শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৮:৪২ অপরাহ্ন

জটিলতা পিছু ছাড়ছে না টিকা ব্যবস্থাপনায়

জটিলতা পিছু ছাড়ছে না টিকা ব্যবস্থাপনায়

স্বদেশ ডেস্ক:

দেশে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী টিকা অব্যবস্থাপনায় নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধনের পর র্দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেও অনেকে এসএমএস পাচ্ছেন না। আবার এসএমএস পেলেও কেন্দ্রে গিয়ে টিকা পেতে নানা ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। এতে নিবন্ধিতরা টিকা না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ছেন। বিদেশগামীরাও নির্ধারিত সময়ে টিকা না পেয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। আবার ফাইজারের ১০ লাখ ডোজ টিকা দেশে এলেও সেগুলো দেওয়া নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। টিকার ঘাটতি পূরণে ইতিপূর্বে নানা দেশে যোগাযোগ করা হয়। এতে রাশিয়া বাংলাদেশকে টিকা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। তবে কারিগরি ও কূটনৈতিক জটিলতার কারণে এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে সেই টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা। এক্ষেত্রে টিকার নিশ্চয়তা দিয়ে এগিয়ে এসে ভরসা দিয়েছে চীন। সব মিলিয়ে টিকা সংগ্রহ, বণ্টন এবং প্রদান নিয়ে জটিল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, চলমান মহামারী পরিস্থিতিতে চুক্তি টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করে না, যতক্ষণ পর্যন্ত দেশের মাটিতে টিকা না আসছে ততক্ষণ চুক্তি মুল্যহীন।

দেশে গণটিকাদান কার্যক্রম শুরুর প্রথম থেকেই স্বাস্থ্য খাতের জটিলতা চরমে উঠেছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারাবিশ্বে টিকার বিয়ষটি কূটনৈতিকভাবে দেখা হলেও বাংলাদেশ তা আমলে নিতে যথেষ্ট সময় লেগেছে। বিশেষ করে কূটনৈতিক যোগাযোগে বিলম্ব হওয়ায় টিকা পেতে হয়েছে নানা ভোগান্তি। প্রথম দেশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ টিকা কেনার যে চুক্তি করেছিল, সে অনুযায়ী তারা টিকা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি ৬ মাস ধরে ভারত চুক্তির টিকা না দিলেও বাংলাদেশের পক্ষে তা আদায় করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে টিকা কেনার চুক্তির প্রাথমিক আলোচনা হলেও তা বেশিদূর এগোয়নি। তার পর নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে চীনের সঙ্গে টিকা কেনার চুক্তি করে বাংলাদেশ। পাশপাশি টিকা বিতরণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে অল্প পরিমাণ ডোজের ব্যবস্থা হয়।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, গত জানুয়ারি থেকে দেশে কেনা ও উপহার হিসেবে পাওয়া টিকা এসেছে এবং আসছে; কিন্তু টিকাদান পরিকল্পনায় যথেষ্ট দুর্বলতা রয়েছে। টিকাদানের ক্ষেত্রে নিবন্ধন জটিলতা, কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় শুরু থেকেই অসঙ্গতি দেখা গেছে। গত জুলাই মাসে দেশে গণটিকা কার্যক্রমের ঘোষণা দিয়ে সেটি বাস্তবায়নে খনে খনে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হয়েছে। গণটিকা কার্যক্রমে সারাদেশে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। বর্তমানে দেশে টিকার মজুদ থাকলেও প্রদানের ক্ষেত্রে ধীরগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। সম্পৃতি সংক্রমণের হার নিম্নমুখী হওয়ায় দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনার বিষয়টিও সামনে এসেছে।

এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তনের চেষ্টা করা হচ্ছে। একই কেন্দ্রে অনেক ধরনের টিকা দেওয়ায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তাই চেষ্টা করা হচ্ছে, একটি কেন্দ্রে যেন এক ধরনের টিকাই প্রদান করা যায় তা নিশ্চিত করা। বর্তমানে দেশে অক্সফোর্ড, মডার্না, ফাইজারের টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সিনোফার্মের টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দুটোই দেওয়া হচ্ছে। ফাইজারের ১০ লাখ টিকা হাতে থাকলেও এগুলো প্রয়োগ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটি। তবে দ্রুতই ফাইজারের এসব টিকা প্রয়োগ শুরু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

টিকা নিয়ে কেন জটিলতা : সোহাগ নামে এক যুবক আমাদের সময়কে বলেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর তার টিকা নেওয়ার তারিখ ছিল; কিন্তু ওই দিন সময় না পাওয়ায় পরেরদিন নির্ধারিত কেন্দ্র বিএসএমএমইউতে গেলে তাকে টিকা না দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষ বলে, নির্ধারিত তারিখে না আসায় তাকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে না।

জার্মানির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পেয়েছেন সুপ্তিকা। তিনি ভিসা পেয়েছেন, বিমানের টিকিটও নিশ্চিত হয়েছে। এখন নিবন্ধন করে নির্ধারিত কেন্দ্র শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়েও টিকা পাচ্ছেন না। বারবার তাকে ফিরে আসতে হচ্ছে। একই অবস্থার কথা জানান প্রবাসী এসএম মুনতাসীর। গত জুলাই মাসের ২৮ তারিখ তার প্রথম ডোজ দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি এখনো পাননি কাক্সিক্ষত টিকা। এমন পরিস্থিতিতে গত ১১ সেপ্টেম্বর এসএমএস না পাওয়া এবং নির্দিষ্ট তারিখে টিকা না দেওয়ায় প্রবাসীরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিক্ষোভ করেন। পরে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে তারা বিক্ষোভ করেন শহীদ মিনারে গিয়ে।

গত ১ সেপ্টেম্বর কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফাইজারের ১০ লাখ ডোজ টিকা দেশে আসে। জানা গেছে, অসংখ্য প্রবাসী এবং বিদেশগামী শিক্ষার্থী ফাইজারের এই টিকা নেওয়ার অপেক্ষায় থাকলেও তা প্রয়োগ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, আগে দিনে এক থেকে দেড় লাখ টিকা দেওয়া হতো। গণটিকা কার্যক্রম পরিচালনার সময়ে মাত্র ৬ দিনে ৫০ লাখের বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ দিনে প্রায় ১০ লাখ মানুষ টিকা পেয়েছে। অথচ বর্তমানে দিনে টিকা দেওয়া হচ্ছে অর্ধ লাখের মতো। তবে এসব জটিলতার কারণ সম্পর্কে কোনো উত্তর দেননি তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য তথ্যানুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে এ পর্যন্ত টিকা পেতে নিবন্ধন করেছেন ৪ কোটি ৬০ লাখ ৩ হাজার ৫২২ জন। এ ছাড়া পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করেছেন ৫ লাখ ৪৫ হাজার ১৯৭ জন। এদের মধ্যে দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন ১ কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৪৬ জন। শুধু প্রথম ডোজ পেয়েছেন দুই কোটি ৯২ লাখ ২ হাজার ৭১৫ জন। দুই ডোজের কোর্স যারা সম্পন্ন করেছেন, তাদের মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পেয়েছেন ৫৩ লাখ ৮৫ হাজার ১০৭ জন, ফাইজার পেয়েছেন ৪৪ হাজার ৬১৯ জন, সিনোফার্ম পেয়েছেন ৬১ লাখ ৬৬ হাজার ৩০৬ জন এবং মডার্নার টিকা পেয়েছেন ২২ লাখ ৫৯ হাজার ১৪ জন।

যে কারণে অনিশ্চিয়তায় রাশিয়ার টিকা : সরকার রাশিয়ার কাছ থেকে টিকা কেনার যে উদ্যোগ নিয়েছিল, তাতে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। ছয় মাস ধরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে এখনো চুক্তি সই হয়নি। ফলে কবে টিকা পাওয়া যাবে, তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনও চুক্তির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি। তিনি এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

বাংলাদেশ রাশিয়ার কাছ থেকে স্পুটনিক-ভি টিকা কেনার বিষয়ে আলোচনা শুরু করে গত মার্চে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গত জুলাইয়ে টিকা কেনার চুক্তির সপ্তম খসড়া রাশিয়ার কাছে পাঠানো হয়। তবে তা সইয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনার চুক্তি সইয়ের পর রাশিয়ার গামালিয়া ন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব এপিডিমিওলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি বাংলাদেশের জন্য স্পুটনিক-ভি টিকা সরবরাহ করবে। সেই টিকা বাংলাদেশ পাবে রাশিয়ান ডাইরেক্ট ইনভেস্ট ফান্ডের মাধ্যমে। কারণ তাদের সঙ্গেই বাংলাদেশ চুক্তি করবে।

সূত্র জানায়, রাশিয়ার কাছ থেকে টিকা কিনতে দেরির বড় কারণ বাংলাদেশ তাদের কাছ থেকে কত ডোজ কিনবে, তা আগেভাগে ঠিক করতে পারেনি। শুরুতে রাশিয়ার কাছে বাংলাদেশ কয়েক কোটি টিকা কিনতে চেয়েছিল। এর পর অন্যান্য উৎস থেকেও টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এক পর্যায়ে সরকারের মধ্যে এমন ভাবনাও আসে যে, নানা উৎস থেকে এত টিকার জন্য চাহিদাপত্র দেওয়াটা ঠিক হবে না। পরে রাশিয়ার কাছে কম পরিমাণ টিকা কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ নিয়ে একপর্যায়ে বিরক্ত রাশিয়া বাংলাদেশকে জানায়, কত টিকা লাগবে, সেটি আগে ঠিক করতে হবে। তা না হলে যে চাহিদাপত্র দেওয়া হবে, তার পুরোটাই নিতে হবে। ফলে রাশিয়ার কাছ থেকে টিকা কিনতে ধীরে চলো নীতিতে আগায় বাংলাদেশ।

তবে সরকারি সূত্র বলছে, বাংলাদেশ দ্রুততম সময়ে রাশিয়ার কাছ থেকে টিকা কিনতে চায়। চুক্তির খসড়া ইতোমধ্যে সই করে রাশিয়া পাঠিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। চুক্তি হলে শুরুতে কোটি ডোজ কেনা হবে। তবে চুক্তিতে বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ, যেটাকে কঠিন হিসেবে মনে করছে মস্কো। সূত্র জানায়, রাশিয়ার তৈরি স্পুটনিক-ভি টিকা অন্য টিকার মতো নয়। এর প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দুই ধরনের। তাই শুরু থেকেই সরকার একই চালানে প্রথম ডোজের সঙ্গে দ্বিতীয় ডোজও চাইছিল। তবে বাংলাদেশের দেওয়া দ্বিতীয় ডোজ সরবরাহের নিশ্চয়তার শর্তকে কঠিন মনে করছে মস্কো। তারা জানিয়েছে, রাশিয়া বাংলাদেশকে টিকা দেবে; কিন্তু সেই টিকা বাংলাদেশ প্রথম ডোজ হিসেবে ব্যবহার করবে নাকি দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে ব্যবহার করবে, সেটি বাংলাদেশের বিষয়।

সরকারি তথ্য বলছে, দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। সে হিসাবে ২৬ কোটি ডোজ টিকার দরকার। সরকার ইতোমধ্যে ২৬ কোটি ডোজ টিকার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করেছে। এর মধ্যে চীনের সঙ্গে ১৭ কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি হয়েছে। কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া যাবে আরও ৬ কোটি ডোজ। এ ছাড়া ভারতের সেরাম ইনিস্টিটিউটের কাছ থেকে ৩ কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি রয়েছে।

সামগ্রীক বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘প্রত্যেক মাসের প্রতি সপ্তাহেই ৫০ লাখ করে টিকা আসবে আগামী নভেম্বর পর্যন্ত। এর সঙ্গে কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় যেটা আসবে, সেটাও যোগ হবে। কোভ্যাক্সে সাড়ে ১০ কোটি টিকার অর্ডার আমরা দিয়েছি। অক্টোবর-নভেম্বর-ডিসেম্বরে যে শিডিউল তারা দিয়েছে, সেই অনুযায়ী এলে টিকা দেওয়ার হার আরও বাড়বে। টিকার কার্যক্রম এ বছরসহ আগামী বছরের কয়েক মাস চলমান থাকবে।’

দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘এতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, লকডাউন এবং টিকার অনেক ভূমিকা রয়েছে। সবকিছু মিলেই সংক্রমণের হার কমে এসেছে। তবে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবারও বন্ধ করে দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আমরাও সেই ধরনের পরামর্শ দেব।’ ১৮ বছরের কম বয়সীদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে জাহিদ মালেক বলেন, এখনো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে অনুমতি আসেনি। ডব্লিউএইচও অনুমতি দিলে শিশুদের টিকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877