স্বদেশ ডেস্ক: রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির যদি কিছু হয় তাহলে আত্মহত্যার করার ঘোষণা দিয়েছেন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোর। এ সময় তিনি দাবি করেন, মিন্নিকে রিমান্ডে নিয়ে জোর করে জবানবন্দি আদায় করা হলো।
আজ শনিবার সকাল ১১টায় কারাগারের মূল গেইটে মিন্নির সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘দেশবাসী শুনে রাখেন, আমার মেয়ের কিছু হলে আমি আত্মহত্যা করমু। আমার মেয়েকে চাপ দিয়ে জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। মিন্নি নির্দোষ, রিফাত হত্যার পেছনে শুরু হয়েছে নোংরা রাজনীতি। প্রশাসনের লোকেরা শোনেন, আপনারা সঠিক তদন্ত করেন তাহলে রিফাত হত্যার মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘কারাগারে গিয়েছিলাম। মেয়ের দিকে তাকাতে পারছি না। তাকে অনেক নির্যাতন করা হয়েছে। আমি আমার মেয়ের প্রতি অন্যায়ের সুবিচার চাই’
তিনি বলেন, ‘সারা দেশের মানুষ দেখেছেন আমার মেয়ে কীভাবে তার স্বামীকে রক্ষার জন্য সন্ত্রাসীদের সঙ্গে লড়াই করেছে। একটি প্রভাবশালী মহল আমার মেয়েকে ফাঁসিয়ে খুনিদের আড়াল করতে চাইছে।’
বরগুনা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মারুফ হোসেন সংবাদমাধ্যমকে জানান, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। এখানে জোর-জবরদস্তির কিছু নেই। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মিন্নি। এছাড়াও মামলায় আরও কয়েকজন সন্দেহভাজন পুলিশের নজরে রয়েছে।
এর আগে গতকাল শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টায় রিমান্ড চলাকালীন মিন্নিকে বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে হাজির করা হয়। মিন্নি সেই আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর জানিয়েছেন, ক্ষমতাসীনরা মিন্নির পক্ষে বরগুনার কোনো আইনজীবীকে দাঁড়াতে দেননি। ঢাকা থেকে আইনজীবীরা আসবে শুনে পুলিশ নির্যাতন করে তড়িঘড়ি আমার মেয়েকে দিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আমার মেয়েকে গ্রেপ্তার করে মামলায় জড়ানো হয়েছে। এখন আবার তাকে দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও রেকর্ড করানো হলো। এর মাধ্যমে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করার চেষ্টা হয়েছে। আমি আইনি লড়াই করে সত্যটা বের করব ইনশাল্লাহ।
মোজ্জাম্মেল হোসেন আরও বলেন, ‘মেয়ে আমার জীবন বাজি রেখে তার স্বামীকে রক্ষা করতে গেছে। এটাই তার অপরাধ? এসব কিছুই শম্ভু বাবুর (স্থানীয় সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু) খেলা। তার ছেলে সুনাম দেবনাথকে সেভ করার জন্য আমাদের বলি দেওয়া হচ্ছে।’
মিন্নিকে যখন আদালত থেকে বের করা হচ্ছিল, তখন তাকে পুলিশের দুজন নারী সদস্য ধরে ছিলেন। ছোট পিকআপে তোলার সময় মিন্নি কিছু একটা বলার জন্য উদ্যত হয়েছিলেন। কিন্তু পাশে থাকা নারী পুলিশ সদস্য এ সময় মিন্নির মুখ চেপে ধরেন।
গত মঙ্গলবার জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে মিন্নিকে ডেকে নিয়ে রাতে রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে মামলায় গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশ। পরদিন বুধবার পুলিশ মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। একই বিচারক শুনানি শেষে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডের ২ দিনের মাথায় পুলিশ গতকাল বিকালে মিন্নিকে আদালতে হাজির করে। পরে বিচারকের খাসকামরায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক হুমায়ুন কবির বলেছেন, ৫ দিনের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হলেও মিন্নির কাছে আমাদের যা জানার ছিল তা জানা হয়ে গেছে। আদালতে তিনি কী বলেছেন সে সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।
এর আগে মঙ্গলবার বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেছিলেন, রিফাত হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ২৬ জুন রিফাতকে প্রকাশ্য সড়কে কুপিয়ে হত্যার সময় স্বামীকে বাঁচাতে মিন্নির চেষ্টার ভিডিও ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ঘটনাটি সারা দেশে আলোচনায় উঠে আসে।
পরদিন শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে যে মামলাটি করেন, তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয় মিন্নিকেই।