স্বদেশ ডেস্ক:
দেশের চলমান পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর কোনো শিক্ষার্থী করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হলে তার জন্য নেই সুচিকিৎসার ব্যবস্থা। যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে স্কুল খোলার পর সংক্রমণের হার বাড়ায় চিন্তিত দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এ সময়ে শিশু-কিশোররা করোনা আক্রান্ত হলে এবং তাদের অবস্থার অবনতি হলে পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে না। এমনকি রাজধানীতে হাতেগোনা কিছু থাকলেও দেশের অন্য কোথাও নেই পেডিয়াট্রিক আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) সেবা, যেখানে শিশুদের উন্নত চিকিৎসায় স্থানান্তর করা যাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের করোনা চিকিৎসায় তাদের অভিজ্ঞতা শূন্যের কোটায়। শিশুরা আক্রান্ত হলে করণীয় বিষয়ে নেই ন্যূনতম প্রস্তুতিও। গত এক থেকে দেড় মাসে বিভিন্ন দেশ করোনা সংক্রমণের চতুর্থ ঢেউয়ের মধ্যে পড়েছে। অনেক দেশ পরবর্তী ঢেউ মোকাবিলায় সমন্বয় সভা করে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো তেমন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। করোনার প্রথম ঢেউয়ে শিশুরা সংক্রমিত না হলেও বর্তমানে ডেল্টা ও ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্টের কারণে বিভিন্ন দেশে ছোট শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার মাত্র এক মাসের মাথায় আড়াই লাখ শিশু করোনা সংক্রমণের শিকার হয়েছে।
কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া আমাদের সময়কে বলেন, শিশুদের কোভিড চিকিৎসা সংক্রান্ত ‘ট্রিটমেন্ট প্রটোকল’ প্রণয়ন করা আছে। তবে শিশুদের আইসিইউর সংকট রয়েছে। রাজধানীতে শিশুদের জন্য হাতেগোনা কয়েকটি আইসিইউ থাকলেও ঢাকার বাইরে কোথাও এ সুবিধা নেই। ফলে শিশুরা আক্রান্ত হলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। একটা শিশুও যদি আক্রান্ত হয়ে ওই পর্যায়ে যায় তা হলে তার চিকিৎসার জন্য প্রস্তুতি থাকতে হবে। তিনি এ ক্ষেত্রে পরবর্তী ঢেউ মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন পর্যায়ের হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক আইসিইউ স্থাপনের পরামর্শ দেন। এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, সংক্রমণ বাড়লে আবারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সুপারিশ করা হবে। গতকাল শুক্রবার ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল এবং ঢাকা শিশু হাসপাতালে শিশুদের উন্নত চিকিৎসার জন্য পেডিয়াট্রিক সিসিইউ (শিশুদের করোনারি কেয়ার ইউনিট) রয়েছে। অর্থাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের জন্য উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া দু-একটি বেসরকারি হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক আইসিইউ থাকলেও সেগুলো স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে এনআইসিইউ বা নবজাতকদের আইসিইউ সেবা রয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আহমেদ পারভেজ জাবীন বলেন, সবকিছু খুলে দেওয়া ও নিয়ন্ত্রণহীন চলাফেরার কারণে আরেকটা বড় ঢেউয়ের আশঙ্কা থেকেই যায়। কিন্তু এতদিনেও আমরা বড় ঢেউ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে পারিনি। এখনো অনেক হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা যদি আক্রান্ত হয় তখন তাদের কোন প্রটোকলে চিকিৎসা দেওয়া হবে, তা দেখা দরকার। ডেল্টা ও ল্যাম্বডা ভেরিয়েন্টের সংক্রমণের হার আগের উহান ভেরিয়েন্টের চেয়ে অনেক বেশি। তাই স্কুল-কলেজে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। একই সঙ্গে পর্যটন, হোটেল-মোটেলে স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মানতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে হবে।