স্বদেশ ডেস্ক:
আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে অনেক নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। গতকাল শনিবার সকালে কারাগারে গিয়ে মেয়ের সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ অভিযোগ করেন। তার দাবি, সব কিছু হয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে সুনাম দেবনাথের কারণে।
বরগুনার বহুল আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন নিহতের স্ত্রী মিন্নি। তিনি ওই মামলার প্রধান সাক্ষী ছিলেন। মোজাম্মেল হোসেন বলেন, কারাগারে গিয়েছিলাম। মেয়ের দিকে তাকাতে পারছি না। তাকে অনেক নির্যাতন করা হয়েছে। আমি আমার মেয়ের প্রতি অন্যায়ের সুবিচার চাই।
মোজাম্মেল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, মেয়ের কিছু হলে তিনি আত্মাহুতি দেবেন। তিনি অভিযোগ করেন, মিন্নিকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে এবং জোর করে জবানবন্দি আদায় করা হয়েছে। মিন্নি নির্দোষ, রিফাত হত্যায় নোংরা রাজনীতি শুরু হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, প্রশাসন সঠিক তদন্ত করলে রিফাত হত্যার মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
তিনি আরও বলেন, সারাদেশের মানুষ দেখেছে আমার মেয়ে কীভাবে তার স্বামীকে রক্ষার জন্য সন্ত্রাসীদের সঙ্গে লড়াই করেছে। একটি প্রভাবশালী মহল আমার মেয়েকে ফাঁসিয়ে খুনিদের আড়াল করতে চাইছে। এ প্রসঙ্গে বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে। এখানে জোর-জবরদস্তির কিছু নেই। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মিন্নি।
এ ছাড়াও মামলায় আরও কয়েকজন সন্দেহভাজন পুলিশের নজরে রয়েছে। গত শুক্রবার বিকালে রিমান্ডে থাকা মিন্নিকে বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে মিন্নি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এর পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মোজাম্মেল হোসেন বলেন, প্রভাবশালীরা মিন্নির পক্ষে বরগুনার কোনো আইনজীবীকে দাঁড়াতে দেননি। ঢাকা থেকে আইনজীবীরা আসবে শুনে পুলিশ নির্যাতন করে তড়িঘড়ি আমার মেয়েকে দিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করিয়েছে। হত্যাকা-ের মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আমার মেয়েকে গ্রেপ্তার করে মামলায় জড়ানো হয়েছে।
দায় স্বীকার করে জবানবন্দি ফরাজীর রিফাত শরীফ হত্যা মামলার দুই নম্বর আসামি রিফাত ফরাজী গতকাল বিকালে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন, গতকাল বিকাল ৪টার দিকে রিফাত ফরাজীকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে হাজির করা হয়।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে জবানবন্দি নেওয়া শেষ হয়েছে। রিফাত ফরাজীকে তিন দফায় ২১ দিনের রিমান্ডে নিয়েছিল পুলিশ। মিন্নির সহায়তায় দেড়শ আইনজীবী মিন্নিকে আইনি সহায়তা দিতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তাকে আইনি সহায়তা দিতে এসব সংগঠনের দেড়শ আইনজীবী যাবেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), নিজেরা করি, এএলআরডিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে একশ আইনজীবী বরগুনায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া মিন্নিকে আইনি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ফেনীর বহুল আলোচিত সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ। তিনিসহ ঢাকা আইনজীবী সমিতির ৪০ আইনজীবী ঢাকা থেকে বরগুনা আদালতে শুনানির জন্য যাবেন বলে জানা গেছে।