সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৮:৩৯ পূর্বাহ্ন

ক্ষুধার্ত আফগানদের পরিণতি কী

ক্ষুধার্ত আফগানদের পরিণতি কী

সাইদুল ইসলাম খন্দকার :

তালেবানরা কাবুল দখলের পর যে অরাজকতা তৈরি হয়েছে, তা আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি। অনেকে পালিয়ে যাচ্ছে, তারা রিফিউজি হচ্ছে পাকিস্তান, তাজিকিস্তানসহ পাশর্^বর্তী দেশগুলোর। সেখানে যেমন খাদ্য, পানির সংকটে বিপর্যয় নেমে এসেছেÑ এসেছে দেশের ভেতরেও। যার প্রমাণ মেলে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম তালেবানদের দখলদারিত্বের ক্ষেত্রে জরুরি সাহায্যের আহ্বান জানিয়েছে এবং তিন বছরের মধ্যে দ্বিতীয় ভয়াবহ মানবিক সংকটের পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে বিবৃতি দিয়েছে। তা হলে এ বিবৃতি কেন? জাতিসংঘের সংস্থাগুলো জরুরি সহায়তা তহবিল ছাড়াই সেপ্টেম্বরের শুরুতে আফগানিস্তানে খাদ্য ঘাটতির বিষয়ে সতর্ক করেছিল, কারণ এটি কাবুল বিমানবন্দরে নিষেধাজ্ঞার কারণে অস্ত্রোপচার সরঞ্জাম এবং গুরুতর অপুষ্টি কিটসহ প্রাথমিক চিকিৎসা সরবরাহ আটকে ছিল। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গত সোমবার বলেছে, বিমানবন্দরটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়ার ফলে গুরুত্বপূর্ণ ডেলিভারি বন্ধ রয়েছে।

একই সঙ্গে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) বলেছে, তারা এই মুহূর্তে চারটি ভিন্ন রুট সরবরাহের মাধ্যমে খাবার পাচ্ছে, কিন্তু আগামী মাসের মধ্যে খাবার শেষ হয়ে যেতে পারে। আফগানিস্তানে ডব্লিউএফপির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর অ্যান্ড্রু প্যাটারসন বলেছেন, তারা উজবেকিস্তানসহ মানবিক ক্রসিংয়ের মাধ্যমে খাদ্য পরিবহন করছিল, যদিও ৫০ শতাংশ সরবরাহ এসেছিল, সেই সঙ্গে পাকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানের মাধ্যমে। প্যাটারসন আরও বলেছেন, খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কথাÑ শীত আসছে, অনেক আফগান রাস্তা বরফে আচ্ছাদিত হয়ে যাবে। আমাদের খাদ্যগুদামে সরবরাহ বাড়াতে হবে। আমরা এখন দেশে ২০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যের মধ্যে ৭ হাজার মেট্রিক টন পেয়েছি। কিন্তু ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত আফগান জনগণের আরও ৫৪ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য প্রয়োজন। সেপ্টেম্বরের মধ্যে খাবার শেষ হওয়ার আগে খাদ্য মজুদ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। কিন্তু সেগুলো কীভাবে সম্ভব তা কেউ জানে না। কিন্তু ক্ষুধার তাপ বাড়ছেই। তাতে বরফ গলে যায়। কিন্তু ক্ষুধার্ত আফগানদের পরিণতি কী হবে তা কেউ জানে না। আফগানদের ভবিষ্যৎ কোনদিকে যাচ্ছে তা কেউ জানে না। তবে এটা অনুমান করা যায়, বড় ধরনের অভাব তাদের মোকাবিলা করতে হবে। তার মানে এখনকার যে অভাব সেটা অভাব নয়। এর চেয়ে ভয়ঙ্কর দিন তা হলে কী হতে পারে। কোন সময় অপেক্ষা করছে আফগানদের জন্য? তাদের ক্ষুধার উত্তাপে শীতের বরফ গলে যাবে হয়তো, তার পরও কি কারও মনে মানবিকতার শেষ চিৎকার পৌঁছবে না?

এমনিতেই ২০২১ সালের শুরুতে, দেশের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ সংকটের সম্মুখীন এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের অর্ধেক ছিল অপুষ্টিজনিত। ডব্লিউএফপি অনুসারে, এই বছর আফগানিস্তানের প্রায় ৪০ শতাংশ ফসল খরাতে নষ্ট হয়ে গেছে এবং কোভিডে আর্থ-সামাজিক প্রভাব অনেক পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যকে নাগালের বাইরে রেখেছে। গমের দাম পাঁচ বছরের গড়ের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি। তার বিপরীতে জাতিসংঘের মানবিক প্রতিক্রিয়ায় পরিকল্পনা শুধু ৩৮.৭ শতাংশ তহবিল। ৮০০ মিলিয়ন ডলারের ঘাটতি রেখে, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস আফগান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই অঞ্চলকে ভরসা দিতে তিনি তাদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়’ যুক্তরাষ্ট্রকে আরও একবার একহাত দেখানোর জন্য চীন যেভাবে আফগানিস্তানের ওপর তাদের প্রভাব বিস্তার করছে সেটাও চোখে লাগার মতো। কারণ একটা কমিউনিস্ট রাষ্ট্র শুধু মুনাফার লোভে মৌলবাদী প্রতিক্রিয়াশীলদের সঙ্গে এক টেবিলে বসছে। আবার যুক্তরাষ্ট্রের চলে যাওয়া আর আফগানদের জন্য মায়াকান্না দেখে কারও কি মনে হয় যে, আফগানকে একটা অনিরাপদ জায়গায় রেখে অযথা শোরগোল করছে? সবকিছুর মধ্যে যে সত্যটি একদম আলাদা তা হলো আফগানিস্তান একটা দীর্ঘস্থায়ী খাদ্য সংকট এবং ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের দিকে এগোচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো তা হলে উন্নত বিশ্বগুলো কি এসব মধ্যাঞ্চল এবং এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর দুর্ভিক্ষের মাধ্যমেই তাদের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ফায়দা লুটে তাদের দায়িত্ব শেষ করবে?

নাকি আফগানদের দুর্ভিক্ষের মধ্যে ফেলে আরেকটি নারকীয় দৃষ্টান্ত তৈরি করার প্রস্তুতি চলছে। যার মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হবে, আসলেই উন্নত বিশ্ব বলে যাকে সবাই জানে তারা মনুষ্যত্বের বিকাশে কখনই সচল হবে না।

সাইদুল ইসলাম খন্দকার : প্রাবন্ধিক

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877