শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪, ০৫:৩৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার ২০২১অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত সত্যি কি সন্তান আসছে ভিকি-ক্যাটের ঘরে বাজেটের আগে আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাচ্ছে না বাংলাদেশ নিউমার্কেটের হোটেলে বসে টানা ১২ দিন ধরে আনোয়ারুলকে হত্যার ছক কষে খুনিরা কসাই দিয়ে মাংস টুকরো টুকরো করা হয় এমপি আনারের আদালতে নেওয়া হয়েছে কসাই জিহাদকে নিম্নচাপে রূপ নিলো লঘুচাপ, সমুদ্রবন্দরে সতর্ক সংকেত আমেরিকানদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার অনুমতি দিলেন পুতিন ইসরাইলি ও হামাস কর্মকর্তাদের গ্রেফতারের বিষয়ে আইসিজির রায় প্রত্যাখান বাইডেনের ইসরাইলকে গাজা যুদ্ধ বন্ধ করতে আজ নির্দেশ দেবে আইসিজে!
মহেশখালী-মাতারবাড়ী বদলে যাচ্ছে

মহেশখালী-মাতারবাড়ী বদলে যাচ্ছে

স্বদেশ ডেস্ক:

সমুদ্র উপকূলীয় কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী-মাতারবাড়ী বদলে যাচ্ছে। এ এলাকা ঘিরে সরকার প্রায় ৫৬ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল, তেল রিজার্ভ ট্যাংক, পণ্য খালাসের জেটিসহ গভীর সমুদ্রবন্দর, সোলার পাওয়ার প্ল্যান্টসহ প্রায় ৬৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে ৩১টি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের। ১২শ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ২০২৪ সালে উৎপাদনে চলে আসবে।

এ অঞ্চলের মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান মাধ্যম মাছ ধরা, শুঁটকি উৎপাদন, পান চাষ, লবণ উৎপাদন। কৃষকের সেই লবণের জমিতে সরকার গড়ে তুলছে বিদ্যুৎ-জ্বালানির বিশাল হাব। সমুদ্র যোগাযোগকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলে চলছে সরকারের মহাকর্মযজ্ঞ। ২০১২ সাল থেকে শুরু হওয়া সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- এখন দৃশ্যমান।

মহেশখালী-মাতারবাড়ীতে গড়ে উঠছে নতুন শহর। সরকারের এই উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে এলাকার মানুষের জীবনযাপনে আসবে ইতিবাচক পরিবর্তন। সরকারের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ এলাকা হবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির হাব। এ হাবকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে নতুন শহর। যা এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন ঘটাবে। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সুরক্ষা বিবেচনায় এখানে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে একটি দ্বীপ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪ মিটার উচ্চতায় এ দ্বীপটির আয়তন প্রায় ১৬শ একর। পরিকল্পিত এ হাবের মধ্যে থাকবে ১৪ কিলোমিটার সমুদ্র চ্যানেল।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মহেশখালী-মাতারবাড়ীকে কেন্দ্র করে নির্মিত হচ্ছে ২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র, ৫টি এলএনজি ও এলপিজি টার্মিনাল, তেল সংরক্ষণ ও শোধনাগার, সাগর থেকে জ্বালানি তেল খালাসে স্থাপন করা হচ্ছে ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইন। তবে সরকারের সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞকে কেন্দ্র করে ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন হচ্ছে দ্বীপ অঞ্চলের রাস্তাঘাট, মানুষের জীবনধারা। পুরো মহেশখালীতেই লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। এ ছাড়া এ প্রকল্প ঘিরে মাতারবাড়ীতে হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর। হাব ঘিরে সড়ক ও রেলপথ তৈরিরও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় নির্মাণ করছে গভীর সমুদ্রবন্দর। বঙ্গোপসাগরের উপকূলে চারটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত এ উপজেলার দুটি দ্বীপ মাতারবাড়ী ও ধলঘাটার বেশিরভাগ জায়গা নিয়ে এ প্রকল্পের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, মহেশখালী-মাতারবাড়ী এলাকায় যে উন্নয়ন হচ্ছে সেটা বাস্তবায়ন হলে পুরো দেশের অর্থনীতিতে বিরাট পরিবর্তন আসবে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন এ অঞ্চলে জ্বালানির হাব বাস্তবায়নের পাশাপাশি মহেশখালী-মাতারবাড়ীকে মডেল সিটি হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ধলঘাটের স্থলভাগে দুটি এলএনজি টার্মিনাল হবে। পাশাপাশি আরও একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল করবে সরকার। তিনটি টার্মিনালের সম্মিলিত ক্ষমতা হবে দৈনিক ৩৫০ কোটি ঘনফুট।

গত ৬ সেপ্টেম্বর মাতারবাড়ী মহেশখালী সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সাগরের কোল ঘেঁষে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল অবকাঠামো। ঘাট থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রে যেতে প্রয়োজনীয় রাস্তা ও সেতু নির্মাণ এবং উন্নয়ন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১২শ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র পাঁচ হাজার বিঘা জমিতে প্রকল্পের কাজ শুরু হয় বেশ কয়েক বছর আগে। বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে জাপানি কোম্পানি। পরিকল্পনা রয়েছে প্রথম ধাপে দুটি ইউনিট চালুর। যার প্রতিটি থেকে আসবে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এ রকম আরও দুটি ইউনিট করতে চায় কোল পাওয়ার কোম্পানি। এখান থেকে আসবে আরও দুই হাজার চারশ মেগাওয়াট। দেশি-বিদেশি সাড়ে সাত হাজার শ্রমিক-প্রকৌশলী এখানে কাজ করছেন। এরই মধ্যে প্রথম ইউনিটের ৫৫ ভাগের বেশি কাজ শেষ বলে জানিয়েছেন মাতাবাড়ী তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন। প্রকল্প এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ৯৫ দশমিক ৮২ শতাংশ মানুষকে ইতোমধ্যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি অন্তত দুই বছর জাপানের দক্ষ কর্মীরা পরিচালনায় সহায়তা করবে। দুটি ইউনিটের কাজ সম্পন্ন হবে যথাক্রমে ২০২৪ সালের জানুয়ারি ও জুলাইয়ে মধ্যে।

সমুদ্রপথে কয়লা আমদানির সুবিধার্থে ১৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য, ২৫০ মিটার প্রস্থ এবং ১৮ দশমিক ৫ মিটার গভীরতার চ্যানেল খননের কাজ প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে। দুটি জেটি তৈরি করা হয়েছে। এর একটিতে বড় জাহাজে করে কয়লা, অন্যটিতে খালাস হবে প্ল্যান্টের তেল।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, কোল পাওয়ার কোম্পানি আর জেটির চ্যানেল নির্মাণে কাজ করছেন দেশি-বিদেশি ৭ হাজার লোক। এর মধ্যে ৫৯০ জন বিদেশি এবং ২ হাজারের মতো স্থানীয় বাসিন্দা রয়েছেন। মহেশখালী-মাতারবাড়ী জ্বালানি হাবে বাস্তবায়য়িত হচ্ছে একাধিক তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) টার্মিনাল, তরলিকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) টার্মিনাল, তেল সংরক্ষণাগার, তেল শোধনাগার। এ ছাড়া এখান থেকে দেশের সব আমদানি করা তেল পাইপলাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় পাঠানোর জন্য স্থাপন করা হচ্ছে ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইন। ইতোমধ্যে সাগরে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিদিন গড়ে ৮০০ এমএমসিএফডি এলএনজি সরবরাহ হচ্ছে জাতীয় সঞ্চালন পাইপলাইনে। এছাড়া আরও তিনটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ধলঘাটের স্থলভাগে দুটি আর সাগরে আরেকটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল করবে সরকার। তিনটি টার্মিনালের সম্মিলিত ক্ষমতা হবে দৈনিক ৩৫০ কোটি ঘনফুট। দেশে গ্যাসের চাহিদার বড় অংশই এখানকার এলএনজি দিয়ে পূরণ হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) মালিকানায় মাতারবাড়ীর ধলঘাটে একটি এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

মহেশখালীর কালারমারছড়াতে তেল মজুদের বিশাল অবকাঠামো গড়ে তুলছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। গভীর সমুদ্র থেকে নির্মাণ করা পাইপলাইনের মাধ্যমে সরাসরি মাদার ভেসেল থেকে এ তেল সংরক্ষণাগারে জ্বালানি তেল খালাস করা হবে সিঙ্গল পয়েন্ট মুরিংয়ের (এসপিএম) মাধ্যমে।

এদিকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে মাতারবাড়ীতে নির্মিত হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দর। গভীর সমুদ্রবন্দরে ৩০০ ও ৪৬০ মিটার দীর্ঘ দুটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এতে জাহাজ থেকে সরাসরি পণ্য ওঠানামা সহজ হবে। প্রথম ধাপের কাজ শেষ হতে সময় লাগবে ২০২৬ সাল। দ্বিতীয় ধাপে নির্মিত হবে তিনটি কনটেইনার টার্মিনাল। এভাবে পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে টার্মিনাল। গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে খরচ পড়বে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। বন্দরটির দায়িত্বে থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। গভীর সমুদ্রবন্দরের পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য রেল ও সড়কপথ নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে সরকার। নির্মিত হবে তিনটি ‘ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনাল’। এ অঞ্চলে হবে তিনটি অর্থনৈতিক জোন (ইজেড)। এ ছাড়া সোনাদিয়া দ্বীপে একটি ইকোপার্ক স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877