স্বদেশ ডেক্স: তীব্র স্রোত, ফেরির কৃত্রিম সংকট ও পানিতে ঘাটের র্যাম তলিয়ে যাওয়ায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যানবাহন পারাপারে অচলবস্থা কাটেনি। প্রচন্ড স্রোতের বিপরীতে বেশীরভাগ ফেরিই স্বাভাবিক ভাবে চলতে পারছে না। এছাড়া ৩টি ফেরি পুরোপুরি বসিয়ে রাখা হয়েছে। যে ফেরিগুলো চলাচল করছে সেগুলোতেও প্রতি ট্রিপে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগছে। এমতাবস্থায় বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ ট্রাক চালকদেরকে বিকল্পপথে যমুনা সেতু দিয়ে চলাচলের পরামর্শ দিয়েছে।
এ সকল কারণে গত ২সপ্তাহ ধরে এ রুটে যানবাহন পারাপার চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। উভয় ঘাটে নদী পারের অপেক্ষায় আটকে পড়ছে সহস্রাধিক যানবাহন। শনিবার সকাল নাগাদ দৌলতদিয়া ঘাট থেকে গোয়ালন্দ পৌরসভা পর্যন্ত প্রায় পৌনে ৫ কিলোমিটার জুড়ে মহাসড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। যানজটে আটকে পড়ে সহস্রাধিকার যানবাহন। আটকে পড়া যাত্রী ও চালকরা সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এক সপ্তাহেও নদী পার হতে পারছে না অপচনশীল পণ্যবাহী যানবাহন। ২/৩ দিন ধরে আটকে থেকে কয়েকশ কাঁচামালবাহী ট্রাকের পণ্য পঁচতে শুরু করেছে।
শনিবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, দৌলতদিয়া ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে গোয়ালন্দ পৌরসভা পর্যন্ত প্রায় পৌনে ৫ কিলোমিটার জুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারি সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে দুই/৩ সারির সৃষ্টি হয়ে যান চলাচল একেবারে ধীরগতি হয়ে গেছে। সড়কে আটকে আছে সহস্রাধিক বিভিন্ন যানবাহন। এসময় একাধিক বাস চালক অভিযোগ করেন, তীব্র গরমের মধ্যে দীর্ঘ সময় সিরিয়ালে আটকা থেকে অনেক যাত্রীই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া অফিসের ব্যবস্থাপক আবু আব্দুল্লাহ রনি জানান, রুটে চলাচলকারী ১৫টি ফেরির মধ্যে তীব্র স্রোতের কারণে ৩টি ফেরি চলাচল করতে পারছে না। ২টি গত একসপ্তাহ ধরে মেরামতে আছে পাটুরিয়া কারখানায়। অন্য ফেরিগুলো ট্রিপে অতিরিক্ত সময় লাগায় ঘাট এলাকায় যানবাহনের সিরিয়ালের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া গেজ স্টেশন পয়েন্টে পদ্মার পানি ২৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া জেলার পাংশার সেনগ্রাম গেজ স্টেশন পয়েন্টে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ও রাজবাড়ী সদরের মহেন্দ্রপুর গেজ স্টেশন পয়েন্টে ১.৫০ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে পদ্মার পানি হুহু করতে বাড়তে থাকায় নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। তবে পদ্মার পানি বৃদ্ধির সাথে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে জেলার পাংশার হাবাসপুর, কালুখালীর রতনদিয়া, রাজবাড়ী সদরের মিজানপুর, গোদার বাজার, মৌলভী ঘাট, বরাট, গোয়ালন্দের ছোট ভাকলা, দেবগ্রাম ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের বেশ কিছু স্থানে। ভাঙ্গন কবলিত ওই সব স্থানে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
রাজবাড়ীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি দৌলতদিয়া গেজ স্টেশন পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে শনিবার বিপদসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি বৃদ্ধির সাথে জেলার অনেকস্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে এবং ভাঙ্গন রোধে জরুরী ভিত্তিতে ওই সব স্থান জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে গত কয়েকদিনে অচলবস্থা বিবেচনা করে গত শুক্রবার বিকেলে দৌলতদিয়া ঘাট পরিদর্শনে আসেন বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর মাহবুবুল ইসলাম। এ সময় তিনি জানান, বর্তমান পরিস্থিতি ও আসন্ন ঈদের কথা মাথায় রেখে নৌরুট স্বাভাবিক রাখতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এসময় গোয়ালন্দের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মামুন, বিআইডব্লিউটিসি’র দৌলতদিয়া অফিসের ম্যানেজার আবু আব্দুল্লাহ রনিসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।