স্বদেশ ডেস্ক:
টানা লকডাউনের কারণে এমনিতেই কমে গেছে মানুষের আয়-উপার্জন। অনেকে কাজ হারিয়ে যাপন করছেন মানবেতর জীবন। এর মধ্যে নাগালের বাইরে চলে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। নতুন করে আবার চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় যোগ হয়েছে ক্ষুধার জ্বালা। গত বোরো মৌসুমে দেশে চালের উৎপাদন হয়েছে সন্তোষজনক। এর পরও স্বস্তি ফিরছে না বাজারে। চাল আমদানিসহ সরকারের নানা উদ্যোগও কাজে আসছে না। উল্টো সুযোগ পেলেই কেজিতে এক থেকে দুই টাকা করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কী কারণে দাম বাড়ছেÑ এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ব্যবসায়ী, আড়তদার ও মিল মালিকরা দুষছেন একে অপরকে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেড় সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। কোরবানির ঈদের আগে খুচরা বাজারে ৪৮ টাকায় বিক্রি হওয়া মোটা পাইজাম ও স্বর্ণা চাল পাওয়া গেলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি। কোথাও কোথাও বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা কেজি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে মোটা চালের সরবরাহ অনেক কম। তাই দাম বাড়তি রয়েছে। অপরদিকে চিকন চাল ও মাঝারি চালের দামও কেজিতে ২ থেকে ৪ পর্যন্ত বেড়েছে। খুচরা বাজারে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৬ থেকে ৬৮ টাকা কেজি। ভালো মানের মিনিকেট ও নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকা কেজি পর্যন্ত। আঠাশ চাল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা পর্যন্ত।
কারওয়ানবাজারের পাইকারি প্রতিষ্ঠান চাটখিল রাইস এজেন্সির ব্যবসায়ী মো. বেলাল হোসেন বলেন, এ বাজারে চালের দাম তুলনামূলক কম থাকে। তার পরও দেড় থেকে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের বস্তায় (৫০ কেজি) ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দাম বেড়েছে। পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি চালে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়ে গেছে। যার প্রভাব খুচরা বাজারেও পড়েছে। মিনিকেটের বস্তা (৫০ কেজি) এখন ২৯৫০ থেকে ৩০০০ টাকায় বিক্রি করছি। আগে যা ২৮০০ থেকে ২৮৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। আঠাশ চালের বস্তা বিক্রি করছি ২৩৫০ থেকে ২৪০০ টাকা। এ চাল এক সপ্তাহ দুই সপ্তাহ আগে অন্তত ১০০ টাকা কমে বিক্রি করেছি।
মাতুয়াইল সাদ্দাম মার্কেট বাজারের বিসমিল্লাহ জেনারেল স্টোরের ব্যবসায়ী মো. মিলন হোসেন বলেন, এলাকার বাজারে চিকন চালের দাম বস্তায় ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাইকারি বাজারে কোরবানির ঈদের আগে থেকেই দাম বাড়ার একটা প্রবণতা দেখা গেছে। সে সময় আড়ত থেকে বস্তাপ্রতি ৫০ টাকা বেশি দামে চাল কিনেছি। এখন সেখানে চিকন চালের প্রতি বস্তা ১৫০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তবে সরকারের চাল আমদানির খবরে চলতি সপ্তাহে দাম নতুন করে বাড়েনি।
মিলন আরও বলেন, পাইকারি বাজারের দাম নির্ভর করে মিলগেটের দামের ওপর। মিলগেটে দাম বাড়লে আমাদের কিছু করার থাকে না। ধানের দাম বাড়তি থাকায় মিল মালিকরা দাম বেশি রাখছেন। তার ওপর লকডাউনের সময় পরিবহন খরচ অনেক হারে বেড়েছে। খরচ বাড়াতে দামও বেড়েছে।
চাল কিনতে এসে দিনমজুর মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, নির্মাণকাজে দিনমজুরের কাজ করে সামান্য ক’টা টাকা কামাই করি। লকডাউনে কাজও কইমা গেছে। এখন বাজার কইরা খাওয়াই মুশকিল হইয়া গেছে। বাজারে ৫০ টাকার নিচে চাল নাই। কি খাইয়া বাচুম আমরা।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে চালের উৎপাদন প্রতিবছর বাড়লেও বাজারে অবৈধ মজুদকারী ও সিন্ডিকেটকারীদের দৌরাত্ম্য কমেনি। বাজারে চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। তাই দামও বাড়ছে। অন্যদিকে গরিবের মোটা চালের সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। মুনাফার লোভে গরিবের মোটা চালও মেশিনে চিকন চাল বানিয়ে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।
কনশাস কনজ্যুমারস সোসাইটির (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ আমাদের সময়কে বলেন, চালের মূল্য নির্ধারণ, আমদানি ও ভর্তুকি মূল্যে চাল বিক্রি করেও চালের সিন্ডিকেট ঠেকানো যাচ্ছে না। বাজারে সরকারের হস্তক্ষেপ খুব দুর্বল। সরকারের নানা উদ্যোগের পরও সুযোগ পেলেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। খোলাবাজারে চাল বিক্রির (ওএমএস) কার্যক্রম থাকলেও তা অত্যন্ত সীমিত। এটি সারাবছর চালু রেখে পরিধি বাড়ানো প্রয়োজন। পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতিতে গরিবের আহার নিশ্চিতে জরুরি খাদ্যপণ্যের রেশনিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাও জরুরি।