বিনোদন ডেস্ক:
২০১৭ সালের ২১ আগস্ট। সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বাংলা চলচ্চিত্রের দাপুটে অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাক। আজ এই কিংবদন্তির চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। এদিনে তাকে স্মরণ করছে সিনেমাপ্রেমী দর্শক এবং ঢালিউড অঙ্গনের মানুষেরা।
এদিকে, করোনার কারণে গত বছরের মতো এবারও সীমিত পরিসরে স্মরণ অনুষ্ঠান করা হয়েছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি ও রাজ্জাকের পরিবার পারিবারিকভাবে দোয়ার আয়োজন করেছে।
জানা গেছে, বিএফডিসির আর্টিস্ট স্টাডি রুমে বাদ আসর মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠান হবে। অন্যদিকে, বরাবরের মতোই পারিবারিকভাবে দোয়ার আয়োজন থাকছে।
বাংলা চলচ্চিত্রকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া এ মানুষটির জন্ম ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গে কলকাতার টালিগঞ্জে। নায়করাজ নামে সুপরিচিত হলেও তার আসল নাম আব্দুর রাজ্জাক। কলকাতার খানপুর হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় সরস্বতী পূজা চলাকালীন মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেন। সেই নাটকের জন্য তার গেম-টিচার রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাকে বেছে নেন কেন্দ্রীয় চরিত্রে। শিশু-কিশোরদের নিয়ে লেখা ‘বিদ্রোহী’ নামের ওই নাটকে গ্রামীণ কিশোর চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়েই নায়করাজের অভিনয়ে সম্পৃক্ততা।
তিনি ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) চলে আসেন। প্রথমদিকে রাজ্জাক তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে ‘ঘরোয়া’ নামের একটি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হন। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে আব্দুল জব্বার খানের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে তিনি কাজ করার সুযোগ পান। এরপর সালাউদ্দিন প্রোডাকশন্সের ‘১৩ নাম্বার ফেকু অস্তাগর লেন’ সিনেমার ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করে সবার কাছে মেধার পরিচয় দেন রাজ্জাক। পরবর্তী সময়ে ‘কার বউ’, ‘ডাক বাবু’, ‘আখেরি স্টিশন’সহ আরও কয়েকটি সিনেমায় ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয়ও করেন গুণী এই অভিনেতা।
নায়ক হিসেবে চলচ্চিত্রে নায়করাজের যাত্রা জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ সিনেমা দিয়ে। এতে তার বিপরীতে ছিলেন কোহিনূর আক্তার সুচন্দা। আর প্রযোজক হিসেবে নায়করাজের যাত্রা হয় ‘রংবাজ’র মাধ্যমে। এটি পরিচালনা করেছিলেন জহিরুল হক। রাজ্জাকের বিপরীতে ছিলেন কবরী। ববিতার সঙ্গে জুটি বেঁধে নায়করাজ প্রথম নির্দেশনায় আসেন ‘অনন্ত প্রেম’ সিনেমা দিয়ে। এটি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে আছে। নায়ক হিসেবে এ অভিনেতার সর্বশেষ সিনেমা শফিকুর রহমান পরিচালিত ‘মালামতি’। এতে তার বিপরীতে ছিলেন নূতন।
অভিনয় ক্যারিয়ারে প্রায় ৩০০টি বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন নায়করাজ। আর পরিচালনা করেছেন প্রায় ১৬টি সিনেমা। নায়করাজ রাজ্জাক খেতাব অর্জনের পাশাপাশি একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননা পেছেন তিনি। এছাড়াও রাজ্জাক জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের শুভেচ্ছাদূত হিসেবেও কাজ করছেন।
রাজ্জাক অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর রয়েছে- ‘স্লোগান’, ‘আমার জন্মভূমি’, ‘অতিথি’, ‘কে তুমি’, ‘স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা’, ‘প্রিয়তমা’, ‘পলাতক’, ‘ঝড়ের পাখি’, ‘খেলাঘর’, ‘চোখের জলে’, ‘আলোর মিছিল’, ‘অবাক পৃথিবী’, ‘ভাইবোন’, ‘বাঁদী থেকে বেগম’, ‘সাধু শয়তান’, ‘অনেক প্রেম অনেক জ্বালা’, ‘মায়ার বাঁধন’, ‘গুণ্ডা’, ‘আগুন’, ‘মতিমহল’, ‘অমর প্রেম’, ‘যাদুর বাঁশী’, ‘অগ্নিশিখা’, ‘বন্ধু’, ‘কাপুরুষ’, ‘অশিক্ষিত’, ‘সখি তুমি কার’, ‘নাগিন’, ‘আনারকলি’, ‘লাইলী মজনু’, ‘লালু ভুলু’, ‘স্বাক্ষর’, ‘দেবর ভাবী’, ‘রাম রহিম জন’, ‘আদরের বোন’, ‘দরবার’, ‘সতীনের সংসার’ প্রভৃতি।