মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল থিন অং হ্লাইং ও অন্য তিন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির পাশাপাশি এবার যুক্তরাষ্ট্রসহ ১২টি দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়া ও প্রত্যাবাসনের আহ্বান জানিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর আয়োজিত ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে মন্ত্রী পর্যায়ের এ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইউক্রেন, আজারবাইজান, সাইপ্রাস, জর্ডান, জর্জিয়া ও মার্শাল দ্বীপ স্বাক্ষরিত এ বিবৃতিতে ধর্মীয় সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গার দ্রুত নিরাপদ প্রত্যাবাসনের আহ্বান জানানো হয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বৈষম্যমূলক নিপীড়নের ফলে সে দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু মুসলমান ও খ্রিস্টানদের দেশত্যাগ ও উদ্বাস্তু হওয়ায় তারা দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ অন্যায় আচরণ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
আমরা লক্ষ করছি বাংলাদেশ সরকারের, বিশেষত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাপক উদ্যোগের ফলে রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা নিয়ে বিশ্বজনমত সচল হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মতো ক্ষমতাধর দেশ সরব হয়েছে। এমনকি জাতিসংঘের রোহিঙ্গাবিষয়ক প্রতিনিধি মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত পদক্ষেপ পর্যাপ্ত নয়, তাদের উচিত হবে সেনাপ্রধানসহ বাকি তিন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের মতো উদ্যোগ গ্রহণ করা। তবে আশার কথা মিয়ানমারের অভিভাবকসুলভ শক্তিধর দেশ চীন এবার আমাদের প্রধানমন্ত্রী সফরের সময় এ বিষয়ে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক স্পষ্ট বা প্রত্যক্ষভাবে নির্দেশনামূলক। আমরা আশা করব চীন তার এ পরামর্শ কাজে পরিণত করার জন্য মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখবে।
মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির ক্ষেত্রে গনচীনের মতো প্রতিবেশী ভারতবর্ষও কার্যকর হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আঞ্চলিক রাজনীতিতে প্রভাব ধরে রাখার জন্য ভারতের দিক থেকেও এ বিষয়ে কিছু বলা ও করার দায় থাকাই স্বাভাবিক। ফলে আমরা মনে করি এটাই উপযুক্ত সময় ভারতের কাছ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার সরকারকে অর্থপূর্ণ চাপ প্রয়োগের কথা আদায় করার। চীন ও ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা উন্নত দেশসমূহ, ওআইসি ও মুসলিম দেশসমূহ এবং জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা যদি একযোগে এ চাপ তীব্রতর করে ও অব্যাহত রাখে তা হলে মিয়ানমারের প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীর পক্ষে এ বিষয়ে আর গড়িমসি করা সম্ভব হবে না।
আমরা জানি আগামী বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে মিয়ানমারে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন। এ সময়ে সরকার নতুন কোনো পদক্ষেপ নিয়ে জনমতের বিপক্ষে যেতে চাইবে না। কিন্তু দীর্ঘ দিনের সরকারি ও সামরিক বাহিনীর অপপ্রচার ও অন্যায় কর্মকা-ের ফলে সে দেশের সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ বর্মীদের মধ্যে রোহিঙ্গা, কাচিন ও আরও কয়েকটি জাতিগোষ্ঠী সম্পর্কে বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব রয়েছে। তাই আন্তর্জাতিক মহলের অব্যাহত চাপ এবং নানা রকম নিষেধাজ্ঞামূলক পদক্ষেপ ব্যতীত মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকারের ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। তবে সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের এটাই উপযুক্ত সময় বলে আমরা মনে করি।