সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ০৭:৪৩ অপরাহ্ন

মিল্কি হত্যাকাণ্ড : আট বছরে সাক্ষ্যগ্রহণ মাত্র ৩ জনের

স্বদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১

স্বদেশ ডেস্ক:

ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কি হত্যা মামলায় আট বছরে বিচারে অগ্রগতি মাত্র ৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ। ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতের ওই হত্যাকাণ্ডের এ মামলায় ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন আদালত।

ঢাকার পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের তৎকালীন বিচারক এস মোহাম্মাদ আলী এ চার্জগঠনের আদেশ দেন। তিনি ২০১৯ সালের ২০ মার্চ প্রায় ৪ মাস ১২ দিন পর প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন। পরবর্তীতে মামলায় গত প্রায় ৩ বছরে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে মাত্র ৩ সাক্ষী উপস্থাপন করতে পেরেছে।

এদিকে মামলাটিতে গ্রেপ্তার ও আত্মসমর্পণ করে কারাগারে যাওয়া ১৭ আসামির সকলেই জামিন পেয়েছেন। আবার জামিনপ্রাপ্তদের মধ্যে মিল্কির ড্রাইভার মারুফ রেজা সাগরের স্ত্রী ফাহিমা ইসলাম লোপাসহ ৩ জন পলাতক।

অন্যদিকে মামলার শুরু থেকেই পলাতক এ মামলার অন্যতম প্রধান আসামি ঢাকা মহানগর যুবলীগের (উত্তর) সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আছেন বলে জানা গেছে। ২০১৫ সালের ১৩ মে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা স্টেট আওয়ামী যুবলীগের কমিটি ঘোষণার অনুষ্ঠানে এবং ৭ জুন ওয়াশিংটনে আওয়ামী যুবলীগের একটি অনুষ্ঠানে আয়োজকদের সঙ্গেই মঞ্চে দেখা যায় চঞ্চলকে।

এদিকে ২০১৫ সালে চার্জশিট দাখিল হওয়ার ৩ বছর পর মামলাটিতে শুধু চার্জগঠন সাধারণ আদালতে মামলাটির বিচার চলার কারণে হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। কারণ সাধারণ আদালতে মামলায় ২ থেকে ৪ মাস পর পর তারিখ ধার্য হয়। ফলে এ আদালতে মামলার অবশিষ্ট বিচার অনুষ্ঠিত হলে যুগও পার হয়ে যায়, যদি না রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলার বিচারে বিশেষভাবে নজর দেওয়া না হয়। তাই মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো উচিত বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করন।

এ সম্পর্কে ওই আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর এএফএম রেজাউর রহমান রুমেল বলেন, সাধারণ আদালতে মামলা বেশি থাকে। সে কারণে মামলার দ্রুত তারিখ ফেলা সম্ভব হয় না। তার পরও আমাদের চেষ্টা রয়েছে দ্রুত নিষ্পত্তি করার। মামলাটি গুছিয়ে এনে আমরা ৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছি। আশা করছি বাকি সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণও দ্রুত শেষ করতে পারব, যদি পুলিশের সহযোগিতা পাই।

২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশানের শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করা হয় মিল্কিকে। ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল মামলাাটিতে ১১ জনকে অভিযুক্ত করে র‌্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার কাজেমুর রশিদ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ওই চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি দাখিল করা হলে আদালত নারাজি গ্রহণ করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ^াস অধিকতর তদন্তে আরও ৭ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

মামলার আসামিরা হলেন- মিল্কির ড্রাইভার মারুফ রেজা সাগরের স্ত্রী ফাহিমা ইসলাম লোপা, সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল, মো. আমিনুল ইসলাম ওরফে হাবিব, মো. জাহাঙ্গীর মন্ডল, মো. সোহেল মাহমুদ ওরফে সোহেল ভূঁইয়া, মো. চুন্নু মিয়া, মো. আরিফ ওরফে আরিফ হোসেন, মো. সাহিদুল ইসলাম, মো. ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ, রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, মো. শরীফ উদ্দিন চৌধুরী ওরফে পাপ্পু, তুহিন রহমান ফাহিম, সৈয়দ মুজতবা আলী রুমী, মোহাম্মদ রাশেদ মাহমুদ ওরফে আলী হোসেন রাশেদ ওরফে মাহমুদ, সাইদুল ইসলাম ওরফে নুরুজ্জামান, মো. সুজন হাওলাদার, ডা. দেওয়ান মো. ফরিউদ্দৌলা ওরফে পাপ্পু ও মো. মামুন উর রশীদ।

২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশানের শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে গুলিতে নিহত হন মিল্কি। ওই শপার্স ওয়ার্ল্ডের সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা চিত্রে দেখা যায়, ওই রাতে শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে প্রাইভেটকার থেকে মিল্কি নামার পর সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি ও টুপি পরা এক যুবক বাম কানে মোবাইলে কথা বলতে বলতে মিল্কির সামনে এসে ডান হাতে ছোট আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি ছুড়ছে। গুলিবিদ্ধ মিল্কি বাম দিকে হেলে মাটিতে পড়ে হামাগুঁড়ি দিতে থাকেন। এ সময় ওই যুবক মিল্কিকে লক্ষ্য করে সাত-আট রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এর পর পেছন থেকে এক যুবক মোটরসাইকেল চালিয়ে এলে গুলিবর্ষণকারী যুবক ওই মোটরসাইকেলের পেছনে বসিয়ে চলে যায়। সাদা পাঞ্জাবি পরা যে যুবকটিকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়, সে ছিল তারেক ওরফে কিলার তারেক এবং তারেককে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যাওয়া যুবকের নাম সোহেল মাহমুদ।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করে গুলশান থানায় মামলা করেন মিল্কির ভাই মেজর রাশেদুল হক খান। আর হত্যাকাণ্ডের পর যুবলীগের (দক্ষিণ) যুগ্ম সম্পাদক এসএম জাহিদ সিদ্দিক তারেক ও চঞ্চলকে আওয়ামী যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর তারেককে উত্তরার একটি হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরের দিন ৩০ জুলাই র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় তারেক।

হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার বিষয়ে মামলার চার্জশিটে বলা হয়, রিয়াজুল হক খান মিল্কির দ্রুত রাজনৈতিক উত্থান এবং মতিঝিল এজিবি কলোনি এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। ওই কারণে আসামি তারেক ওরফে কিলার তারেকের (ক্রয়ফায়ারে নিহত) এককভাবে বাংলাদেশ রেলওয়ে, পূর্ব মতিঝিল ডিভিশন, ডিপিডিসি, বিএডিসি, খাদ্য, সিএমএমইউ, ক্রীড়া পরিষদ, কৃষিসহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই মিল্কিকে কিলার তারেক একমাত্র পথের কাঁটা মনে করে একাধিকবার হত্যার উদ্যোগ গ্রহণ করে; কিন্তু প্রতিবারই তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় মতিঝিল এলাকার বাইরে মিল্কিকে হত্যার পরিকল্পনা করে। মিল্কির অবস্থান জানার জন্য কিলার তারেক মিল্কির ড্রাইভার সাগরের স্ত্রী আসামি লোপার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে। লোপর মাধ্যমে মিল্কির অবস্থান জেনেই হত্যা করা হয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো সংবাদ