয়। শতাধিকের মধ্যে ২০১৫ সালের ১০ জুন ৫৯৯ নম্বর একটি জিডিতে দেখা যায়, শম্পা বেগম চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থেকে নিখোঁজ হন। ওই ঘটনায় নিহত শম্পার ভগ্নিপতি আবদুল মান্নান পাহাড়তলী থানায় জিডি করেন। এর সূত্র ধরে আবদুল মান্নান ও নিহত শম্পার বাবা ইলিয়াস শেখের (অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য) সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ভিকটিম শম্পার গ্রামের বাড়ি খুলনার দৌলতপুর থানার দেওয়ানা উত্তরপাড়ায়।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, ২০১৩ সালে রেজাউল করিম স্বপন (বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো নৌবাহিনীর সদস্য) খুলনা তিতুমীর নৌঘাঁটিতে কর্মরত ছিলেন। এ সময় শম্পা হাসপাতালে মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্টের কাজ করতেন। সেখানেই শম্পার সঙ্গে রেজাউলের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রথমে প্রেম ও পরে বিয়ের জন্য চাপ দিলে রেজাউল বদলি হয়ে চট্টগ্রাম চলে যান। ভিকটিম শম্পাও কিছুদিন পর চট্টগ্রামে তার এক ফুফুর বাসায় যান। তিনি ফয়’স লেক এলাকায় একটি হোটেলে কিছুদিন অবস্থান করেন। পরে পাহাড়তলী থানার উত্তর গ্রিনভিউ আবাসিক এলাকায় অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আনোয়ার হোসেনের টিনশেড বাড়ির একটি বাসায় সাবলেট নিয়ে শম্পাকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন রেজাউল। ২০১৫ সালের মে পর্যন্ত তারা একত্রে বসবাস করেন। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করলেও তারা বিয়ে করেননি।

তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য দেখা দিলে ২০১৫ সালের ২ মে গভীর রাতে শম্পাকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন রেজাউল। মরদেহ গোপন করার উদ্দেশ্যে একটি ট্রাংকে ভরে ঈগল পরিবহনের বাসে তুলে দেন। পরে শম্পার বাবাকে রেজাউল জানান, তাকে খুলনার বাসে তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শম্পা বাড়িতে না পৌঁছলে তারা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেন। না পেয়ে ভিকটিমের পরিবার পাহাড়তলী থানায় জিডি করেন। ওই বছরই ভিকটিমের বাবা আসামি রেজাউলের বিরুদ্ধে নৌবাহিনী চট্টগ্রাম অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। তদন্তে বিভিন্ন অপরাধ সংশ্লিষ্টতার কারণে রেজাউলকে ২০১৯ সালে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877